শেয়ার বিজ ডেস্ক : সুইডেনভিত্তিক ‘বাই-নাও, পে-লেটার’ (বিএনপিএল) কোম্পানি ক্লারনা গত বুধবার নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়। এ বছর যতগুলো কোম্পানি পুঁজিবাজারে এসেছে, তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় প্রাথমিক গণ বিজ্ঞপ্তি (আইপিও)। খবর: আল জাজিরা।
গত মঙ্গলবার রাতে ক্লারনা তিন কোটি ৪৩ লাখ শেয়ার প্রতিটি ৪০ ডলার দরে বিক্রি করে প্রায় এক দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার তুলেছে। প্রাথমিকভাবে কোম্পানির শেয়ারের দাম ৩৫ থেকে ৩৭ ডলার হওয়ার কথা থাকলেও বাজারে এর চেয়ে বেশি দামে অফার করা হয়। তালিকাভুক্তির প্রথম দিন শেয়ারের লেনদেন অফার দামের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি দামে শুরু হয়, ফলে কোম্পানির বাজারমূল্য দাঁড়ায় প্রায় ১৯ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার।
রেনেসাঁ ক্যাপিটালের তথ্য অনুযায়ী, এটি ২০২৫ সালের সবচেয়ে বড় আইপিও। উল্লেখ্য, এ বছর এখন পর্যন্ত ডিজাইন সফটওয়্যার কোম্পানি ফিগমা এবং সার্কেল ইন্টারনেট গ্রুপ পুঁজিবাজারে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা সামনে আরও দুটি বড় কোম্পানি স্টাবহাব এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ জেমিনির তালিকাভুক্তি নিয়ে অপেক্ষা করছেন।
২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্লারনা প্রথমে একটি পেমেন্ট কোম্পানি হিসেবে কাজ শুরু করে। ২০১৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ম্যাসি’স ডিপার্টমেন্ট স্টোরের সঙ্গে অংশীদারত্ব করে বিএনপিএল সেবা চালু করে। বর্তমানে কোম্পানিটি লাখো ব্যবসায়ী ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কাজ করছে এবং সম্প্রতি খুচরা ব্যবসার জায়ান্ট ওয়ালমার্টের সঙ্গেও পার্টনারশিপ করেছে।
ক্লারনার সিইও ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা সেবাস্টিয়ান সিয়েমিয়াতকভস্কি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভোক্তা বাজার এবং সবচেয়ে বড় ক্রেডিট কার্ড বাজার। তার মতে, এই বাজারেই কোম্পানির ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির সবচেয়ে বড় সুযোগ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ক্রেডিট কার্ড হলো উচ্চসুদের ফাঁদ, যেখানে গ্রাহকেরা সচরাচর সঠিকভাবে খরচ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। তাই ক্লারনা ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিগুলোর জায়গা দখল করতে চায়।
ক্লারনার সবচেয়ে জনপ্রিয় সেবা হলো ‘পে-ইন-৪’ প্ল্যান। এতে গ্রাহকরা কোনো পণ্যের দাম চার কিস্তিতে ভাগ করে ছয় সপ্তাহের মধ্যে শোধ করতে পারেন। এছাড়া বড় কেনাকাটার জন্য কোম্পানি দীর্ঘমেয়াদি কিস্তির ব্যবস্থা রেখেছে, যেখানে সুদ দিতে হয়। কোম্পানির দাবি, সারা বিশ্বে ১১ দশমিক ১ কোটি মানুষ এরই মধ্যে তাদের সেবা ব্যবহার করেছে।
যদিও বিএনপিএল মডেল জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ভোক্তা সংগঠনগুলোর মধ্যে কিছু উদ্বেগ রয়েছে। তারা মনে করছে, গ্রাহকেরা হয়তো ক্রেডিট কার্ডের মতোই অতিরিক্ত ঋণের মধ্যে জড়িয়ে পড়তে পারেন। তবে ক্লারনার দাবি, তাদের ব্যবহারকারীর গড় বকেয়া ১০০ ডলারেরও কম। আর যেহেতু তাদের ঋণ ছয় সপ্তাহের মধ্যে সীমাবদ্ধ, তাই তারা সহজেই নিয়ম পরিবর্তন করতে পারে।
পাবলিক হওয়ার আগে আগস্টে ক্লারনা জানায়, দ্বিতীয় প্রান্তিকে তাদের আয় হয়েছে ৮২৩ মিলিয়ন ডলার, আর লাভ হয়েছে ২৯ মিলিয়ন ডলার। ‘পে-ইন-৪’ ঋণে বকেয়া পরিশোধ না করার হার মাত্র শূন্য দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণে দুই দশমিক ২৩ শতাংশ। এই হার ক্রেডিট কার্ডের গড় বকেয়া হারের চেয়ে অনেক কম।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর বাজারমূল্যের দিক থেকে ক্লারনা হবে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিএনপিএল কোম্পানি। তালিকার শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যাফার্ম, যার বর্তমান মূল্য প্রায় ২৮ বিলিয়ন ডলার। এ বছর অ্যাফার্মের শেয়ারের দাম ৪০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। তবে ক্লারনার শেয়ারবাজারে প্রবেশের দিনই অ্যাফার্মের শেয়ার কিছুটা কমে যায়।

Discussion about this post