Print Date & Time : 2 September 2025 Tuesday 6:26 pm

নিয়ন্ত্রক সংস্থার পদক্ষেপের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যায় গ্রাহক আস্থা বাড়ে

দেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংক এবি ব্যাংক। ব্যাংকটি নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করছে। মাঝে কিছু দুর্বলতার কারণে ক্ষতির মুখে পড়লেও বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান ব্যাংকটির ক্ষত সারিয়ে তুলতে চেষ্টা করছেন। বর্তমান কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সম্প্রতি তিনি কথা বলেন দৈনিক শেয়ার বিজ-এর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শেখ শাফায়াত হোসেন

শেয়ার বিজ: গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এখনও স্বাভাবিক চেহারায় ফেরেনি অর্থনীতি। অনেক দিন ধরেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কিছুটা মন্থর। ঋণের চাহিদা কমে এসেছে। আমানত তোলার চাপ আছে। এই পরিস্থিতিতে এবি ব্যাংকের কার্যক্রম কেমন চলছে জানতে চাই।

সৈয়দ মিজানুর রহমান: বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা গত সাত মাসে আট হাজার ৪০০ কোটি টাকা আমানত আনতে সক্ষম হয়েছি। এটা একটি বড় অর্জন বলে আমি মনে করি। আমরা চেষ্টা করেছি ভালো করার। সেক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে গ্রাহক আস্থা ফেরানোর। তারা এটা নিয়ে কাজও করছেন। আগের থেকে অনেকখানি আস্থা ফিরে এসেছে। কিন্তু সম্প্রতি তিনটি ব্যাংকে বিদেশি অডিট ফার্ম নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে যে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে, এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যদি দেশের জনগণকে জানিয়ে দেয়া যায় যে, এখানে গ্রাহকের আস্থা হারানোর কোনো কারণ নেই, এটা গোটা সংস্কার প্রক্রিয়ার একটি অংশ, তাহলে বিষয়টি যতটুকু বিশ্বাসযোগ্য হবে, অর্থাৎ রেগুলেটর বললে গ্রাহকের কাছে তা যতটা বেশি গ্রহণযোগ্য হবে, আমরা বললে তা হবে না।

এজন্য সম্প্রতি অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ নিয়ে যে বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে, তা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আরও পরিষ্কারভাবে বলা উচিত বলে আমরা মনে করি। তাদের কাছ থেকে এই বার্তা আসা দরকার যে, এটা নিয়ে কোনো আতঙ্কের কিছু নেই। এটা গোটা সংস্কার প্রক্রিয়ার একটি অংশ। এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হলে এর একটা প্রভাব সংশ্লিষ্ট খাতে পড়ে। এর আগেও আমরা এ ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেছি।

শেয়ার বিজ: বর্তমান সময়ে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবি ব্যাংক। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আপনারা কী করছেন, বিস্তারিত জানতে চাই।

সৈয়দ মিজানুর রহমান: আমরা বর্তমানে আমাদের বিগত দিনের ক্ষতগুলো সারিয়ে তুলতে চেষ্টা করছি। বেশি ফোকাস ওখানে। এর মধ্যে দিয়ে আমরা আমাদের সেবাকেও গ্রাহকের জন্য যথাপোযুক্ত করে তুলব। এরপর আমরা এটা নিয়ে প্রচারে যাব।

শেয়ার বিজ: গোটা ব্যাংক খাতে এখন খেলাপি ঋণ একটি সমস্যা। এক্ষেত্রে ব্যাংক খাতের ব্যবসা এগিয়ে নেয়ার জন্য কী করণীয় বলে মনে করেন।

সৈয়দ মিজানুর রহমান: খেলাপি ঋণ যে কোনো ব্যাংকের জন্য এখন সমস্যা। যারা এই সমস্যার মধ্যে পড়েছে তাদের মূলধন কমে আসছে। উদ্যোক্তা শেয়ারগ্রহীতাদের বলেছি, এর সমাধান করতে তারা স্থানীয় কৌশলগত পার্টনারদের সঙ্গে কাজ করছে।

ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা এখন ভালো। গত সাত মাসে আমরা আট হাজার ৪০০ কোটি টাকার বেশি আমানত নিয়ে কাজ করেছি। এটা গ্রাহকদের আস্থার প্রতিফলন। আমরা প্রায় ২৬ হাজার নতুন সঞ্চয় হিসাব এবং চলতি হিসাব (কাসা) খুলতে সক্ষম হয়েছি।

শেয়ার বিজ: ব্যাংকটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে একটু জানতে চাই। কীভাবে ব্যাংকটি আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারে?

সৈয়দ মিজানুর রহমান: আমরা ভবিষ্যতে করপোরেট থেকে ফোকাসটা সরিয়ে ফেলব। আমার মোট ঋণের ৯০ শতাংশের বেশি করপোরেট। এটা অনেক বড় ঝুঁকি তৈরি করে। সব ডিম এক ঝুঁড়িতে রাখলে একটি ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হওয়ার কথা। আমরা এখন এসএমই এবং রিটেইলে অনেক ফোকাস করছি। কার্ড, ডিজিটাল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং বাড়ানো, উপশাখা বাড়ানোর বিষয়ে ফোকাস করছি। এতে ব্যাংকের তহবিল খরচ কমবে। ব্যাংক সেবা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌছানো সম্ভব।

এর পাশাপাশি ভারতে আমাদের একটি পূর্ণাঙ্গ শাখা আছে মুম্বাইতে। এটা ১৯৯৬ সালে খোলা হয়। শাখাটির ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য আমরা কেন্দ ীয় ব্যাংকের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি। বর্তমানে মুম্বাইতে ৪৭টি ব্যাংক ট্রেড বিজনেস নিয়ে কাজ করছে। সেক্ষেত্রে এই শাখাটি আমাদের একটি বড় অ্যাডভান্টেজ হিসেবে কাজ করছে। এই মুহূর্তে আমরা সেখানে চারটি অতিরিক্ত শাখা খুলতে পারব, যার জন্য আমাদের একটি টাকাও মূলধন দিতে হবে না।

এছাড়া বেশ কিছু শাখায়কে আমরা নতুন আঙ্গিকে সাজাতে চাচ্ছি এভাবে যে, আমরা সেবাকেন্দ্রিক একটি ব্যাংক, গ্রাহকরা যাতে আরও নির্বিঘ্নে সেবা পেতে পারে। খরচ কমাতে কিছু শাখার জনবলের যৌক্তিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করব। সামগ্রিকভাবে জনবলের মানোন্নয়নেও জোর দেব।

শেয়ার বিজ: গত ৪৩ বছরের দীর্ঘ পথচলায় এবি ব্যাংকের সামগ্রিক অর্জন সম্পর্কে জানতে চাই।

সৈয়দ মিজানুর রহমান: প্রযুক্তি ও গ্রাহকসেবা প্রদানে এবি ব্যাংক সর্বদা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। ব্যাংকটি ইন্টারনেট ও এসএমএস ব্যাংকিং, উন্নত আইসিটি অবকাঠামো, সার্বক্ষণিক এটিএম সেবা ও বিস্তৃত ডিজিটাল পণ্যের পরিসর রয়েছে ব্যাংকটির।

বর্তমানে সারা দেশে ১০৪টি পূর্ণাঙ্গ শাখা, সাব-ব্রাঞ্চ, এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ২৭০টিরও বেশি এটিএম নিয়ে এবি ব্যাংক সারাদেশে নির্ভরযোগ্য ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, ভারতের মুম্বাইয়ে পূর্ণাঙ্গ শাখার পাশাপাশি মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে একটি প্রতিনিধি অফিস এবং হংকংয়ে নিজস্ব মালিকানাধীন সাবসিডিয়ারি এবি ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স লিমিটেড পরিচালনা করছে। এছাড়া ব্যাংকটির পাঁচটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট এবং কাস্টোডিয়াল সার্ভিসও অন্তর্ভুক্ত, যা আর্থিক খাতে ব্যাংকের সামর্থ্যকে আরও বিস্তৃত করেছে।

শেয়ার বিজ: সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

সৈয়দ মিজানুর রহমান: আপনাকেও ধন্যবাদ।