নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নির্বাচন উপযোগী রাখা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ভেঙে পড়া পুলিশি ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে। শরিফ ওসমান হাদি হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আসন্ন নির্বাচন আয়োজন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পরাজিত শক্তি পালিয়ে গেলেও তাদের দোসররা প্রতিনিয়ত হুমকি ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে।
গতকাল শনিবার এফডিসিতে আগামী নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার প্রতিরোধ নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। ছায়া সংসদটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতায় ঢাকা কমার্স কলেজকে পরাজিত করে হাজারীবাগ সরকারি কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়।
অনুষ্ঠানে অপশক্তির বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, একটি ভালো নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ। কমিশন নির্বাচনী আইন অনুসরণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনমনীয়তা দেখাতে পারেনি। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন ও বিদেশি শাখা নির্বাচনী আইনের লঙ্ঘন। দলগুলোকে এই ব্যবস্থা বিলুপ্ত করতে হবে। সুশাসনের ব্যর্থতা দূর করতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার আবশ্যক। অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার যুদ্ধে লিপ্ত না হয়ে রাজনীতিবিদদের সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুষ্ঠু ধারায় ফিরে আসতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বর্তমান সময়ে একটা বিরাট সমস্যা। এর অপব্যবহার মানুষকে বিভ্রান্ত করে, এমনকি সুষ্ঠু নির্বাচন ও ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে। এ কারণে নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে বিশেষ সেল করে এআই-এর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করা জরুরি।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ কেউ কোনো দলের প্রতি আনুগত্য থাকলেও সরকার দল নিরপেক্ষ। তাই সব হুমকি ও ঝুঁকি মোকাবিলা করে সরকার গণতন্ত্র উত্তরণের লক্ষ্যে জাতিকে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, তফসিল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইনকিলার মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি প্রমাণ করছে নির্বাচন বানচাল করতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয়। গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতেই এই হামলা। যেকোনো মূল্যে এই ধরনের হামলার চেষ্টাকে প্রতিহত করতে হবে। হাদির ওপর হামলার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ফ্যাসিস্টবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য জরুরি। তা না হলে এই ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে বিএনপির একজন প্রার্থীকে ও সর্বশেষ ওসমান হাদিকে টার্গেট করে হত্যার চেষ্টা অপশক্তির চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়। ওসমান হাদি হত্যাচেষ্টার ঘটনার পরপরই বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য আরও সুদৃঢ় করবে। বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে আসার পর তার নিরাপত্তাকে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। আমাদের প্রত্যাশা তার প্রত্যাবর্তনের পর জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে ফ্যাসিস্টবিরোধী শক্তিগুলো আরও ঐক্যবদ্ধ হবে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার রোধ করা হবে আগামী নির্বাচনের বড় চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক ছায়া সংসদে বিচারক ছিলেন সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাইদুল ইসলাম, মসিউর রহমান খান, মাইদুর রহমান রুবেল ও মো. আতিকুর রহমান। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
