নিজস্ব প্রতিবেদক : আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নানারকম ষড়যন্ত্রের ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। তবে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলে বিশ্বাস করি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপির অগ্রযাত্রা রুখতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে গতকাল রোববার তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্যসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা অংশ নেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘৪৭ বছরের গৌরবান্বিত পথচলায় বিএনপি বরাবরই দেশের জনগণের সহযোগিতা ও সমর্থন পেয়ে এসেছে। তাই আসুন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই দিনে জনগণের কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, আইনের শাসন এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ থেকে বিএনপি যেমন অতীতে বিচ্যুত হয়নি, ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও আমরা বিচ্যুত হব না। বিএনপির শেকড় এই বাংলাদেশ।’
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী এবং চব্বিশের ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে যারা আত্মত্যাগ ও হতাহত হয়েছেন, তাদের স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘হাজারো শহীদের আত্মত্যাগ ও হাত-পা- চোখ হারানো শত শত আহত যোদ্ধা আর্তনাদের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ এখন জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সময় এবং সুযোগ এসেছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান উপায় জাতীয় নির্বাচন। যতক্ষণ পর্যন্ত একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরাসরি ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ, জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত গণতন্ত্র ঝুঁকিমুক্ত নয়।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘নির্বাচন ঘিরে অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে। জনগণ লক্ষ করতে শুরু করেছে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের বাংলাদেশে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ বিনষ্ট করার ক্ষেত্রে সেই অশুভ শক্তির অপতৎপরতা সা¤প্রতিক সময় ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। পতিত, পরাজিত ও পলাতক স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে হাঁটছে, তখন কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে তাদের দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য নানা শর্ত আরোপ করছে। এই শর্ত আরোপ করে নির্বাচনের পথে হয়তোবা পরিকল্পিত উপায়ে বাধা সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে বলে বহু মানুষ ভেতরে ভাবতে শুরু করেছেন।’
প্রথম থেকেই বিএনপি দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল। কারণ বিএনপি মনে করে আগে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত নির্বাচিত সরকার জনপ্রত্যাশা পূরণে যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে পরবর্তী নির্বাচনে জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের সুযোগ পাবে, যা গণতান্ত্রিক বিশ্বে প্র্যাকটিস করা হয়ে থাকে। সুতরাং পুথিগত সংস্কারের চেয়েও কার্যকর গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা অনেক বেশি জরুরি। রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে সংস্কারের ব্যাপারে বিএনপি সম্পূর্ণভাবে একমত।
গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে অবশ্যই। তবে জনগণের অধিকার চর্চা এবং প্রয়োগের পথ সৃষ্টি না করে কোনো সংস্কারকেই টেকসই করা যাবে না। পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে গঠিত বর্তমান সরকার জনগণের অভিপ্রায়ের সরকার। তবে এই সরকারের কাছে অবশ্যই একটি দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক রাজনৈতিক সরকারের মতো পারফরম্যান্স আশা করার কোনো যৌক্তিক কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।’
তারেক রহমান বলেন, ‘নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না, এ ধরনের উচ্চারণ ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির ঐক্যকে দুর্বল করবে, নাকি পলাতক অপশক্তির পুনরুত্থানের প্রাসঙ্গিকতা তৈরি করবে। অতএব এখনো সময় আছে আমাদের সতর্ক হওয়া দরকার। পরাজিত পলাতক অপশক্তি কিন্তু সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পলাতক স্বৈরাচারের মতো বিএনপির বিজয় ঠেকানোর অপরাজনীতির পরিবর্তে আসুন সবাই মিলে আগে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার গঠন করি। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর আরও সব যৌক্তিক দাবিগুলোর সমাধানের পথ খুঁজি আমরা।’
নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মব ভায়োলেন্সকে আমরা কেউ প্রশ্রয় দেব না।

Print Date & Time : 16 September 2025 Tuesday 2:40 pm
নির্বাচন ঘিরে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে: তারেক রহমান
জাতীয়,পত্রিকা,প্রথম পাতা ♦ প্রকাশ: