নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় ডলারের সরবরাহ বেশ বেড়েছে। ফলে মুদ্রাটির দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে ডলারের দরপতন ঠেকাতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনে দাম স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। ১১টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে গতকাল রোববার মোট ৮ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিটি ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এ উদ্যোগ বাজারে ডলারের মান ধরে রাখতে এবং বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে নেয়া হয়েছে। রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবেই এই ডলার কেনা, তবে এর পেছনে রয়েছে স্পষ্ট মুদ্রানীতির কৌশল।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, আজকের নিলামে ১২ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে ১২১ দশমিক ৪৭ টাকায় আর ৭১ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে ১২১ দশমিক ৫ টাকায়। বহুমূল্য নিলাম পদ্ধতিতে এই ডলার সংগ্রহ করা হয়েছে।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি ডলারের চাহিদা কমে আসায় দাম কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতায় ছিল। এ অবস্থায় দাম আরও কমে গেলে রপ্তানিকারক ও রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীরা অনুৎসাহী হয়ে পড়তে পারেন। কেন্দ ীয় ব্যাংকের এ পদক্ষেপ মূলত বাজারে ডলারের দাম একটি নির্দিষ্ট সীমার নিচে নামতে না দেয়ার ইঙ্গিত।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এপর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক কিনেছে মোট ৬২২ মিলিয়ন ডলার। এর আগে, ৭ আগস্ট নিলামে ১২১ দশমিক ৩৫ থেকে ১২১ দশমিক ৫ টাকা দরে ৪৫ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়। এর আগে ২৩ জুলাই ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা কাট-অফ দরে ১০ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছিল, যা হার কমানোর ক্ষেত্রে অন্তত ৪৫ বেসিস পয়েন্টের হ্রাস নির্দেশ করে।
ডলারের দর ধরে রাখতে কেন্দ ীয় ব্যাংকের এই ধারাবাহিক হস্তক্ষেপ শুরু হয় গত ১৩ জুলাই, যখন প্রথমবারের মতো নিলামে বাংলাদেশ ব্যাংক ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ১৭১ মিলিয়ন ডলার কেনে। এরপর ১৫ জুলাই একই দরে আরও ৩১৩ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়।
বাজারের জন্য সিগন্যাল রেট বা নির্দেশমূলক হার নির্ধারণ এবং ডলারের দ্রুত অবমূল্যায়ন ঠেকাতে কেন্দ ীয় ব্যাংক ডলার কিনছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিলাম কমিটির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গত সপ্তাহে বলেন, ব্যাংকগুলো প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিল, তবে বাজার পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে কেন্দ ীয় ব্যাংক নির্দিষ্ট পরিমাণ ডলার কিনেছে। তিনি বলেন, ডলারের দর হঠাৎ বৃদ্ধি বা পতনÑকোনোটাই অনুকূল নয়। ‘আমরা রপ্তানিকারক ও রেমিট্যান্স প্রেরকদের সহায়তা করতে বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বর্তমানে ব্যাংক খাতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণে ডলার প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আমরা প্রতি মাসে গড়ে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয় এবং চার বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করছি, যা ডলারের মাসিক প্রবাহকে প্রায় ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড় করাচ্ছে। অন্যদিকে বিনিয়োগসংক্রান্ত আমদানি কমে যাওয়ায় আমাদের মাসিক আমদানি বিল কমে চার থেকে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এই অতিরিক্ত প্রবাহ বাজারে ডলারের দর কমিয়ে দিচ্ছে, আর কেন্দ ীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ বাজারে দরের সেই পতনকে তীব্র হতে দিচ্ছে না।’

Discussion about this post