Print Date & Time : 15 September 2025 Monday 3:46 pm

নেপালে আন্দোলনের সহিংসতায় তিন ট্রিলিয়ন রুপি ক্ষতির শঙ্কা

শেয়ার বিজ ডেস্ক : নেপালে এখন শরৎকালÑব্যবসা ও পর্যটনের জন্য সবচেয়ে প্রাণবন্ত সময়। বছরের এ সময়েই দেশটিতে বিদেশি পর্যটক ভিড় জমায়, নেপালি প্রবাসীরা দেশে ফিরে দীর্ঘ উৎসব উদ্যাপন করেন। স্থানীয় উদ্যোক্তা, খুচরা ব্যবসায়ী, হোটেল, বিমান ও পরিবহন খাত রমরমা ব্যবসা করে। খবর: আল জাজিরা।
তবে সম্প্রতি জেনারেশন জেড বা জেন-জি নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ থেকে সৃষ্ট সহিংসতায় থামেল, দরবার স্কোয়ার, পোখারা ভৈরহাওয়া, বিরাটনগর ও চিতওনসহ প্রধান পর্যটন কেন্দ্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিক্ষোভে হোটেলে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে, ব্যাহত হয়েছে ভ্রমণ। পর্যটন মৌসুম শুরুর আগেই ব্যাপক হারে হোটেলগুলোর বুকিং বাতিল হয়েছে। সবমিলিয়ে দেশটির পর্যটন খাত প্রায় ২৫ বিলিয়ন রুপির ক্ষতির মুখে পড়েছে। রাজধানী কাঠমান্ডুর হিলটন হোটেলে এককভাবে ক্ষতির পরিমাণই আট বিলিয়ন রুপির বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভাট-ভাটেনি সুপারমার্কেটের ২৮টি আউটলেটের মধ্যে ২১টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় দুই হাজার হোটেল কর্মীর উৎসবকালীন জীবিকা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
হোটেল, অটোমোবাইল ডিলার ও ভাট-ভাটেনি সুপারমার্কেটের হিসাব অনুযায়ী, এই রক্তক্ষয় প্রায় ১০ হাজার নেপালিকে রাতারাতি বেকার করেছে। পরিবহন খাতের ক্ষতি প্রায় ১৫ বিলিয়ন রুপি।
অর্থনীতিবিদরা অনুমান করছেন, এই সংঘাতের পরোক্ষ ক্ষতি প্রায় তিন ট্রিলিয়ন রুপি, যা নেপালের দেড় বছরের বাজেট বা মোট জিডিপির অর্ধেকের সমান। সরকার ও বেসরকারি খাতের অবকাঠামো ও নথিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলতি অর্থবছরের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এক শতাংশের কম হবে বলেও আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদ চন্দ্রমণি আঢ্যাকি। আগামী মার্চে নির্বাচনের জন্য আরও ৩০ বিলিয়ন রুপি ব্যয় হবে, যা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রভাব ফেলবে।
তবে ছাই থেকে উঠে দাঁড়ানোর সংকল্প করেছেন নেপালের বিনিয়োগকারীরা। স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে ব্যবসা পুনর্নির্মাণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক পর্যটক, পর্যটন পেশাজীবী ও অংশীদারদের আশ্বস্ত করেছে নেপাল অ্যাসোসিয়েশন অব ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল এজেন্টস। নেপাল স্থিতিশীলতার দিকে এগোচ্ছে বলে জানিয়ে পর্যটনের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সংগঠনটি। এয়ারপোর্ট ও পরিবহন পরিষেবা স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে। ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলো নিয়মিত ফ্লাইট চালু করেছে।
শুধু পর্যটন খাত নয়, ভোজবাজির মতো পাল্টে গেছে পুরো নেপালই। দুদিনের ধ্বংসযজ্ঞ পেরিয়ে ফিনিক্স পাখির মতো উঠে দাঁড়িয়েছে। সুশীলা কার্কির সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরদিনই পুরোপুরি আগের পরিস্থিতিতে ফিরে গেছে দেশটি। তুলে নেওয়া হয়েছে কারফিউ। সরকারি-বেসরকারি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে গতকালই। সেনারাও গতকালই ব্যারাকে ফিরে গেছে। আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব নিয়ে পুরোদমে মাঠে নেমেছে পুলিশ।
এমনকি আন্দোলনের সময় বর্তমান ও সাবেক যে মন্ত্রীদের ওপর হামলা হয়েছিল, যাদের বাসভবন ভাঙচুরের শিকার হয়েছিল, তারাও ঘরে ফিরেছেন। গত কয়েক দিন তারা সেনাবাহিনীর নিরাপত্তায় ছিলেন। সরকারি দপ্তর ও সংসদ ভবন ভাঙচুরের ধ্বংসাবশেষ সরাতে শুরু হয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান, যা পুনর্গঠনের বার্তা বহন করছে। আন্দোলনটি শুরু করেছিলেন যে জেন-জি’রা তাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী। তারা পড়াশোনায় ফিরে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন।