নুরুন্নাহার চৌধুরী কলি : পতনের ধাক্কা সামলে আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। এমনিতেই চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই দেশের পুঁজিবাজারে তেজিভাব দেখা গেছে; যা গতকাল বুধবারও অব্যাহত ছিল। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। গতকাল আগের কার্যদিবসের তুলনায় ডিএসইতে লেনদেন অনেকটাই বেড়েছে। এদিকে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দরও বেড়েছে।
ডিএসইর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৫৩ দশমিক ৮২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৩৫ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১০ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯৪ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ১৮ দশমিক ৮২ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৮৯৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেনেও ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। ডিএসইতে গতকাল লেনদেন আগের কার্যদিবসের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে।
ডিএসইর তথ্যমতে, গতকাল লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানি এবং ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে। ডিএসইতে গতকাল মোট ৩৯৭টি কোম্পানি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ২৭৩টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৭৮টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে ৪৬টি ফান্ড ও কোম্পানির দর অপরিবর্তিত ছিল।
এদিকে বিভিন্ন ক্যাটেগরির মধ্যে ‘এ’ ক্যাটেগরির ২১৭টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৪৭টি কোম্পানি ও ফান্ডের দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৪৪টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ২৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর।
একইভাবে ‘বি’ ক্যাটেগরির ৮৩টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৫৯টি ফান্ড ও কোম্পানির দরদাম বেড়েছে। এর বিপরীতে ১৭টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ৭টি ফান্ড ও কোম্পানির দর।
‘জেড’ ক্যাটেগরির ৯৭টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৬৭টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ১৭টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ১৩টি ফান্ড ও কোম্পানির দর।
একইসঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ড খাতেও বেশিরভাগ ফান্ডের ইউনিটের দরও বেড়েছে। লেনদেন হওয়া ৩৬টি ফান্ডের মধ্যে মাত্র ১৪টি ফান্ডের ইউনিট দর বেড়েছে, বিপরীতে ৭টি ফান্ডের ইউনিট দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ১৫টি ফান্ডের ইউনিট দর।
ডিএসইতে গতকাল মোট ৩০ কোটি ৯২ লাখ ২ হাজার ৭৯৩টি শেয়ার ও ইউনিট দুই লাখ ৮ হাজার ৯৩ বার হাতবদল হয়েছে। এর জের ধরে দিনশেষে ডিএসইতে মোট লেনদেন দাঁড়িয়েছে ৬৯০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৬০১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
এদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল মোট ২৩৩টি কোম্পানি এবং ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৫৩টি কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ারদর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৪২টি কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ার দর কমেছে। দিনশেষে ৩৯টি কোম্পানি ও ফান্ডের দর অপরিবর্তিত ছিল। সিএসইতে গতকাল মোট ৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে; যা আগের কার্যদিবসে ছিল ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
এদিকে গত সোমবার দেশের পুঁজিবাজারে দারুণ ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যায়। দীর্ঘ ১১ মাস পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স-এ একটি উল্লেখযোগ্য উত্থান পরিলক্ষিত হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের নতুন করে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে। গত সোমবার ডিএসইএক্স ৮২ পয়েন্টের বেশি বেড়ে লেনদেন হয়েছিল। এই উত্থানকে বাজারসংশ্লিষ্টরা একটি বড় চমক হিসেবে দেখছেন।
২০২৪ সালে ৭ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ডিএসই সূচকে দুটি উল্লেখযোগ্য উত্থান দেখা গিয়েছিল। পরদিন ৮ আগস্ট ডিএসইএক্স সূচক ৩০৬ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন হয়, যা ২০১৩ সালে সূচকটি চালু হওয়ার পর একক দিনে সর্বোচ্চ উত্থান। তিন দিন পর ১১ আগস্ট সূচক আরও ৯১ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। তারপর থেকে ডিএসই সূচকে এমন বড় অঙ্কের উত্থান আর দেখা যায়নি। দীর্ঘ ১১ মাস পর গত সোমবার আবার পুঁজিবাজারে এ ধরনের একটি বড় উত্থান দেখা গেল; যা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থার প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করছে। গত মঙ্গলবারও ডিএসইতে মোট ৬০১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৫৭৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।
অন্যদিকে গতকাল বুধবারও ডিএসইতে বছরের সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ৬৯০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৬০১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, গতকাল পুঁজিবাজারের এই তেজিভাব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। আগামী দিনগুলোয় বাজারের এই ইতিবাচক ধারা বজায় থাকে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়। সূচক বাড়ার পাশাপাশি পুঁজিবাজারে লেনদেনেরও পরিমাণ বেড়েছে। এটি বাজারে বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং ইতিবাচক মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, আগামী দিনগুলোতেও এ ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় থাকবে।

Discussion about this post