নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি (এনসিএসএ) জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন ডিজিটাল ও ইলেকট্রনিক প্ল্যাটফর্মে সম্প্রতি পলাতক ও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মিথ্যা ও প্ররোচনামূলক বক্তব্য ছড়ানো হচ্ছে, যা রাষ্ট্রের সার্বিক নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার প্রতি গুরুতর হুমকি তৈরি করছে। গত সপ্তাহজুড়ে এসব বিভ্রান্তিকর তথ্য ও বিদ্বেষমূলক প্রচার সামাজিক উত্তেজনা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতার আশঙ্কা তৈরি করেছে বলে এজেন্সি জানিয়েছে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ জসীম উদ্দিন প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার রাতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এনসিএসএর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, কিছু ডিজিটাল মাধ্যম ইচ্ছাকৃতভাবে ঘৃণামূলক বা জাতিগত বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচার করছে, যেগুলো সহিংসতা উসকে দিচ্ছে এবং জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে। এসব বক্তব্যের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে অস্থিতিশীলতা, অগ্নিসন্ত্রাস বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
এজেন্সি মনে করে, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ১৭ নভেম্বর ঘোষিত রায়ের পর পরিস্থিতি আরও স্পর্শকাতর হয়েছে। আদালত সেদিন শেখ হাসিনাসহ তিনজন আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে দণ্ড ঘোষণা করে এবং দুটি অভিযোগে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। আদালতের ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ে এ অভিযোগসমূহ প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। রায় ঘোষণার পর পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন বিবৃতি বা বক্তব্য ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার করা হলে তা দেশের সামাজিক সম্প্রীতি ও স্থিতিশীলতাকে বিপর্যস্ত করতে পারে বলে এনসিএসএ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এ প্রসঙ্গে এনসিএসএ বলছে, এসব বক্তব্যে সহিংসতার সরাসরি আহ্বান (ঈধষষ ভড়ৎ ঠরড়ষবহপব) বা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, যা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশৃঙ্খলা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাড়িয়ে তোলার ঝুঁকি তৈরি করছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এসব ডিজিটাল কনটেন্ট অপসারণ, ব্লক বা প্রয়োজনে স্থানান্তরের নির্দেশনা দেয়া হতে পারে। প্রয়োজনে বিটিআরসিকে সরাসরি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধও করা হবে।
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর সংশ্লিষ্ট আইনগত ধারা: সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর ৪ নম্বর ধারার (অতিরাষ্ট্রিক প্রয়োগ) অধীনে বলা হয়েছেÑবাংলাদেশের কোনো নাগরিক বিদেশে অবস্থান করে এ অধ্যাদেশের আওতাধীন কোনো অপরাধ করলে তা বাংলাদেশের ভেতরে সংঘটিত অপরাধ হিসেবেই বিবেচিত হবে এবং একইভাবে দণ্ডনীয় হবে।
অধ্যাদেশের ৮(২) ধারায় উল্লেখ আছেÑযদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মনে করে যে কোনো ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য দেশের অখণ্ডতা, নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলা ক্ষুণ্ন করছে, অথবা ধর্মীয়, সাম্প্রদায়িক বা জাতিগত বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে এবং সহিংসতা সৃষ্টি বা অপরাধ ঘটানোর নির্দেশ দিচ্ছে, তবে মহাপরিচালকের মাধ্যমে তা অবিলম্বে অপসারণ, ব্লক বা স্থানান্তরের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অধ্যাদেশের ২৬ ধারায় ঘৃণামূলক বা বিদ্বেষমূলক তথ্য প্রচারকে স্পষ্টভাবে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে বা ছদ্ম পরিচয়ে সাইবার স্পেসে সহিংসতা বা অপরাধ উসকে দিতে পারে এমন হেইট স্পিচ প্রচার করলে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড বা দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড প্রদান করা হবে।
সতর্কতা: এনসিএসএ সংশ্লিষ্ট সব ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে এবং অবৈধ প্রচার বা উসকানির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
