নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলমান গণছুটির আন্দোলন এবং নোটিশ করার পরও কাজে যোগ না দেয়া পরিকল্পিতভাবে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
সচিবালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আন্দোলনকারীরা যদি দ্রুত কাজে যোগ না দেন, তাহলে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। প্রয়োজনে বিকল্প ব্যবস্থাও গ্রহণ করে সেটা কার্যকর করা হবে।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা চাই আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দ্রুত কাজে ফিরে আসুক। গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য আছে, এই আন্দোলনের আড়ালে জাতীয় নির্বাচনে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা থাকতে পারে। আমরা বিষয়টি বিশ্বাস করতে চাই না। তবে যদি তারা কাজে না ফেরেন, তাহলে ধরে নিতে হবে এর পেছনে ইন্ধন রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকার সবসময় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পক্ষে। তবে কোনোভাবেই নাশকতা বা অস্থিতিশীলতা সহ্য করা হবে না।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কয়েক মাস ধরে চার দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। তাদের দাবিগুলো হলোÑ ১. আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একীভূতকরণ, ২. হয়রানিমূলক চাকরিচ্যুতি বন্ধ, ৩. লাইন ক্রুদের কর্মঘণ্টা নির্ধারণ এবং ৪. দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ। দীর্ঘদিন ধরে এ দাবিগুলো মেনে নেয়ার জন্য আন্দোলন চালালেও সম্প্রতি তারা গণছুটি ঘোষণা করে কর্মস্থল থেকে সরে দাঁড়ান। এতে বিদ্যুৎ খাত নিয়ে জনমনে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।
বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বলেন, আন্দোলনকারীদের কিছু দাবি যৌক্তিক। সরকার সেগুলো সমাধানে উদ্যোগও নিয়েছে। আমরা চাই সবাই কাজে ফিরে আসুক। দাবি পূরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু যদি নাশকতার চেষ্টা হয়, তাহলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া আমাদের কোনো উপায় থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, আন্দোলনের মধ্যে অনেক কর্মকর্তা বদলির অভিযোগ তুলেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। সেই বিবেচনায় ৩ হাজার ২৯ জন বদলির মধ্যে ৮০৩ জনকে পূর্বের স্থানে বহাল রাখা হয়েছে। এছাড়া আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অনেক মামলাও পুনর্বিবেচনার পর্যায়ে আছে।
আরইবির কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগও আন্দোলনকারীরা উত্থাপন করেছেন। সে বিষয়ে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সরকার তাদের সব দাবি খতিয়ে দেখছে। তবে কর্মস্থল ছেড়ে গিয়ে জনস্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করলে তা মেনে নেয়া হবে না বলে সতর্ক করেন উপদেষ্টা।
সরকার তাদের কাজে ফেরার নোটিশ জারি করে। নোটিশে বলা হয়েছে, আন্দোলনকারীদের দ্রুত কাজে ফিরে আসতে হবে। অনেকেই ইতোমধ্যে কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে এখনও অনেকে ফিরে আসতে চাননি। উপদেষ্টা অভিযোগ করেন, অনেক কর্মী কাজে ফিরতে চান, কিন্তু কেউ কেউ বাধা দিচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনটি জিডি করা হয়েছে। সরকার এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সহনশীলতা দেখাচ্ছে।
যদি কর্মীরা কাজে না ফেরেন, তাহলে বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা বন্ধ হতে দেয়া যাবে না। জনগণের স্বার্থেই প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভবিষ্যৎ কাঠামো নিয়েও ভাবছে সরকার। কোম্পানি করা যায় কি নাÑসে বিষয়েও পর্যালোচনা চলছে। কোম্পানি করতে হলে একটি ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে হবে। আইন ও বিধি সংশোধন করতে হবে। সবকিছুই দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। তবে সরকার পল্লী বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে কোনোভাবেই উদাসীন নয়। এছাড়া কর্মীদের চাকরির শর্ত ও কাঠামো নির্ধারণে নতুন একটি বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খসড়া প্রণয়নের সময় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মতামত নেয়া হবে।
আন্দোলনের পেছনে জাতীয় নির্বাচনে বিঘ্ন ঘটানোর শঙ্কার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য আছে যারা নির্বাচন চান না তারাও এ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে পারেন। এ ধরনের তথ্যকে উড়িয়ে না দিয়ে সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।
জাতীয় নির্বাচনের আগে বিদ্যুৎ খাতে অচলাবস্থা সরকারের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করছে। কারণ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত শুধু অর্থনীতির চালিকাশক্তিই নয়, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সঙ্গেও সরাসরি সম্পর্কিত।
সরকার আন্দোলনকারীদের যৌক্তিক দাবি পূরণের উদ্যোগ নিয়েছে এবং অনেকেই কাজে ফিরেছেন। কিন্তু আন্দোলন এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। ফলে অচলাবস্থা কাটছে না।
ফাওজুল কবির খান বলেন, আমরা চাই সবাই দ্রুত কাজে ফিরে আসুক। তারা বৃহত্তর বিদ্যুৎ পরিবারের অংশ। সরকার তাদের সুযোগ দিতে চায়। কিন্তু জনগণের স্বার্থে প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবে না।

Discussion about this post