Print Date & Time : 6 September 2025 Saturday 5:30 am

পাঁচ দিনে তৃতীয় ভূমিকম্প, আফগানিস্তানে মৃত্যু ছাড়াল ২২০০

শেয়ার বিজ ডেস্ক : পাঁচ দিনের ব্যবধানে আফগানিস্তানে তৃতীয় ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৫৬ মিনিটে দেশটির দক্ষিণপূর্ব অঞ্চলে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের পর আফগানিস্তানের মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তা বাড়াতে দেশটির শাসকগোষ্ঠী তালেবানের পাশাপাশি একাধিক দাতা সংস্থাও অনুরোধ জানিয়েছে। খবর: রয়টার্স।

জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ভূমিকম্পের মাত্রা ৬ দশমিক ২ জানালেও বিবিসির প্রতিবেদনে মাত্রা বলা হয়েছে ৫ দশমিক ৬।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতের ওই ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো তথ্য জানায়নি কর্তৃপক্ষ। তবে ১৭ জনকে আহত অবস্থায় কুনার প্রাদেশিক হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

নানগারহার প্রদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র নাকিবুল্লাহ রাহিমি জানান, বৃহস্পতিবারের ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল পাকিস্তান সীমান্তের কাছের শিওয়া জেলায়। প্রাথমিকভাবে বারকাশকত এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।

দেশটির ইতিহাসে অন্যতম প্রাণঘাতী ভূমিকম্প আঘাত হানে গত রোববার। মাঝখানে মঙ্গলবার আরেকটি ভূমিকম্পের সাক্ষী হয় এমনিতেই তীব্র দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে আসা আফগানরা।

রোববারের ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে এরই মধ্যে দুই হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দেশটির কর্মকর্তারা। এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে একের পর এক মরদেহ উদ্ধার করা হচ্ছে। তবে পাহাড়ি দুর্গম অঞ্চল হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার প্রচেষ্টা।

অন্যদিকে ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি ধসে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। সেই সঙ্গে ছয় হাজার সাতশ’র বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সব মিলিয়ে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ৮৪ হাজার বাসিন্দা।

মাটির ১০ কিলোমিটার গভীরে উৎপন্ন এই কম্পন এমনিতেই দুই দফা ভূমিকম্পের মুখে পড়া আফগানদের পরিস্থিতি আরও নাজুক করে তুলেছে। আগের দুই ভূমিকম্প কুনার ও নানগারহার প্রদেশের অনেক গ্রাম মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে, লাখো লোককে করেছে বাস্তুহারা, আহত হয়েছে তিন হাজার ছয়শ’র বেশি মানুষ।

গত রোববার ৬ মাত্রার প্রথম ভূমিকম্পের পর মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফায় ৫ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প নতুন আতঙ্ক ছড়ায়, বন্ধ হয়ে যায় উদ্ধারকাজ; পাহাড় থেকে রাস্তায় পাথর গড়িয়ে পড়ায় অনেক গ্রাম বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত ছয় হাজার সাতশ’র বেশি বাড়িঘর ধ্বংসের খবর দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

অনেকে এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকায় এবং তাদের উদ্ধারে সময় ফুরিয়ে আসায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা জাতিসংঘের।

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (আইএফআরসি) জানিয়েছে, বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে মানবিক ত্রাণ সহায়তার চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।

প্রাথমিক হিসাবে ৮৪ হাজার মানুষ সরাসরি ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলেও জানিয়েছে তারা।

কুনারের ক্ষতিগ্রস্ত কিছু গ্রামে হতাহতের সংখ্যা মোট বাসিন্দাদের দুই-তৃতীয়াংশ, সেসব এলাকার ৯৮ শতাংশ বাড়িঘরই হয় পুরো ধসে পড়েছে, না হয় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ইসলামিক রিলিফ ওয়ার্ল্ডওয়াইড।

স্বজনদের খুঁজে পেতে মরিয়া অনেকেই খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ ঘাঁটছেন। মৃতদেহ পেলে কোনো রকমে তৈরি খাটিয়ায় তা বহন করে নিজ হাতে খোঁড়া কবরে সমাধিস্থ করছেন। আর অপেক্ষা করছেন ত্রাণের।

রয়টার্সের ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, ময়দার বস্তাভর্তি ট্রাক আর হাতে কোদাল ধরা পুরুষেরা ছুটছেন দুর্গম পাহাড়ি গ্রামগুলোর দিকে। যেখানে হেলিকপ্টার নামতে পারেনি, সেসব জায়গায় কমান্ডো সদস্যদের নামানো হয়েছে আকাশপথে।

চার কোটি ২০ লাখ মানুষের যুদ্ধবিধ্বস্ত, দারিদ্র্যপীড়িত এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা থেকে ক্রমেই বিচ্ছিন্ন এই দেশে এখন উদ্ধার সরঞ্জাম ও ত্রাণের সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। চরম আবহাওয়াও সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, অন্তত ৩০ লাখ ডলারের অর্থঘাটতি রয়েছে। ওষুধ, ট্রমা কিট আর জরুরি সরঞ্জামের প্রবাহ সচল রাখতে এই অর্থ এখন খুবই জরুরি। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে, তাদের হাতে ত্রাণ রয়েছে মাত্র চার সপ্তাহের জন্য।