Print Date & Time : 17 November 2025 Monday 8:47 am

পাঁচ ব্যাংক একীভূত ছাড়া পথ ছিল না: গভর্নর

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আর্থিকভাবে দুর্বল পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংককে একীভূত করা ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা ছিল।

রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ ইসলামিক ফাইন্যান্স সামিট, ২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গতকাল রোববার তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না। সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে এই উদ্যোগ দেশের অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে আনবে। ব্যাংক খাতকে শক্তিশালী ও গতিশীল করতে স্বচ্ছতা সবচেয়ে জরুরি। বিনিয়োগকারী, আমানতকারী ও কর্মকর্তাÑসবার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।’

গত ৫ নভেম্বর আর্থিক অনিয়ম ও দুর্বলতার কারণে পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংককে ‘অকার্যকর’ ঘোষণা করে সেগুলোয় প্রশাসক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলোÑএক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।

এরপর ৯ নভেম্বর গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ অনলাইন বোর্ড সভায় এই পাঁচ ব্যাংককে একীভূত করে পরিচালনার জন্য নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’-কে প্রাথমিক লাইসেন্স অনুমোদন দেয়া হয়। নতুন এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক।

ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি ইসলামি ব্যাংকিং আইন প্রণয়নে কাজ করছে এবং তারা সর্বোত্তম আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করতে চায়।

ইসলামি ব্যাংক খাত নিয়ে গভর্নর বলেন, ‘দেশে ইসলামি ব্যাংকিংকে শক্তিশালী করতে ভালো হিসাবরক্ষণ ও সুশাসনও প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি ইসলামি ব্যাংকিং আইন প্রণয়নে কাজ করছে এবং আমরা সর্বোত্তম আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করতে চাই। ভালো নিরীক্ষা বাংলাদেশের ইসলামি অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারে।’

তিনি স্বীকার করেন, সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামি ব্যাংক খাত একটি অস্থির সময় পার করেছে। তবে তিনি উল্লেখ করেন, খাতটি কাঠামোগতভাবে শক্তিশালী এবং এখনও বাজারে অনেক খাতের তুলনায় ভালো করছে।

তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী ইসলামি অর্থনীতি ভালো করছে। বাংলাদেশে আমরা আরও ভালো অবস্থানে থাকতে পারতাম, যদি অস্থির সময় না আসত। তবুও আমরা খাতটির প্রতি আস্থা রাখি এবং আমানতকারীরাও ধীরে ধীরে আস্থা ফিরে পাচ্ছেন।’

দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি ইসলামি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘ব্যাংকটি ভালোভাবে চলছে এবং সবচেয়ে বড় গ্রাহকভিত্তি রয়েছে। তবে অনিয়ম এখনও বড় উদ্বেগের বিষয়।’

তিনি উল্লেখ করেন, একটি একক পরিবারের মাধ্যমে আইবিবিএল থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়া হয়েছিল, যা ব্যাংকটির সম্পদের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করে। এই উদ্বেগজনক তথ্য পাওয়ার পরও মানুষ আইবিবিএলের ওপর আস্থা রেখেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘আইবিবিএল তীব্র তারল্য সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল, কিন্তু এখন তা কাটিয়ে উঠেছে। এমনকি এ বছর ইসলামি ব্যাংক খাতে সর্বোচ্চ আমানত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা এই শিল্পের জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত। তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর জন্য একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আমাদের এই পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। আমরা আশা করি পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা দায়িত্বশীল ও প্রতিনিধিত্বমূলক হবেন।’

খাতটির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে গভর্নর বলেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিং সুশৃঙ্খল, সুশাসিত ও টেকসই পথে এগিয়ে যাক।