প্রতিনিধি, পাবনা : পাবনা শহরের মণ্ডলপাড়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ করে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মন্ডলপাড়া জামে মসজিদের পাশের বউবাজার ক্লাব এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই মণ্ডলপাড়ায় দুটি গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উত্তেজনা চলছিল। এর আগেও কয়েক দফা কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার রাতে সেই উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। প্রতিপক্ষের ওপর হামলার উদ্দেশ্যে একদল বউবাজার ক্লাবে অতর্কিত উপস্থিত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এই হামলার নেতৃত্বে ছিল কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন পাবনা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তুহিন ওরফে ল্যাংড়া তুহিন। তার নেতৃত্বে অন্তত ২০-২৫ জনের সংঘবদ্ধ দল ক্লাব এলাকায় গিয়ে অতর্কিত লাঠি, ছুরি ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে তুহিন গ্রুপ একটি একনলা বন্দুক দিয়ে গুলি চালায়। গুলিতে প্রতিপক্ষ গ্রুপের বেশ কয়েকজ৩ন রক্তাক্ত হন। পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
গুলিবিদ্ধ ও আহত অবস্থায় এলাকাবাসীর সহায়তায় অন্তত ১২ জনকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতদের মধ্যে রয়েছেন মো. ইমরান, শহিদুল ইসলাম মিলন, সোহান, মাহফুজ, তাহাত, বিজয়, জাফর, রিয়েল, জুয়েল, হাসিফ, নওশাদ ও প্রান্ত। তাদের সবার বাড়ি পাবনা শহরের মণ্ডলপাড়া ও কাচারিপাড়া এলাকায়। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পাবনা থানা, ডিবি ও ডিএসবি পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে তারা পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। ঘটনাস্থল থেকে ধারালো ছুরি ও ছয়টি গুলির খালি খোসা উদ্ধার করা হয়। একই সঙ্গে সন্দেহভাজন হিসেবে একজনকে আটক করা হয়। তার নাম নাজিম, বয়স আনুমানিক ২৬ বছর। তিনি মন্ডলপাড়ার বাসিন্দা। আটককৃত নাজিমের দেহ তল্লাশি করে পুলিশ তার কাছ থেকে একটি বড় ছুরি এবং দুটি বন্দুকের খালি খোসা উদ্ধার করে।
পাবনা থানা পুলিশের ওসি আব্দুস সালাম বলেন, ঘটনার পরপরই আমরা পুলিশের একাধিক ইউনিট পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। একজনকে আটক করা হয়েছে। সংঘর্ষে জড়িত অন্যদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। বর্তমানে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তিনি জানান, এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থার প্রস্তুতি চলছে। হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বর্তমানে মন্ডলপাড়া ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে সংঘর্ষের পর এলাকা জুড়ে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন, দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এর আগেও ছোটখাটো কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় এমন ভয়াবহ সংঘর্ষের সূত্রপাত হলো বলে অনেকের অভিযোগ।

Discussion about this post