নিজস্ব প্রতিবেদক : পারিবারিক আদালতের বিচারপ্রার্থীদের কার্যক্রম সহজ করতে চালু হলো ই-সেবা। নতুন এ সেবার মাধ্যমে কমবে মামলার দীর্ঘসূত্রতা। সমাধান হবে অতিরিক্ত খরচ, দূরত্বজনিত সমস্যা, কাগজের নথি ব্যবস্থাপনা, সময়ক্ষেপণ এবং ভিড় ও অপেক্ষার মতো সমস্যাগুলোর। এছাড়া দ্রুত অনলাইন প্রক্রিয়া, ন্যূনতম খরচ, ঘরে বসে সেবা গ্রহণ, ডিজিটাল নথি, সপ্তাহের সাত দিন ২৪ ঘণ্টা রেজিস্ট্রেশন এবং অনলাইন শিডিউলিংয়ের সুবিধা পাওয়া যাবে।
গতকাল সোমবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের জগন্নাথ-সোহেল স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে ই-পারিবারিক আদালত উদ্বোধন করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
উদ্বোধনের পরে আসিফ নজরুল বলেন, আইনজীবীরা নিজেদের উদ্যোগ ও অর্থায়নে আদালতের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে পারেন। ই-পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে নিঃসন্দেহে ভোগান্তি ও দুর্নীতি কমবে, সময়ও বাঁচবে। প্রধান উপদেষ্টার সবচেয়ে বড় অফিস হোয়াটসঅ্যাপ। তিনি হোয়াটসঅ্যাপেই বেশি কাজ করেন। কাজেই আমাদেরও ডিজিটাইজেশনের দিকে এগোনো উচিত।
আইনজীবীসহ সবার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এটা এখনও শুরুর দিকে, কিন্তু আপনারা যত্ন না নিলে এটা থাকবে না। আমাদের ধন্যবাদ দেয়ার প্রয়োজন নেই, কেবল আপনারা এটা সন্তানের মতো দেখে রাখবেন। আইন মন্ত্রণালয় থেকে আমরা ২১টা রিফর্ম করেছি। আশা করি, আমাদের পরে যে পলিটিক্যাল পার্টি আসবে, তারা দেশকে ভালোবেসে এগুলো ধরে রাখবেন। আমরা যে ভালো কাজগুলো করছি, এর অ্যাপ্রিশিয়েট করবেন।
আসিফ নজরুল বলেন, বিনা পয়সায় লিগ্যাল এইডে গিয়ে আপনি বিচার পাবেন। পারিবারিক মামলার ক্ষেত্রে আমরা তা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছি। এখন ২০টা জেলায় চালু করেছি, যাওয়ার আগে ৬৪ জেলায় চালু করব। আশা করি, আগামীতে এক-তৃতীয়াংশ মামলা লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে সমাধান হবে। পাঁচ বছরের মধ্যে মামলার জট ৫০ শতাংশ কমে যাবে। পরবর্তী সরকারের প্রতি অনুরোধÑআমাদের উদ্যোগগুলো অব্যাহত রাখবেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, জনগণের সেবার জন্য এই ই-পারিবারিক আদালতের উদ্যোগ। আজকের এই উদ্যোগ টিকিয়ে রাখতে পারলে তা বিপ্লব হবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে কাগজবিহীন একটি বিচারব্যবস্থার দিকে আমরা এগোলাম।
তিনি আরও বলেন, যে নারী ও শিশুরা নির্যাতনের শিকার, তাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে এটি আসছে। আমাদের সরকার আর দুই-আড়াই মাস আছে, এর মধ্যে এটি ভালো দৃষ্টান্ত রেখে যাবে।
অনুষ্ঠানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী বক্তব্য রাখেন।
এ বিষয়ে পারিবারিক আদালতে মামলা পরিচালনা করা আইনজীবী ব্যারিস্টার সজীব মাহমুদ আলম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এটি একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। পারিবারিক আদালতে ই-সেবা চালুর ফলে মামলার নথিগুলো একটি সার্ভারে সংরক্ষিত থাকবে। অনেক সময় দেখা যায় আদালতে নথি খুঁজে পাওয়া যায় না বা একটা নির্দিষ্ট সময় পর নথি ধ্বংস করে ফেলা হয়। এরপর থেকে সব নথি অনলাইনে পাওয়া যাবে। এছাড়া মামলা পরিচালনা করা যাবে অনলাইনে। এতে করে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের ভোগান্তি লাঘব হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের আদালতগুলো এখনও পরিপূর্ণ ডিজিটালাইজেশন হয়নি। প্রত্যেক আদালতে আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তি স্থাপন জরুরি। আশা করি, সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে এগুলো সংস্থাপন করবেন। তবে প্রবীণ আইনজীবী যারা প্রযুক্তিতে অতটা পারদর্শী নন, তারা হয়তো প্রাথমিকভাবে অসুবিধার সম্মুখীন হবেন।
