বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে শেষ পর্যন্ত ২০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন। গত বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের এ-সংক্রান্ত ঘোষণার আগে বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে শুল্ক কমানোর বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করেছে। পাশাপাশি একই ইস্যুতে সরকারি দলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র সফররত বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারাও দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। এসব উদ্যোক্তা পণ্য আমদানি বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিকারকদের সঙ্গে সমঝোতা ও অঙ্গীকার করেছেন। সরকারি-বেসরকারি খাতের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশি পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক হার কমিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। সরকারের আহ্বানে গত মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ব্যবসায়ীরা যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর গত বুধ ও বৃহস্পতিবারÑএই দুই দিন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল দফায় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এসব সভায় তাৎক্ষণিকভাবে ২৬ কোটি ৮০ লাখ ডলারের সয়াবিনবীজ ও তুলা আমদানির সমঝোতা চুক্তি করেছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০০ কোটি ডলারের তুলা আমদানির অঙ্গীকার করেছেন তারা।
আমদানি বাড়াতে ব্যবসায়ীরা এগিয়ে এসেছেন বলেই তারা সফলতা পেয়েছেন। এভাবে অন্য খাতের ব্যবসায়ীরা এগিয়ে এলে সুফল মিলবে বলেই ধারণা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ২৫০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। সেটি মাথায় রেখে কর্মপরিকল্পনা সাজাতে হবে।
আমাদের মনে আছে, তিন মাস আগে ট্রাম্প বিপুল হারে ‘পাল্টা’ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়ার পর ৯০ দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। এরপর তিন মাস পেরিয়ে গেল গত ৯ জুলাই আসার আগে ট্রাম্প আবার তা পিছিয়ে দিলেন। অনেক দেশই শুল্কসংক্রান্ত আঘাতে জন্য নিজেদের বাজার প্রস্তুত করে রেখেছিল। তাই সামগ্রিকভাবে এই কম্পনের প্রভাব তেমন একটা অনুভূত হয়নি। যেমনটা ২ এপ্রিলের ঘোষণার পর হয়েছিল। আবার যেসব দেশ চিঠি পেয়েছে, তারা তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দেশগুলো উভয় দেশের জন্য লাভজনক দ্বিপক্ষীয় চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা অব্যাহত রাখার প্রয়াসের কথা বলেছে।
বাস্তবতা হলো, ট্রাম্পের শুল্কনীতি এতই অগোছালো যে, ইউরোপীয় মিত্র দূরের কথা-কারও কাছেই তা আদর্শ হয়ে উঠতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে চীন অনুকরণীয় হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র যখন পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি থেকে পিছু হটছে, তখন দেশটি এই শূন্যতা কাজে লাগিয়ে বিশ্বজুড়ে নিজের প্রযুক্তি রপ্তানি ও বিনিয়োগ বাড়ানোর নতুন কৌশল নিয়েছে। বিষয়টি হলো, সব দেশ নিজের মতো করে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাই পাল্টা শুল্কের অভিঘাত মোকাবিলায় সমন্বিত, ইতিবাচক বাণিজ্যনীতি প্রণয়ন করতে হবে। শুল্ক চাপিয়ে কোনো দেশই শেষমেশ লাভবান হয় না; যা করতে হবে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতেই করতে হবে। আমাদের নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে একতরফা কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত পদক্ষেপ নেবেন বলেই প্রত্যশা।