Print Date & Time : 11 August 2025 Monday 4:47 pm

পাল্টা শুল্ক ভবিষ্যতে আরও কমতে পারে: নিরাপত্তা উপদেষ্টা

শেয়ার বিজ ডেস্ক : সরকার তিনটি মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক নিয়ে দর–কষাকষি করেছে। প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, এই নীতির অন্যতম হলো—পরবর্তী সরকার চাইলে চুক্তির কোনো অংশ পরিবর্তন, পরিমার্জন বা বাতিল করতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, পাল্টা শুল্ক ভবিষ্যতে আরও কমতে পারে বলে সরকারের আশাবাদ রয়েছে। এই বার্তা ব্যবসায়ীদের মধ্যে নতুন আশাবাদ জাগিয়েছে।

গতকাল রোববার (১০ আগস্ট) রাজধানীর গুলশান ক্লাবে বস্ত্রকলমালিকদের সংগঠন বিটিএমএ আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন খলিলুর রহমান। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক নিয়ে দর-কষাকষি করতে যাওয়া প্রতিনিধিদলকে বিটিএমএ এই সংবর্ধনা দেয়।

উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা তিনটি মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে দর–কষাকষি করেছি। প্রথমটি হচ্ছে আমরা নির্বাচিত সরকার নই। ফলে আমরা পরবর্তী সরকারের ওপরে কোনো দায় বা বাধ্যবাধকতা (অবলিগেশন) রেখে যেতে পারি না। সুতরাং, পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা থাকতে হবে; তারা এটার পরিবর্তন, পরিমার্জন কিংবা বাতিল করতে পারবে। আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছি এমন একটা চুক্তি নিয়ে, যেটা বাতিলযোগ্য।’

খলিলুর রহমান বলেন, ‘দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে যতটুকু অবলিগেশন (বাধ্যবাধকতা) আমরা বহন করতে পারব, তার চেয়ে বড় কোনো দায় নেব না। সত্যি বলতে আমরা সবগুলো বাধ্যবাধকতা মেনে নিতে পারিনি। এটির প্রতিফলন শুল্কের হারেও পড়েছে। আর তৃতীয় বিষয় হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এটি ছিল শুধুই দ্বিপক্ষীয় চুক্তি। এখানে আমরা তৃতীয় কোনো দেশের উল্লেখ করতে পারব না। আমরা কোনো ভূরাজনৈতিক ফাঁদে পা দিতে চাই না।’

নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘তিনটি বিষয়ে সবাইকে স্পষ্ট করতে চাই। এক. যুক্তরাষ্ট্রের সুতা ব্যবহার করলে সেটি বাদ দিয়েই শুল্ক আরোপ করা হবে। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা নিশ্চিত থাকতে পারেন। দুই. সব প্রতিযোগী দেশের শুল্কহার এখনো নির্ধারণ হয়নি। তবে এতটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি যে বাংলাদেশের শুল্কহার প্রতিযোগিতামূলক থাকবে। তিন. আরেকটি বিষয় আছে, সেটি এখানে প্রকাশ্যে বলছি না। তবে মূল বিষয় হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের আরও কিছু আলোচনা বাকি আছে। সেটি সফল হলে আমরা আরও কিছু শুল্ক ছাড় পেতে পারি।’

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও কথা হয়েছে বলে জানান নিরাপত্তা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে এ নিয়ে ৪৫ মিনিট আলোচনা হয়েছে। আমরা তাঁকে বলেছি এই দর–কষাকষিকে বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে।’

অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘পাল্টা শুল্ক নিয়ে দর–কষাকষির ক্ষেত্রে আমাদের অনেক পরিণামদর্শিতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের ওপরে অনেক চাপ ছিল। কিন্তু আমরা সব সময়ই অংশীজনদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার চেষ্টা করেছি। পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনা এখনো শেষ হয়নি, চলমান আছে। আগামী দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজন হলে আমরা আবার যুক্তরাষ্ট্রে যাব।’

পাল্টা শুল্কের বিষয়টি আপাতত সমাধান হয়েছে উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের সামনে এখন পরবর্তী চ্যালেঞ্জ হচ্ছে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ। আমি মনে করি, এটি ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার বিষয়টির জন্য কর্মপরিকল্পনা না করে এটিকে একটি টাইমবম্ব হিসেবে রেখে গেছে।’

অনুষ্ঠানে বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজীজ রাসেল বলেন, ‘আমরা যারা সুতা বানাই, তাদের কাছে ইতিমধ্যে বিদেশি ক্রেতাদের থেকে কোয়ারি (জিজ্ঞাসা) আসছে। তাতে বুঝতে পারছি, এবার বোধ হয় ব্যবসাটা হবে। তবে প্রতিযোগী দেশগুলো বসে থাকবে না। আমাদের প্রতিবেশী দেশ এই খাতের যন্ত্র উৎপাদন করে। তারা এই ব্যবসা বন্ধ করতে পারবে না। এ জন্য দেশটির সরকার ক্রেতাদের অর্থ সহায়তা ও প্রণোদনা দিচ্ছে, শ্রমিকের বেতন দিচ্ছে। আমাদেরও বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।’

শওকত আজীজ আরও বলেন, পাল্টা শুল্ক কমানোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার বেসরকারি খাতের সঙ্গে যে সহযোগিতার মনোভাব দেখাচ্ছে, তা নজিরবিহীন। আগে কখনো এমন দেখা যায়নি। সরকার ব্যবসায়ীদের প্রতি, বিনিয়োগের প্রতি সুনজর দিলে দ্রুততম সময়ে কর্মসংস্থান বাড়বে।

বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘পাল্টা শুল্ক নিয়ে দর–কষাকষির এক পর্যায়ে আমরা বেশ শঙ্কিত ছিলাম। কারণ, শুল্ক কমাতে না পারলে আমাদের ব্যবসা হারানোর শঙ্কা তৈরি হতো। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কথা বলেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, উদ্বেগ জানিয়েছেন। এ নিয়ে কিছু জায়গায় ভুল–বোঝাবুঝিও হয়েছে। তবে আমরা যা-ই বলেছি, তা সচেতন নাগরিক হিসেবে বলেছি এবং করেছি।’

মাহমুদ হাসান খান আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সুতা ব্যবহার করলে পাল্টা শুল্কে ছাড় পাওয়া যাবে কি না; পাওয়া গেলে সেটি কোন প্রক্রিয়ায় হবে, তা নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা যথাযথ তথ্য পাচ্ছি না। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে যোগাযোগ করেছি। এ ক্ষেত্রে সরকারেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।’

বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘পাল্টা শুল্কহার যে পরিমাণ কমেছে, তাতে আমরা খুব বেশি তৃপ্ত না৷ আমরা আরও কম শুল্ক আশা করি। তবে আপাতত এটাই তৃপ্তি যে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় আমরা কম সুবিধায় নেই। আমরা এখনো আলোচনার মধ্যে আছি। পাল্টা শুল্কের আলোচনায় ব্যবসায়ীরা যেভাবে সহযোগিতা করেছে, সেটি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও ভালো ফল আসবে বলে আশা করি।’

বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘বর্তমানে ব্যবসা ও শিল্প খাতে আরও সংকট রয়েছে। অনেক কারখানা গ্যাস পাচ্ছে না, গ্যাসের তীব্র সংকটে ভুগছে তারা, ব্যাংকিংয়ে নানা ধরনের সমস্যায় পড়ছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। এ ছাড়া এখনো আমদানি-রপ্তানিতে বড় বাধা হিসেবে রয়েছে কাস্টমস বিভাগ।’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ বলেন, ‘পাল্টা শুল্কহার কমায় আমরা সরকারের ও নেগোসিয়েশন দলের ওপরে খুবই খুশি।’

আরআর/