পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স বা পিএমআই একটি অর্থনৈতিক সূচক, যা কোনো দেশের উৎপাদন খাত এবং সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির অবস্থা নির্দেশ করে। এর মাধ্যমে ব্যবসা, শিল্প ও অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। অর্থনীতির প্রধান খাত কৃষি, নির্মাণ, উৎপাদন ও সেবা খাতের ৪০০টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের মতামতের ভিত্তিতে পিএমআই প্রকাশ করা হয়। সূচক তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাঁচামাল ক্রয়, পণ্যের ক্রয়াদেশ, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
পিএমআই শূন্য থেকে ১০০ নম্বরের মধ্যে পরিমাপ করা হয়। সূচকের মান ৫০-এর বেশি হলে অর্থনীতির সম্প্রসারণ এবং ৫০-এর নিচে হলে সংকোচন বোঝায়। আর মান ৫০ থাকলে বুঝতে হবে সংশ্লিষ্ট খাতে ওই মাসে অপরির্তিত রয়েছে।
ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের শতবর্ষের পুরোনো সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স (এমসিসিআই) ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশ এক বছর ধরে যৌথভাবে পিএমআই প্রণয়ন করছে। সূচকটি প্রণয়নে সহযোগিতা করছে যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কার্যালয় (এফসিডিও) ও সিঙ্গাপুর ইনস্টিটিউট অব পারচেজিং অ্যান্ড ম্যাটেরিয়ালস ম্যানেজমেন্ট (এসআইপিএমএম)। সূচক পরিমাপে যে চারটি খাত বিবেচনায় নেয়া হয়, সেগুলো অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি জানতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সূচকের মাধ্যমে বোঝা যায়, দেশের অর্থনীতি কতটা গতিশীল আছে। ফলে এ সূচকের অবস্থা দেখে ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও নীতিনির্ধারকদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয় বলেই ধারণা।
বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে পিএমআই চালু রয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এমন বাস্তবতায় এ দেশে দেশি-বিদেশি বিপুল বিনিয়োগ দরকার হবে। কিন্তু বিনিয়োগের আগে ব্যবসা-বাণিজ্যের হালনাগাদ তথ্য জানতে চান বিনিয়োগকারীরা। এ ক্ষেত্রে পিএমআই সূচক তাদের জন্য সহায়ক হবে। পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোও সহজে নির্ণয় করা যাবে। যেমন গত মাসে (জুলাই) অর্থনীতির সম্প্রসারণ হয়েছে, পিএমআই ছিল ৬১ দশমিক ৫। গত মাসে চার খাতেরই সম্প্রসারণ হয়েছে। তবে কৃষি খাতের সম্প্রসারণের গতি কমেছে। জুলাই মাসে দেশের নির্মাণ খাত সম্প্রসারণের ধারায় ফিরেছে। এক মাসে এই উপসূচকের মান ২০ পয়েন্টের বেশি বৃদ্ধির অর্থ হলো, গত মাসে নির্মাণ খাতে অনেকটাই গতি এসেছে।
সূচকে দেশগুলোর অবস্থান বিষয়ে মাতামাতি হয়তো অনেক সময়েই বিভ্রান্তমূলক উপসংহারের জন্ম দেয়। যেমন একটি দেশের প্রত্যাশিত উন্নয়ন হলেও সূচক তালিকায় দেশটি নিচে নেমে যেতে পারে। তাই সূচক নিয়ে মাতামাতি যেমন ক্ষতিকর, তেমনি তা উপেক্ষাও করা যায় না। সবচেয়ে বড় কথা, সরকারের বিশেষ করে পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ নিয়ে অনেক মতদ্বৈধ আছে। কেননা সেখানে সরকারের সাফল্য ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রচারের পেছনে বিশেষ উদ্দেশ্য থাকে। তারপর সূচক একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন গুরুত্ব বহন করে। মূলত সূচক কেবল গণিত, অর্থনীতি, পরিসংখ্যান ও ডেটা বিশ্লেষণের পাশাপাশি উন্নয়ন-প্রবৃদ্ধির কাজে নির্মোহভাবে ব্যবহার করা উচিত।

Discussion about this post