নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের পুঁজিবাজারে আবারও অব্যাহত দরপতনের মধ্যে পড়েছে। দিনের পর দিন ঢালাও দরপতন চলছে। এতে আবারও বাড়তে শুরু করেছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা। ঢালাও দরপতনের সঙ্গে লেনদেনের গতিও কমতে শুরু করেছে।
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস গতকাল রোববার প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর কমেছে। ভালো-মন্দ সব ধরনের কোম্পানির শেয়ারের ঢালাও দরপতন হওয়ায় মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। সেইসঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
অন্য পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দর কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে এ বাজারেও মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা দুই কার্যদিবস ঢালাও দরপতনসহ টানা তিন কার্যদিবস পুঁজিবাজাররে দরপতন হলো। আর শেষ ৯ কার্যদিবসের মধ্যে ৬ কার্যদিবস পুঁজিবাজারে দরপতন হলো।
এর আগে গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারে ব্যাপক দরপতন হয়। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ৬৮টির স্থান হয় দর বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমে ৩০৬টির। আর ২৩টির দর অপরিবর্তিত থাকে। অর্থাৎ দর বাড়ার তুলনায় দর কমার তালিকায় ৪ দশমিক ৫০ গুণ বেশি প্রতিষ্ঠান ছিল। অন্যভাবে বলা যায়, সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৭৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দরপতন হয়।
এ পরিস্থিতিতে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। লেনদেনের প্রথম আধা ঘণ্টা সূচকের ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকে। এরপর দর বাড়ার তালিকা ছোট হতে থাকে এবং লেনদেনের শেষ দেড় ঘণ্টায় ঢালাও দরপতন হয়। এতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচক কমেই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ৩৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দর কমেছে ৩০৭টির। আর ৫০টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।এদিকে ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২৪টির শেয়ারদর বেড়েছে। বিপরীতে ১৭৩টির দাম কমেছে এবং ২২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেয়া ছয়টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ৭০টির দর কমেছে এবং পাঁচটির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে পঁচা ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৯টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬৪টির এবং ২৩টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। আর তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে তিনটির দর বেড়েছে। বিপরীতে ১৮টির দর কমেছে এবং ১৫টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬৮ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৩৮১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২৩ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৮৩ পয়েন্টে নেমে গেছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৯ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৫৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬২১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৬৫৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এ হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৩৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সামিট এলায়েন্স পোর্টের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকার। ১৯ কোটি ১৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফারইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডাইং।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছেÑটেকনো ড্রাগস, ওরিয়ন ইনফিউশন, এনভয় টেক্সটাইল, রবি, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, লাভেলো আইসক্রিম এবং মালেক স্পিনিং।
অন্য পুঁজিবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৩৮ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩২টির দর বেড়েছে। বিপরীতে দর কমেছে ১৬১টির এবং ২১টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১২ কোটি ৫১ লাখ টাকা।