Print Date & Time : 15 November 2025 Saturday 3:58 pm

পুঁজিবাজারে পতনের নতুন রেকর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক : টানা দরপতনের পর গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের পুঁজিবাজারে নেমেছে বড় ধরনের ধস। প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১২২.৬৪ পয়েন্ট কমে দিনশেষে লেনদেন শেষ হয়, যা সাম্প্রতিক সময়ে অন্যতম বড় পতন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এদিন বাজারে ক্রেতার সংকট চরম আকারে পৌঁছেছে। তিন ডজনেরও বেশি কোম্পানির শেয়ার ছিল সম্পূর্ণ ক্রেতাশূন্য। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে; যা বাজারে নতুন করে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করেছে। আর বাজার মূলধন কমেছে ৭ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকার বেশি। তবে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে।

অন্যদিকে দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) ঢালাও দরপতন হয়েছে। দর বাড়ার তুলনায় দর কমার তালিকায় ৬ গুণ বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট থাকায় মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। সেইসঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। এর মাধ্যমে সিএসইতে টানা ১০ কার্যদিবস মূল্যসূচক কমলো।

এদিন ডিএসইতে লেনদেন শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে দর কমার তালিকায় চলে আসে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দরপতনের মাত্রাও বাড়তে থাকে। ফলে ঢালাও দরপতনের সঙ্গে মূল্যসূচকের বড় পতন দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে দর বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ১৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দর কমেছে ৩৫২টির। আর ১৭টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১১টির শেয়ার দর বেড়েছে। বিপরীতে ১৮৮টির দর কমেছে এবং ১০টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেয়া একটি কোম্পানিরও শেয়ার দর বাড়েনি। বিপরীতে ৭৭টির দর কমেছে এবং ২টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেয়ার কারণে ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৪টির শেয়ার দর বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৭টির এবং ৫টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। আর ৩৫টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে একটির দর বেড়েছে। বিপরীতে ২৮টির দর কমেছে এবং ৬টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১২২ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৭০২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২৮ পয়েন্ট কমে ৯৭৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৪৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৫১ পয়েন্টে নেমে গেছে।

এমন দরপতনের ফলে ডিএসইর বাজার মূলধন ৭ হাজার ৯৩৬ কোটি ১১ লাখ টাকা কমে গেছে। আগের দিন ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৮১ হাজার ৯১০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এখন তা কমে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৯৭৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

সবকটি মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৮৩ কোটি ৩৪ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৯০ কোটি ১৩ টাকা। এ হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৯৩ কোটি ২১ লাখ টাকা।

এই লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৮ কোটি ৬২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৬৪ লাখ টাকার। ১১ কোটি ৫৬ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছেÑআনোয়ার গ্যালভানাইজিং, রবি, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, শাহজিবাজার পাওয়ার, লাভেলো আইসক্রিম, মনোস্পুল পেপার এবং সিটি ব্যাংক।

অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২১৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ১৬০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০টির দর বেড়েছে। বিপরীতে দর কমেছে ১৩৬টির এবং ৪টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৭ কোটি ২২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

লেনদেনের পরিসংখ্যান বলছে, এদিন ৩৮৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৫২টির দর কমেছে, মাত্র ১৫টির বেড়েছে এবং ১৭টির দর অপরিবর্তিত ছিল। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা, তারল্য সংকট ও নীতিগত অনিশ্চয়তা এ পতনের প্রধান কারণ। তারা মনে করছেন, যদি দ্রুত আস্থা ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া না হয়, তাহলে বাজার আরও নিম্নমুখী হতে পারে।

ডিএসইর বাজার মূলধনের তথ্যেও দেখা গেছে বড় ধাক্কা। গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৫ হাজার ৫০৯ পয়েন্টের বেশি এবং বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ২৬ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা। অথচ আজ তা নেমে এসেছে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকায়। অর্থাৎ দুই মাসের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা, যা সাম্প্রতিক সময়ে বাজার পতনের গভীরতা স্পষ্ট করে তুলেছে।