Print Date & Time : 17 July 2025 Thursday 1:04 am

পুনর্গঠনের ১০ মাস ২০ হাজার কোটি টাকা আমানত বেড়েছে ইসলামী ব্যাংকে

শেখ শাফায়াত হোসেন : ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ওই বছরের ২৭ আগস্ট ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সময়ে ব্যাংকটির কাছে আমানত গচ্ছিত ছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। এর ১০ মাসের মাথায় (৩০ জুন ২০২৫) ইসলামী ব্যাংকের আমানত বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ আলোচিত ১০ মাসে ব্যাংকটির আমানত বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা।

ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন সূচকের অগ্রগতি নিয়ে তৈরি করা হালনাগাদ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য ওঠে এসেছে। প্রাপ্ত তথ্যে আরও দেখা যায়, আলোচিত ১০ মাসে (আগস্ট-জুন) শরিয়াহভিত্তিক সর্ববৃহৎ এই ব্যাংকে নতুন করে ২৪ লাখ ৩০ হাজার ৬০০। নতুন আমানতপ্রবাহ ছিল ৩২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। তবে এই সময়ে পুরোনো আমানতকারীদের অনেকে এফডিআর ভাঙ্গিয়ে নেয় ১২ হাজার কোটি টাকার মতো। ফলে নিট আমানত ২০ হাজার কোটি টাকা বেড়ে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছায়। নিট আমানত প্রবৃদ্ধি হয় ১৩ শতাংশ।

জুন মাসে ৫ হাজার কোটি টাকা আমানত পায় ইসলামী ব্যাংক। এক মাসে এত বেশি আমানত পাওয়ার নজির এর আগে ছিল না। পুনর্গঠিত শরিয়াভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘গত বছরের ২৭ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাকেসহ একটি পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগ দেয়। তবে বলা হয়, নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ আমাদের কাজ করতে হবে। বসে থাকলে চলবে না।’

তিনি আরও বলেন, ’আমরা কাজ শুরু করার পর তিনটি ধাপে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করি। প্রথম ধাপে আমরা ২০২৪ সালকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের বছর হিসেবে গ্রহণ করি। আমরা এই সময়ে কোনো গ্রাহকের আমানত ফেরত দিতে পারিনি; এমন ঘটনা ঘটেনি।’

চলতি হিসাবের লেনদেন সম্পাদনের জন্য গত জানুয়ারি মাসেও ইসলামী ব্যাংকের আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজার থেকে ২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ধার করে চলতে হয়েছে। গত মে মাসে এই ধারের পরিমাণ কমে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।

বিনিয়োগও বেড়েছে ইসলামী ব্যাংকের। গত বছরের ডিসেম্বরে ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৯ হাজার ৭০ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকটির বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়ে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৮১ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে এস আলম গ্রুপকে দেয়া বিনিয়োগের পরিমাণ ৭৮ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা।

ইসলামী ব্যাংকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, আলোচিত ১০ মাসে বিনিয়োগ ছাড় হয়েছে ৭২ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৬১ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা। জোরপূর্বক বিনিয়োগ দায় সৃষ্টি করা হয়েছে ২৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা।
গত মে মাসে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মনিরুল মওলাকে অপসারণ করা হয়। বর্তমানে ব্যাংকটির ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ওমর ফারুক খানকে। গতকাল সোমবার ওমর ফারুক খানকে এমডির পূর্ণ দায়িত্ব দেয়ার বিষয়ে অনাপত্তিপত্রের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পযন্ত নতুন করে ৩ হাজার ৪৮৬টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ২১৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ মঞ্জুর করেছে ইসলামী ব্যাংক। ৫১টি গ্রাহকের অনুকূলে ১৩৪ কোটি টাকার বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২৪ হাজার ২৬টি প্রতিষ্ঠানের ২৮ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকার বিনিয়োগ নবায়ন করেছে ব্যাংকটি।

ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে গত বছরের আগস্ট থেকে জুন পর্যন্ত রপ্তানি আয় দেশে এসেছে ২৪৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আমদানি সংক্রান্ত লেনদেন হয়েছে ৪৭৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
গত জুন পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের পল্লী উন্নয়ন স্কিমের আওতায় ৩৪ হাজার ৯৭৯টি গ্রামে ৬১ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। ১৭ লাখ ৪৫ হাজার সদস্য এই বিনিয়োগ পেয়েছে। এই বিনিয়োগের বর্তমান স্থিতি ৬ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা।

ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের আগস্ট থেকে গত ৯ জুলাই পর্যন্ত ২৭টি পর্ষদ সভা করেছে ইসলামী ব্যাংক। নির্বাহী কমিটি সভা করেছে ২৫টি। হিসাবসংক্রান্ত কমিটি সভা করেছে ২৩টি। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়েছে ১০টি। এই সভাগুলোতে এক হাজারেরও বেশি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

অতীতে অনিয়মকারীদের সঙ্গে আঁতাত ছিল এমন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থাও নিতে হয়েছে ব্যাংকটির পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদকে। ৯ জন কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বরখাস্ত করা হয়েছে ২৪ জনকে। অভিযোগ গঠন করা হয়েছে ৭১ জনের বিরুদ্ধে। ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে ১৯২জন কর্মকর্তাকে।

আলোচিত ১০ মাসে চেক জালিয়াতির জন্য হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনে ৩৬৮টি মামলা করেছে ইসলামী ব্যাংক। খেলাপির দায়ে অর্থঋণ আদালতে ২৪টি মামলা করা হয়েছে। ফৌজদারি আইনে মামলা করা হয়েছে ১৫টি। এছাড়া আরও ৮টি মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে। এই ঘটনাগুলোয় ২৬ হাজার ১২০ কোটি টাকার বিনিয়োগ খেলাপি হয়ে আছে ব্যাংকটির।

আরআর/