শেয়ার বিজ ডেস্ক : যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন গ্রুপের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় লন্ডন পুলিশ ৪২৫ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। খবর: আল জাজিরা।
গত শনিবারের এই বিক্ষোভের আয়োজক ‘ডিফেন্ড আওয়ার জুরিস’ জানিয়েছে, প্রায় ১ হাজার ৫০০ মানুষ লন্ডনে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের বাইরে এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল। তারা সন্ত্রাসবাদ আইনের অধীনে গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকি নিয়েছিল।
ডিফেন্ড আওয়ার জুরিস এক্স-এ একটি ভিডিওসহ পোস্ট করেছে, যেখানে সংঘর্ষের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তাতে লেখা হয়েছে, পুলিশ নির্মমভাবে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করে মাটিতে ফেলে দিয়েছে। শুধু প্ল্যাকার্ড ধরে থাকার জন্য তারা অন্যদের গ্রেপ্তার করেছে, যেখানে লেখা ছিল—‘আমি গণহত্যার বিরোধিতা করি, আমি প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সমর্থন করি।’
যুক্তরাজ্যের সংবাদ সংস্থা প্রেস অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, সংঘর্ষের সময় পুলিশ লাঠি ব্যবহার করে এবং একজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তারের পর একটি ব্যারিকেডের পেছনে মুখ থেকে রক্ত ঝরতে দেখা গেছে।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে চিৎকার করে তর্ক করেছে এবং তাদের দিকে পানি ও প্লাস্টিকের বোতল নিক্ষেপ করা হয়েছে, যখন একপর্যায়ে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী ভিড়ের চাপে পড়ে যান।
লন্ডনস মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর হামলা এবং একটি নিষিদ্ধ সংগঠনের প্রতি সমর্থন প্রকাশসহ বিভিন্ন অপরাধের জন্য ৪২৫ জনেরও বেশি লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিক্ষোভে নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তারা শারীরিক ও মৌখিক আক্রমণের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ঘুসি, লাথি ও থুতু নিক্ষেপ এবং বস্তু ছোড়া অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
গত জুলাই মাসে ‘সন্ত্রাসবাদ আইন ২০০০’-এর অধীনে প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে নিষিদ্ধ করার যুক্তরাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবাদগুলোর মধ্যে সর্বশেষ ঘটনা এটি।
লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, তাদের ওপর হামলা, পুলিশকে ঘুসি মারা, লাথি মারা, থুতু নিক্ষেপ, পানি ও বোতল ছোড়াসহ নানা অভিযোগে মোট ৪২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত জুলাইয়ে যুক্তরাজ্য সরকার ‘টেররিজম অ্যাক্ট ২০০০’-এর আওতায় প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এর আগে সংগঠনের সদস্যরা দক্ষিণ ইংল্যান্ডের একটি বিমানঘাঁটিতে প্রবেশ করে দুটি যুদ্ধবিমানে প্রায় ৭০ লাখ পাউন্ড সমপরিমাণ ক্ষতি করেছিল।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এভাবে গ্রেপ্তার ও সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের কর্মকর্তা কেরি মস্কোগিউরি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে বসে প্রতিবাদ করার জন্য মানুষকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার করা হলে বুঝতে হবে যুক্তরাজ্যে কিছু একটা ভয়াবহ ভুল হচ্ছে।
এর আগে গত আগস্টে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভে রেকর্ড ৫৩২ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
এদিকে গাজায় গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে লন্ডন ও মরক্কোর পাশাপাশি এবার সুইডেন ও ফ্রান্সেও হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠনগুলোর আহ্বানে সাড়া দিয়ে শত শত বিক্ষোভকারী ওডেনপ্ল্যান স্কোয়ারে জড়ো হয়েছেন।
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ বন্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিক্ষোভকারীরা সুইডিশ সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন। অপরদিকে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী প্লেস দ্য লা রিপাবলিকের সামনে জড়ো হয়ে ফিলিস্তিনি পতাকা উড়িয়ে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে গাজা সিটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বহুতল ভবনটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। চলমান যুদ্ধে কাছাকাছি সময়ের মধ্যে প্রথম বড় কোনো টাওয়ারকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করল আইডিএফ।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ তার এক্স অ্যাকাউন্টে ভবনটি ধসে পড়ার একটি ভিডিও প্রকাশ করে ক্যাপশনে লিখেছেন—‘আমরা হামলা চালিয়ে যাচ্ছি।’

Discussion about this post