নিজস্ব প্রতিবেদক : বর্তমান প্রশাসন সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন পে স্কেলে ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী কাঠামো নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বাংলাদেশ সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এবং সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির দুটি পৃথক সভার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গতকাল বুধবার এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন বেতন কাঠামো এখনই কার্যকর করতে পারছি না। তবে পরবর্তী ধাপের জন্য একটি স্পষ্ট এবং ধারাবাহিক সিস্টেম প্রস্তুত করতে কাজ করছি। নতুন বেতন কাঠামোর প্রক্রিয়ায় বেশ কয়েকটি স্বাধীন কমিশন এবং প্রশাসনিক অনুমোদনের বহু স্তর রয়েছে।’
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘পে কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে, সরকারের সরাসরি কোনো হস্তক্ষেপ নেই।’
তিনি ব্যাখ্যা করেন, পে কমিশনের কাজ অত্যন্ত জটিল ও স্বাধীন। এর সুপারিশ নির্ধারণে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। পৃথকভাবে একটি সিভিল পে কমিশন এবং একটি সশস্ত্র বাহিনী পে কমিশন কাজ করছে। তিনটি রিপোর্ট জমা হলে সেগুলোকে মিলিয়ে ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে হবে, তারপরই তা বাস্তবায়ন শুরু করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, ‘এই সমন্বয়সাধন প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ, কারণ এটি কয়েকটি পর্যায়ের সমীক্ষা ও পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে যাবে।’
ড. সালেহউদ্দিন জানান, রিপোর্ট পাওয়ার পর সরকারকে সেগুলো মিলিয়ে দেখতে হবে। এরপর সচিব-স্তরের কমিটি এবং পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগ পর্যালোচনা করবে। এই ধাপগুলো সম্পন্ন হওয়ার পরই বাস্তবায়নের বিষয়টি বিবেচনা করা সম্ভব।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের মেয়াদে এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব নাও হতে পারে। এই কারণেই আমি বলেছি, কিছু অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে আমরা এমন একটি সম্পূর্ণ কাঠামো ও সেটআপ তৈরি করার চেষ্টা করছি, যাতে পরবর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে।’
সরকারি কর্মচারীদের ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি প্রায় আট বছর ধরে হয়নি। এত দীর্ঘ বিরতির পর আমরা নিজ উদ্যোগে এই পদক্ষেপ নিয়েছি। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি এবং কর্মচারীদের এটিকে মূল্যায়ন করা উচিত। আমরা অলস বসে নেই; নতুন কাঠামোর ভিত্তি স্থাপনের জন্য কাজ করছি। সরকার সরকারি কর্মচারীদের প্রত্যাশার বিষয়ে সচেতন, তবে প্রক্রিয়াটি অবশ্যই প্রশাসনিক ও আর্থিক শৃঙ্খলার মধ্যে সম্পন্ন হতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মোট বাজেটের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করতে হবে। বেতন সমন্বয় একমাত্র অগ্রাধিকার নয়। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অন্যান্য উন্নয়ন খাতের জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।’
ড. সালেহউদ্দিন আরও আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার পে কমিশনের রিপোর্টগুলোকে যথাযথ গুরুত্বসহ বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বলেন, ‘কমিশনগুলো স্বাধীনভাবে এবং মনোযোগের সঙ্গে কাজ করছে। রিপোর্ট প্রস্তুত হলে আমি বিশ্বাস করি, পরবর্তী সরকার সেগুলোর ওপর যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নেবে।’
আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করাই এখন সরকারের মূল লক্ষ্য বলে উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, ‘সরকারের বর্তমান প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা এবং এর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে বাজেট এমনভাবে বাস্তবায়ন করা, যাতে দক্ষতা ও অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হয়। প্রয়োজনে কিছু সংখ্যা পুনঃসমন্বয় করতে হলেও বাজেটের মৌলিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অপরিবর্তিত থাকবে।’
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা অর্থবছরের শেষে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) কতটা সমন্বয় প্রয়োজন এবং গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না করে কোন খাতে ব্যয় সাশ্রয় করা সম্ভব, তা মূল্যায়ন করব। সরকার অবকাঠামো, কৃষি, সামাজিক সুরক্ষাসহ প্রধান খাতগুলোতে সরকারি বিনিয়োগ টিকিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর, একই সঙ্গে উদীয়মান আর্থিক চাপগুলোও সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করছে।’
তিনি আরও জানান, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় একাধিক আর্থিক ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ দেখা দেয়ায় সরকার জাতীয় বাজেট ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) কিছুটা কাটছাঁট করার বিষয়টি বিবেচনা করছে।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কিছু কার্যক্রমে সাময়িক স্থবিরতা দেখা দেয়ায় রাজস্ব আদায়ে ব্যাঘাত ঘটেছে, যা সরকারের আর্থিক অবস্থায় প্রভাব ফেলেছে।’
ড. সালেহউদ্দিন ব্যাখ্যা করেন, ‘এনবিআরের নির্দিষ্ট কিছু কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ থাকায় রাজস্ব প্রবাহে প্রভাব পড়েছে, এ কারণেই আমরা ব্যয় পরিকল্পনা পুনর্মূল্যায়ন করছি।’
তিনি আরও বলেন, রাজস্ব খাত ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার বাস্তবায়ন কর্মক্ষমতায় বৈষম্য দেখা গেছে। তবে এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ড. সালেহউদ্দিন আশ্বস্ত করেন যে, বাজেট সমন্বয় কোনো বড় ধরনের বা হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না। আমরা কোনো বড় বা ব্যাপক কাটছাঁটের পরিকল্পনা করছি না। বাজেট ও এডিপির সামগ্রিক আকারে সামান্য পরিবর্তন হতে পারে, তবে মূল কাঠামোতে কোনো মৌলিক পরিবর্তন হবে না।’
অর্থ উপদেষ্টা আরও জানান, দুটি প্রধান সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকÑঅর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতির প্রক্ষেপণ ইতোমধ্যে হালনাগাদ করা হয়েছে, যাতে পরিবর্তিত বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়।
প্রিন্ট করুন










Discussion about this post