Print Date & Time : 23 September 2025 Tuesday 4:40 am

পোশাক রপ্তানিতে বড় সম্ভাবনা জাপানে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০২৪ সালে জাপানে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১.২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশটির মোট পোশাক আমদানির মাত্র ৫.৫০ শতাংশ। গত রোববার ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের (আইটিসি) প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে জাপান বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ২২.৮৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করে। এর মধ্যে নিট পোশাক আমদানি হয়েছে ১১.৮৬ বিলিয়ন ডলারের, যেখানে বাংলাদেশের অংশ ৬৩৩ মিলিয়ন ডলারÑমোট নিট পোশাকের ৫.৩৪ শতাংশ।

অন্যদিকে ওভেন পোশাক আমদানি হয়েছে ১০.৯৯ বিলিয়ন ডলারের; এর মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ৬২৩ মিলিয়ন ডলারÑযা ৫.৬৮ শতাংশ।

বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, এ পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে যে জাপানে আমাদের রপ্তানির বিশাল সম্ভাবনা এখনও অপ্রতিফলিত। জাপান একটি মান-সচেতন ও ফ্যাশনপ্রবণ বাজার, যেখানে উচ্চ মূল্যের পণ্য বিক্রির সুযোগ অনেক বেশি।

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হলে আমাদের জাপানের মতো অপ্রচলিত ও সম্ভাবনাময় বাজারগুলোয় নজর দিতে হবে। এই বাজারগুলোয় প্রবেশ আমাদের জন্য নতুন প্রবৃদ্ধির দ্বার খুলে দিতে পারে।

বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির প্রধান দুটি গন্তব্য হলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে দেশের প্রায় ২০ শতাংশ পোশাক রপ্তানি হয়, আর ইইউ বাজারে রপ্তানি হয় প্রায় ৫০ শতাংশ। বাকি ৩০ শতাংশ রপ্তানি হয় বিভিন্ন অপ্রচলিত বাজারে, যার মধ্যে জাপান অন্যতম।

গত জুন মাসের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে নতুন গন্তব্যে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়েছে। বিশেষ করে জাপান ও ভারতের বাজারে এ প্রবৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো ছিল। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে মেÑএই ১১ মাসে অপ্রচলিত বাজারগুলোয় মোট ৬০৪ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেশি।

রপ্তানির এই নতুন গন্তব্যগুলোর মধ্যে শীর্ষে ছিল জাপান, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে জাপান ও ভারতে, যথাক্রমে ১০ ও ১৭ শতাংশ। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি বেড়েছে সামান্য ২ শতাংশ, আর রাশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানিতে কিছুটা কম ছিল।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে দেশের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৫৬ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি। ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার মতো প্রচলিত বাজারগুলোতেও রপ্তানি বেড়েছে।

অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে জাপান শীর্ষে। দেশটিতে ১১২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি। অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি হয়েছে ৭৬ কোটি ডলারের, মাত্র ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা রাশিয়ায় রপ্তানি ৩১ কোটি ডলার, যা গত বছরের তুলনায় সাড়ে ৯ শতাংশ কম। ভারতে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি হলেও সম্প্রতি ভারত সরকারের একটি নিষেধাজ্ঞা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রপ্তানিকারকরা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে ৬১ কোটি ডলারের পোশাক, যা আগের বছরের তুলনায় ১৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি। অথচ মাসখানেক আগে ভারতের স্থলপথে পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন শুধু নব সেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করেই রপ্তানি করতে পারবে বাংলাদেশ।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে প্রতিবেশী ভারতে ৬১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে; যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে দেশটিতে ৫৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। তার আগের অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৬৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক।

ভারতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেলেও বাজারটিতে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন দেশের রপ্তানিকারকরা। এর কারণ হলো, গত মাসে স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত সরকার। সে অনুযায়ী শুধু ভারতের নব সেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, স্থলবন্দর ব্যবহার করে সাত দিনের মধ্যে পণ্য পাঠানো যেত। এখন সমুদ্রপথে সময় লাগছে ১৫ থেকে ২১ দিন। ফলে ভারতীয় আমদানিকারকরা আগ্রহ হারাচ্ছেন।

সব মিলিয়ে, জাপান ও ভারতের বাজারে বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানির ঊর্ধ্বগতি উৎসাহজনক হলেও ভারত সরকারের নতুন নীতির কারণে ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি কিছুটা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, জাপানে পোশাক রপ্তানির এই সীমিত অংশবিশেষ বাংলাদেশের জন্য একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জ, তেমনি বিশাল সম্ভাবনার ইঙ্গিত বহন করে। মানসম্পন্ন ও বৈচিত্র্যময় পণ্যের মাধ্যমে এ বাজারে আরও বড় পরিসরে প্রবেশ সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।