বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫
১১ ভাদ্র ১৪৩২ | ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭
  • ♦ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শেয়ার বিজ
  • ☗
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • সারা বাংলা
  • পত্রিকা
    • প্রথম পাতা
    • শেষ পাতা
    • পুঁজিবাজার
    • সম্পাদকীয়
    • ফিচার
  • রাজনীতি
  • তথ্য-প্রযুক্তি
  • স্পোর্টস
  • বিনোদন
  • শিক্ষা
  • স্বাস্থ্য
  • অর্থ ও বাণিজ্য
    • করপোরেট কর্নার
    • মূল্য সংবেদনশীল তথ্য
  • ফটো গ্যালারি
  • পুরনো নিউজ
➔ ই-পেপার
No Result
View All Result
  • ☗
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • সারা বাংলা
  • পত্রিকা
    • প্রথম পাতা
    • শেষ পাতা
    • পুঁজিবাজার
    • সম্পাদকীয়
    • ফিচার
  • রাজনীতি
  • তথ্য-প্রযুক্তি
  • স্পোর্টস
  • বিনোদন
  • শিক্ষা
  • স্বাস্থ্য
  • অর্থ ও বাণিজ্য
    • করপোরেট কর্নার
    • মূল্য সংবেদনশীল তথ্য
  • ফটো গ্যালারি
  • পুরনো নিউজ
No Result
View All Result
শেয়ার বিজ
No Result
View All Result

প্রকৃতির আলিঙ্গন থেকে ডিজিটাল আবর্তে: আধুনিক জীবনের নতুন উপাখ্যান

Share Biz News Share Biz News
বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫.১২:০৩ পূর্বাহ্ণ
বিভাগ - পত্রিকা, সম্পাদকীয় ➔ প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন
A A
প্রকৃতির আলিঙ্গন থেকে ডিজিটাল আবর্তে: আধুনিক জীবনের নতুন উপাখ্যান
10
VIEWS
Share on FacebookShare on TwitterShare on Linkedin

 ড. মতিউর রহমান : বিখ্যাত ডেনিশ লেখক হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসেন একবার বলেছিলেন, শুধু বেঁচে থাকা যথেষ্ট নয়। সূর্যের আলো, স্বাধীনতা এবং একটি ছোট্ট ফুল থাকা আবশ্যক।” এই অসাধারণ উক্তিটি আমাদের জীবনে প্রকৃতির গুরুত্বের কথাই তুলে ধরে।

আমরা যদি একটু চারপাশে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব যে প্রকৃতি আমাদের জন্য কী অপার সৌন্দর্য ছড়িয়ে রেখেছে—যেমন ফুল, হ্রদ, পাখি, গাছ এবং পাহাড়। প্রকৃতির এই দান অপরিশোধ্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমরা নিজেদের বস্তুবাদী স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করে চলেছি।

আমরা ভুলে যাই, প্রকৃতি আমাদের পরম বন্ধু, দার্শনিক এবং পথপ্রদর্শক। এই অনুভূতি একজন মহান ইংরেজ রোমান্টিক কবি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের কবিতার মতোই শোনায়, যেখানে তিনি প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে এক গভীর আত্মিক সংযোগের কথা বলেছেন।

আজকের যুগে প্রযুক্তি আমাদের যান্ত্রিক জীবনযাপনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। আমরা সবখানেই প্রযুক্তির সঙ্গে আটকে আছি—হাতে সেলফোন, সামনে ল্যাপটপ, মন ডুবে আছে ইন্টারনেট আর সোশ্যাল নেটওয়ার্কে। প্রযুক্তির এই অতিরিক্ত ব্যবহার লাখ লাখ মানুষের মধ্যে হতাশা ও নানা ধরনের মানসিক অসুস্থতা বাড়িয়ে তুলছে। এ কারণে আমাদের চারপাশের অনেক তরুণ হতাশার শিকার হচ্ছে।

আমাদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রযুক্তি থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্নতা এখন অপরিহার্য। সোশ্যাল মিডিয়া, মোবাইল গেম, ইউটিউব এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা আমাদের মানবিক অনুভূতি থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। আজকের বিশ্বে সোশ্যাল মিডিয়া নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এটিই জীবনের সবকিছু নয়।

একবিংশ শতাব্দীতে রাজনৈতিক অংশগ্রহণের পদ্ধতিতে একটি গভীর পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোয়, যেখানে প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রায়ই নিয়ন্ত্রিত এবং তরুণদের জন্য সহজলভ্য নয়, সেখানে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো প্রতিবাদ, আলোচনা এবং নতুন পরিচয় তৈরির বিকল্প ক্ষেত্র হিসেবে উঠে এসেছে।

স্মার্টফোন এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেটের যুগে বেড়ে ওঠা জেনারেশন জেডের রাজনৈতিক সচেতনতা এখন আর কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্যপদ বা আদর্শিক বিতর্কের ওপর নির্ভর করে না। বরং এটি গড়ে ওঠে লাইক, শেয়ার, ট্রেন্ডিং হ্যাশট্যাগ এবং ভাইরাল কন্টেন্টের মাধ্যমে।

এই নতুন ধরনের অংশগ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি করে: রাজনৈতিক মতপ্রকাশের এই ডিজিটাল দৃশ্যমানতা কি সত্যিই কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে পারে? নাকি এটি যে ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে চাইছে, সেই ব্যবস্থার মধ্যেই আটকে পড়ছে? জেনারেশন জেডের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কি প্রকৃত সংহতি তৈরি করছে, নাকি এটি কেবল এমন একটি পণ্য, যা অ্যালগরিদম দ্বারা সংগ্রহ এবং নজরদারি করা রাষ্ট্র দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে?

জিজি পাপাচারিসির আবেগপ্রবণ জনসাধারণ ধারণাটি এই পরিবর্তনকে বোঝার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তাত্ত্বিক কাঠামো দেয়। হাবারমাসের মতো প্রথাগত ধারণায়, গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের ভিত্তি ছিল যুক্তিসঙ্গত বিতর্ক ও যুক্তি। সংবাদপত্র, সংসদ এবং টাউন হলের মতো জায়গাগুলো এই ধরনের আলোচনার জন্য আদর্শ স্থান হিসেবে বিবেচিত হতো।

কিন্তু পাপাচারিসি মনে করেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের যুগে আবেগই প্রধান উপাদানে পরিণত হয়েছে। এখানে আবেগ শুধু ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া নয়, বরং এক ধরনের সামাজিক আঠা হিসেবে কাজ করে। এই ‘আঠা’ অস্থায়ীভাবে হলেও অনেক মানুষকে তীব্র আবেগের বন্ধনে আবদ্ধ করে।

যেমন #JusticeForStudents বা #RoadSafetyInBD-এর মতো হ্যাশট্যাগগুলো কেবল কোনো কিছু করার জন্য আহ্বান জানায় না, বরং আবেগগত চিহ্ন হিসেবে কাজ করে। এগুলো একই ধরনের অনুভূতি প্রকাশ করে এবং তার মাধ্যমে একাত্মতার জন্ম দেয়।

বাংলাদেশে বিশেষ করে ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার বিক্ষোভের সময় ফেসবুক এবং ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো শুধু যোগাযোগের মাধ্যম ছিল না, বরং সেগুলো আবেগের ইনকিউবেটর হিসেবে কাজ করেছে।

এই প্ল্যাটফর্মগুলোয় রাগ, শোক, ব্যঙ্গ এবং আশার মতো নানা ধরনের আবেগ মিম (meme), লাইভ ভিডিও এবং ব্যবহারকারীদের তৈরি করা কন্টেন্টের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। এভাবেই ব্যক্তিগত অনুভূতিগুলো সম্মিলিত শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে।

এই আবেগপূর্ণ প্রবাহ কিন্তু কোনো এলোমেলো ঘটনা নয়। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহারকারীদের ব্যস্ততা বাড়াতে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যেখানে আবেগপূর্ণ বিষয়বস্তু, বিশেষ করে রাগ এবং ক্ষোভকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। কারণ এ ধরনের কন্টেন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং বেশি মিথস্ক্রিয়া তৈরি করে। তাই বলা যায়, ডিজিটাল প্রতিবাদগুলো সুনির্দিষ্ট কোনো দাবির কারণে নয়, বরং আবেগগত বিস্তারের মাধ্যমে গতি লাভ করে।

ম্যানুয়েল ক্যাসেলসের নেটওয়ার্ক সমাজের তত্ত্বও এ বিষয়টিকে বোঝার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে। ক্যাসেলসের মতে, বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ক্ষমতা কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রবাহিত হয় না, বরং তা প্রবাহিত হয় নেটওয়ার্কের মাধ্যমে।

তথ্য প্রবাহকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা একটি সমাজে প্রথাগত কাঠামো তার গুরুত্ব হারায় এবং ডিজিটাল নেটওয়ার্কগুলো পরিচয় গঠন ও রাজনৈতিক সংহতির মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। ক্যাসেলসের ভাষায়, ‘গণ-স্ব-যোগাযোগ’—যেখানে ব্যক্তিরা স্বাধীনভাবে কন্টেন্ট তৈরি ও বিতরণ করতে পারে—ক্ষমতার এক নতুন রূপ ধারণ করে।

বাংলাদেশে এর বাস্তব রূপ দেখা যায়, যখন ছাত্র আন্দোলনকারীরা মূলধারার গণমাধ্যমকে এড়িয়ে সরাসরি প্রতিবাদের লাইভ স্ট্রিমিং করে, পুলিশের সহিংসতার ঘটনা নথিবদ্ধ করে এবং সমর্থকদের একত্র করে। ২০২৪ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় ফেসবুক গ্রুপগুলো সাংগঠনিক সদর দপ্তরের মতো কাজ করেছিল, মিমগুলো আদর্শিক হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল এবং ইনস্টাগ্রাম স্টোরিগুলো আপডেট বা তাৎক্ষণিক খবর সরবরাহ করেছিল।

এই ধরনের নেটওয়ার্কভিত্তিক সংগঠনগুলো নমনীয়তা, গতি এবং বিস্তৃতি দিলেও এদের স্থায়িত্বের অভাব রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী সংগঠনগুলোর মতো এদের কোনো সুস্পষ্ট নেতৃত্ব কাঠামো বা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকে না। এই আন্দোলনগুলো প্রায়ই স্বতঃস্ফূর্ত ও ক্ষণস্থায়ী হয়। ডিজিটাল অবকাঠামোর ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার কারণে এগুলো অ্যালগরিদমের মাধ্যমে দমিয়ে রাখা, ভুল তথ্যের বিস্তার এবং রাষ্ট্রীয় নজরদারির ঝুঁকিতে থাকে।

এ ধরনের নজরদারির শীতল প্রভাব অত্যন্ত স্পষ্ট। তরুণ আন্দোলনকারীরা এখন নিজেদের মধ্যে আত্ম-সেন্সরশিপ বৃদ্ধির কথা বলছেন। প্রতিশোধের ভয়ে তারা রাজনৈতিক বিষয়বস্তু পোস্ট করা থেকে বিরত থাকছেন বা পুরোনো পোস্ট মুছে ফেলছেন। ফলে এক অদ্ভুত বৈপরীত্য তৈরি হয়েছে: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো যেখানে অভূতপূর্ব নাগাল ও দৃশ্যমানতা এনেছে, সেখানেই তারা ভয় এবং দ্বিধার পরিবেশও সৃষ্টি করেছে। এখানে প্রতিবাদ একই সঙ্গে শক্তিশালী হয় আবার দমনও করা হয়।

সম্ভবত সবচেয়ে প্রতারণাপূর্ণ বিষয়টি হলো আবেগের বাণিজ্যিকীকরণ। ডিজিটাল পুঁজিবাদের যুক্তিতে, আবেগ হলো তথ্য, আর তথ্য মানেই লাভ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজনৈতিক অংশগ্রহণের যে আবেগগত তীব্রতা রয়েছে, বিজ্ঞাপনের লাভও সেই একই তীব্রতা দিয়ে চালিত হয়।

এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক ক্ষোভ বা সংহতির সবচেয়ে আন্তরিক প্রকাশও বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে রূপান্তরিত হয়। সরকারি দুর্নীতির সমালোচনা করা একটি ভিডিও হয়তো সচেতনতা বাড়াতে পারে, কিন্তু একই সঙ্গে এটি ক্লিক, ব্যস্ততা এবং মুনাফাযোগ্য ট্র্যাফিকও তৈরি করে। আন্দোলনকারীরা নিজেদের একটি দ্বৈত অর্থনীতির ফাঁদে আটকা দেখতে পায়—যেখানে তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এবং একই সঙ্গে সেই প্ল্যাটফর্মগুলোকেও লাভবান করে, যারা তাদের প্রতিবাদ থেকে মুনাফা লাভ করে।

এছাড়া ইনফ্লুয়েন্সার সংস্কৃতি সক্রিয়তা এবং বিনোদনের মধ্যেকার রেখাকে ঝাপসা করে দিয়েছে। এখন রাজনৈতিক বিষয়গুলোকেও স্টাইলাইজড এবং ভাইরাল হওয়ার উপযোগী করে তৈরি করা হয়। ফলে প্রতিবাদ এক ধরনের নান্দনিকতা পায়—হ্যাশট্যাগগুলো বিক্রি হয়, স্লোগানগুলো রিলে পরিণত হয় এবং ভিন্নমতকে নতুন করে কন্টেন্ট হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।

এতে সচেতনতা বাড়লেও, এর মাধ্যমে সক্রিয়তার মূল রাজনৈতিক বিষয়বস্তু দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ফলে এটি রূপান্তরমূলক শক্তির পরিবর্তে একটি কার্যকরী অনুশীলনে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে। আমি এই প্রক্রিয়াকে ‘পারফরম্যান্স অ্যাক্টিভিজম’ বলি—যেখানে মূল লক্ষ্য কাঠামোগত পরিবর্তন নয়, বরং দৃশ্যমানতা।

এখানে আসল বিপদ শুধু রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাওয়া নয়, বরং সহ-অন্তর্ভুক্তি। যখন রাজনৈতিক বার্তাগুলো পণ্যে রূপান্তরিত হয়, তখন তাদের মৌলিক ক্ষমতা সেই ব্যবস্থার দ্বারাই শোষিত হয়, যার সমালোচনা তারা করতে চায়।

এই সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, বাংলাদেশে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে চালানো আন্দোলনগুলো বাস্তবজীবনে বড় প্রভাব ফেলেছে। সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার প্রতিবাদে ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল এবং দীর্ঘ সময় ধরে টিকে ছিল।

এই আন্দোলনের সময় হ্যাশট্যাগগুলো কয়েক সপ্তাহ ধরে ট্রেন্ডিং হয়েছিল, ফেসবুক লাইভ-এ পুলিশের বর্বরতার দৃশ্য সরাসরি দেখানো হয়েছিল এবং টুইটার থ্রেডগুলোতে আন্দোলনের দাবিগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছিল। এখানে ডিজিটাল মাধ্যমগুলো কেবল প্রতীকী ছিল না, বরং খুবই কার্যকরী ছিল। এই মাধ্যমগুলোর সাহায্যেই দ্রুত জনসমাবেশ করা, গণসচেতনতা ধরে রাখা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আকর্ষণ করা সম্ভব হয়েছিল।

শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে সুনির্দিষ্ট কৌশল অনুসারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি, ফ্ল্যাশ মব এবং অন্যান্য প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজন করেছিল। এই সময়, রাষ্ট্রের কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে ঐতিহ্যবাহী গণমাধ্যমগুলো প্রায়ই পিছিয়ে ছিল, কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো দ্রুততার সঙ্গে সব খবর মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছিল।

এ ঘটনাটি প্রমাণ করে যে ডিজিটাল আন্দোলন যখন বাস্তবজীবনের পদক্ষেপ এবং সুচিন্তিত পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন তা উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এখানে প্ল্যাটফর্মটি গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং তার ব্যবহার পদ্ধতিই মূল বিষয়।

যখন ডিজিটাল মাধ্যমে তৈরি হওয়া ক্ষোভ বাস্তবে প্রতিবাদের রূপ নেয়, যখন আবেগপ্রবণ জনতা একটি রাজনৈতিক জনসমাজে পরিণত হয়, তখনই প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব হয়।

মূল পার্থক্যটি নিহিত থাকে অংশগ্রহণের ধরনে। একজন ব্যবহারকারী কি কেবল একজন ‘ডিজিটাল দর্শক’? যিনি কোনো বিষয়ে গভীরভাবে যুক্ত না হয়ে শুধু বিষয়বস্তু দেখেন এবং তাতে প্রতিক্রিয়া জানান? নাকি তিনি একজন ‘নেটওয়ার্কযুক্ত নাগরিক’? যিনি ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে বাস্তব জগতে সংযোগ স্থাপন, সংগঠিত হওয়া এবং পদক্ষেপ নেয়ার মতো কাজগুলো করেন?

ডিজিটাল দর্শকত্ব এক ধরনের নিষ্ক্রিয় অংশগ্রহণ। এটি লাইক, শেয়ার এবং ভাইরাল হওয়ার মাধ্যমে একটি প্রতিবাদের illusion বা মায়া তৈরি করে, যা শেষ পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

অন্যদিকে, নেটওয়ার্কযুক্ত নাগরিকত্ব একটি সক্রিয় ধারণা। এটি জোট গঠন করে, বিদ্যমান কাঠামোর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানায় এবং নীতিগত পরিবর্তনের লক্ষ্য রাখে। এই ধরনের নাগরিকেরা ডিজিটাল মাধ্যমকে একটি লক্ষ্য হিসেবে নয়, বরং প্রতিবাদের একটি বৃহত্তর কৌশলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।

এভাবেই বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী তরুণ প্রজন্ম এক জটিল জালে আবদ্ধ। এই জালে রয়েছে আবেগপ্রবণ রাজনীতি, অ্যালগরিদমিক নিয়ন্ত্রণ, নজরদারি এবং বাণিজ্যিকীকরণের মতো বিষয়গুলো। তাদের প্রতিটি কর্মকাণ্ড এই গতিশীলতার ওপর নির্ভরশীল এবং একই সঙ্গে এটি পরিবর্তনও করে।

কাজটি তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে প্রত্যাখ্যান করা নয়, বরং এটিকে নিজেদের প্রয়োজনে পুনরুদ্ধার করা। অর্থাৎ এই মাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ থেকে এটিকে মুক্ত করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি হাতিয়ার হিসেবে এর সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো।

ডিজিটাল আন্দোলনকে সত্যিকার অর্থে রূপান্তরমূলক করতে হলে, একে একটি নতুন ধরনের রাজনৈতিক ভাষা তৈরি করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন আবেগগত সাক্ষরতা—অর্থাৎ আবেগের প্রভাব বোঝা এবং সেগুলোকে কৌশলগতভাবে কাজে লাগানো। একই সঙ্গে প্রয়োজন মিডিয়া সাক্ষরতা—অ্যালগরিদমের কারসাজি এবং ভুল তথ্য চিহ্নিত করার দক্ষতা। পাশাপাশি, প্রয়োজন রাজনৈতিক সাক্ষরতা—দাবিগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরা, জোট গঠন করা এবং দীর্ঘ সময় ধরে চাপ বজায় রাখার ক্ষমতা।

এর জন্য কিছু প্রাতিষ্ঠানিক উদ্ভাবনও দরকার। এই ডিজিটাল আন্দোলনগুলোকে ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের মতো কঠোর শ্রেণিবিন্যাস অনুসরণ না করে ধারাবাহিকতা, জবাবদিহিতা এবং একটি নির্দিষ্ট কাঠামো তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে এমন হাইব্রিড মডেল কার্যকর হতে পারে, যেখানে ডিজিটাল নেটওয়ার্কগুলো অফলাইন বা মাঠ পর্যায়ের সংগঠনকে সহযোগিতা করবে, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নেতার পরিবর্তে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবেন এবং আন্দোলনগুলো ক্ষণস্থায়ী ভাইরাল মুহূর্তের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য পূরণে বেশি গুরুত্ব দেবে।

সবশেষে, এর জন্য প্রয়োজন নৈতিক স্বচ্ছতা। এমন একটি পৃথিবীতে যেখানে প্রতিটি ক্লিককে পণ্যে রূপান্তর করা হয় এবং প্রতিটি কণ্ঠস্বরের ওপর নজরদারি করা হয়, সেখানে ক্ষমতার বিরুদ্ধে সত্য কথা বলার কাজটি তা অনলাইনে হোক বা অফলাইনে—অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও সাহসিকতার বিষয়। তরুণদের কেবল ডিজিটাল সরঞ্জাম দিলেই হবে না, বরং তাদের সাহস, দূরদর্শিতা এবং নৈতিক দৃঢ়তা দিয়েও সজ্জিত করতে হবে।

বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী প্রজন্ম আজ এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। তারা কেবল কোনো কিছু তৈরি বা নিষ্ক্রিয়ভাবে উপভোগকারী নয়, বরং একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির সম্ভাব্য স্থপতি।

তবে এই সম্ভাবনা তখনই বাস্তবে পরিণত হবে, যখন তারা কেবল প্রদর্শনীর বাইরে গিয়ে আসল বিষয়ের দিকে মনোযোগ দেবে এবং কেবল প্রভাব তৈরির পরিবর্তে প্রকৃত কাজের দিকে এগিয়ে যাবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তার সব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে রয়ে গেছে। এটি প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠস্বরকে তুলে ধরতে পারে, অন্যায়কে প্রকাশ্যে আনতে পারে এবং জনমতকে এক করতে পারে। কিন্তু এর আসল ক্ষমতা ভিউ বা শেয়ারের সংখ্যার মধ্যে নয়, বরং ডিজিটাল জগতে তৈরি হওয়া শব্দকে রাজনৈতিক ফলাফলে রূপ দেয়ার মধ্যে।

এমন এক বিশ্বে, যেখানে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ অ্যালগরিদম এবং মনোযোগ আকর্ষণের অর্থনীতির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়, সেখানে প্রকৃত রাজনৈতিক ক্ষমতা তখনই শুরু হয় যখন একজন ব্যবহারকারী কেবল আঙুলের সাহায্যে নয়, বরং বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমে কিছু করার সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশের জেনারেশন জেডের জন্য সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ ডিজিটাল জগৎ থেকে পালিয়ে যাওয়া নয়, বরং এটিকে নিজেদের কাজে পুনরুদ্ধার করা—সংহতি, ন্যায়বিচার এবং সত্যিকারের পরিবর্তনের জন্য।

 

গবেষক ও উন্নয়নকর্মী

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন
Previous Post

পণ্য জীবাণুমুক্ত করার সেবায় গতি আনুন

Next Post

আরও শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র বানিয়েছে ইরান

Related Posts

প্রিমিয়ার ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যানকে নিয়ে বিতর্ক
করপোরেট কর্নার

প্রিমিয়ার ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যানকে নিয়ে বিতর্ক

শুল্কের চাপে দিশাহারা ভারতীয় ব্যবসায়ীরা
আন্তর্জাতিক

শুল্কের চাপে দিশাহারা ভারতীয় ব্যবসায়ীরা

ব্যাংক খাতে আস্থা ফেরাতে তদারকি জোরদার করুন 
পত্রিকা

ব্যাংক খাতে আস্থা ফেরাতে তদারকি জোরদার করুন 

Next Post
আরও শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র বানিয়েছে ইরান

আরও শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র বানিয়েছে ইরান

Discussion about this post

সর্বশেষ সংবাদ

প্রিমিয়ার ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যানকে নিয়ে বিতর্ক

প্রিমিয়ার ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যানকে নিয়ে বিতর্ক

শুল্কের চাপে দিশাহারা ভারতীয় ব্যবসায়ীরা

শুল্কের চাপে দিশাহারা ভারতীয় ব্যবসায়ীরা

ব্যাংক খাতে আস্থা ফেরাতে তদারকি জোরদার করুন 

ব্যাংক খাতে আস্থা ফেরাতে তদারকি জোরদার করুন 

শাহজালালে ১৩০ কোটি টাকার কোকেন উদ্ধার

শাহজালালে ১৩০ কোটি টাকার কোকেন উদ্ধার

কনটেইনার জট কমাতে বন্দরে ‘স্টোররেন্ট’ স্থগিত

কনটেইনার জট কমাতে বন্দরে ‘স্টোররেন্ট’ স্থগিত




 

আর্কাইভ অনুসন্ধান

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 ১২
৩৪৫৬৭৮৯
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  

প্রকাশক ও সম্পাদক ✍ মীর মনিরুজ্জামান

তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৪৮

একটি শেয়ার বিজ প্রাইভেট লি. প্রতিষ্ঠান

(প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রয়োজন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে)

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়

বিএসইসি ভবন (১০ তলা) ॥ ১০২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫, বাংলাদেশ ॥ ☎ 01720123162, 01768438776

  • ♦ বাংলা টেক্সট কনভার্টার

Copyright © 2025 Daily Share Biz All right reserved. Developed by WEBSBD.NET

No Result
View All Result
  • ☗
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • সারা বাংলা
  • পত্রিকা
    • প্রথম পাতা
    • শেষ পাতা
    • পুঁজিবাজার
    • সম্পাদকীয়
    • ফিচার
  • রাজনীতি
  • তথ্য-প্রযুক্তি
  • স্পোর্টস
  • বিনোদন
  • শিক্ষা
  • স্বাস্থ্য
  • অর্থ ও বাণিজ্য
    • করপোরেট কর্নার
    • মূল্য সংবেদনশীল তথ্য
  • ফটো গ্যালারি
  • পুরনো নিউজ

Copyright © 2025 Daily Share Biz All right reserved. Developed by WEBSBD.NET