শেয়ার বিজ ডেস্ক : আকাশপথের পর এবারই প্রথম সমুদ্রপথেও বিদেশে কাঁঠাল রপ্তানি করা হয়েছে। গত মে মাসে প্রথমবারের মতো সমুদ্রপথে ৩ হাজার ৫০০ কেজি (সাড়ে তিন টন) কাঁঠাল দুবাই পাঠিয়েছে রাজধানীর রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্স স্টাইল।
পরিবহনে ২৬ দিনের বেশি সময় লাগার পরও তাদের পাঠানো কাঁঠালগুলোর মান ঠিক থাকায় সমুদ্রপথে কাঁঠাল রপ্তানিতে তৈরি হয়েছে আশার আলো।
ইউনিভার্স স্টাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুজ্জামান মানিক বলেন, ‘সমুদ্রপথেও বিদেশে কাঁঠাল রপ্তানি করা সম্ভব। গত মে মাসে আমরা ৩ হাজার ৫০০ কেজি কাঁঠাল দুবাইতে রপ্তানি করেছি। জাহাজটি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১২ দিনে দুবাইয়ের জেবল আলী বন্দরে গিয়ে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু সেখানে সময় লেগেছে প্রায় ২৬ দিন। এরপরও কাঁঠালগুলোর মান ঠিক ছিল। ৩৫ শতাংশের বেশি কাঁঠালের গায়ের রং একেবারে স্বাভাবিক ছিল। বাকি ৬০ শতাংশের মতো কাঁঠালের রং কিছুটা কালো হলেও ভেতরে ফলের কোনো সমস্যা হয়নি। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন থেকে সমুদ্রপথে কাঁঠাল, আনারসসহ বিভিন্ন ধরনের দেশি ফল রপ্তানি করব। আনারস রপ্তানির জন্য ইতোমধ্যে আমরা টাঙ্গাইলে একটি ওয়্যারহাউস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
রপ্তানিকারকরা বলছেন, সমুদ্রপথে ফল রপ্তানিতে সরকার যদি সুযোগ-সুবিধাগুলো নিশ্চিত করে, তাহলে তৈরি হবে নতুন দিগন্ত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংঘনিরোধ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্যসহ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইডেন ও আয়ারল্যান্ডে কাঁঠাল রপ্তানি করে থাকে বাংলাদেশ। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যেই কাঁঠালের চাহিদা বেশি। বিমানে করে খুব অল্প সময়ে বিদেশে পাঠানো যায় বলে এত দিন কাঁঠাল রপ্তানিতে আকাশপথকেই বেছে নিয়েছেন রপ্তানিকারকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংঘনিরোধ উইংয়ের উপ-পরিচালক (রপ্তানি) একেএম মফিদুল ইসলাম বলেন, ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে সর্বমোট ১ হাজার ৮৩ টন কাঁঠাল রপ্তানি হয়েছে। আর চলতি অর্থবছরের গত ১ জুলাই থেকে এই পর্যন্ত ৪৪৮ টন কাঁঠাল রপ্তানি হয়েছে।’
এর আগের বছর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২ হাজার ২৪ মেট্রিক টন কাঁঠাল রপ্তানি হয় বলে তিনি জানান। জানা যায়, রপ্তানি করা ১ হাজার ৫৩১ টন কাঁঠালের মধ্যে মাত্র সাড়ে তিন টন কাঁঠাল রপ্তানি হয়েছে সমুদ্রগামী জাহাজে করে। বাকি সব কাঁঠাল রপ্তানি করা হয়েছে বিমানে।
উদ্ভিদ সংঘনিরোধ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর কেন্দ্রের উপ-পরিচালক মো. শাহ আলম বলেন, ‘বিমানে করে বিভিন্ন দেশে কাঁঠাল রপ্তানি হলেও এই প্রথম সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দুবাইতে কাঁঠাল রপ্তানি হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে গত মে মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রথমবারের মতো ৩ হাজার ৫০০ কেজি কাঁচা কাঁঠাল রপ্তানি হয়।’
সমুদ্রপথে কাঁঠাল রপ্তানির দ্বার উš§ুক্ত হলে অনেক কম খরচে বিদেশে কাঁঠাল রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা।
তারা জানান, বিমানে করে এক কেজি ফল রপ্তানিতে এখন খরচ হয় প্রায় ১৬০ টাকা। আর অন্যদিকে সমুদ্রপথে ৪০ ফুটের এক কন্টেইনার পণ্য (৩০ থেকে ৩২ টন) রপ্তানি করতে খরচ হয় সাড়ে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা। এই হিসাবে সমুদ্রপথে এক কেজি ফল রপ্তানিতে পরিবহন খরচ পড়ে মাত্র ১৩ থেকে ১৪ টাকা।
ফল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ঢাকার মেসার্স গ্রিন ট্রেড হোমের মালিক আলাউদ্দিন বলেন, সমুদ্রপথে ফল রপ্তানি সময়সাপেক্ষ, তাই ফলগুলো পচে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এজন্যই আমরা সমুদ্রপথে ফল রপ্তানি করতে পারছি না। তাই বাধ্য হয়েই বেশি পরিবহন খরচ হওয়ার পরও আকাশপথে রপ্তানি করছি। এখন সমুদ্রপথে যদি রপ্তানির সুযোগ তৈরি হয়, তাহলে ফল রপ্তানিতে তৈরি হবে নতুন দিগন্ত। সমুদ্রপথে ফল রপ্তানির জন্য তিনি সরাসরি শিপিং লাইনের ব্যবস্থা করার দাবি জানান।

Discussion about this post