Print Date & Time : 21 September 2025 Sunday 8:34 pm

প্রবাসের বুকে এক মানবিক আলো

শেয়ার বিজ প্রতিবেদক : কিছু মানুষ নিজে জ্বলে অন্যকে আলোকিত করে। প্রবাসের মতো অচেনা জায়গায় সঙ্গী ও আত্মীয়-স্বজন না থাকলেও, কেবল মনের অদম্য ইচ্ছা ও শক্তির জোরে সামনে এগিয়ে যাওয়াটা খুবই কঠিন। কিন্তু যদি লক্ষ্য থাকে স্থির আর বিশ্বাস থাকে হৃদয়ে, তবে জয় একদিন হবেই। তেমনই এক সফলতার গল্প ইতালি প্রবাসী সবুজ বড়ুয়ার। তিনি কেবল একজন সফল প্রবাসী নন, তিনি একজন সত্যিকারের মানবতার কান্ডারি।

শুরুর গল্প: সবুজ বড়ুয়ার প্রবাস জীবন শুরু হয়েছিল খুব অল্প বয়সে, যখন তার বয়স মাত্র ২০। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির আব্দুল্লাপুর গ্রামের সুধীর বড়ুয়া ও ঝর্ণা বড়ুয়ার এই কৃতি সন্তান লতিফ রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে একটি টেকনিক্যাল ডিগ্রি নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইয়ে। সেখানে তিনি টানা ১৪ বছর ধরে স্বনামধন্য দুবাই বাগদাদ ইলেকট্রিশিয়ান কোম্পানির প্রধান তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি কেবল কর্মজীবনেই সফল হননি, বরং দুবাইয়ের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে তিনি পরিচিতি লাভ করেন বিপদের পরম বন্ধু হিসেবে। বহু মানুষের বহু প্রকার উপকার করে তিনি প্রবাসীদের কাছে এক নির্ভরতার প্রতীক হয়ে ওঠেন। সেই সুনাম ও সম্মান নিয়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন।

ইতালিতে নতুন অধ্যায়: দেশে ফেরার পর তার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয় ইতালিতে। সেখানেও তিনি বর্তমানে একটি বিশ্বখ্যাত চাইনিজ রেস্টুরেন্টে নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করছেন। ইতালির বাঙালি কমিউনিটিতেও তিনি অল্প সময়েই হয়ে উঠেছেন এক পরিচিত বন্ধু। তাঁর মানবিক ও দানশীল মন সবসময়ই অন্যের কল্যাণে সচেষ্ট। তিনি সাধ্যমতো বিভিন্ন দাতব্য কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।

গুরুর সান্নিধ্য এবং শিল্পে আত্মপ্রকাশ : সবুজ বড়ুয়ার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসে সদ্য প্রয়াত ডক্টর এফ দীপঙ্কর মহাথের ভিক্ষুর সান্নিধ্যে এসে। এই মহান গুরুর সান্নিধ্য তাঁর জীবনধারাকে পাল্টে দেয়। গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা থেকে তিনি তাঁর একনিষ্ঠ সেবকে পরিণত হন। গুরুর স্মরণে তিনি বিভিন্ন প্রতিবাদী মৌলিক গান রচনা ও প্রকাশ করে ইতিমধ্যেই সবার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। বিশেষ করে “লক্ষ লক্ষ মানুষের অশ্রু তোমার সমাধিতে” গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তাঁর এই শিল্পকর্ম প্রমাণ করে যে, তিনি কেবল একজন কর্মী নন, তিনি একজন সংবেদনশীল মানুষ এবং শিল্পী।

সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পারিবারিক জীবন : সবুজ বড়ুয়া কেবল একজন ব্যক্তি নন, তিনি একটি বৃহত্তর বৌদ্ধ কমিউনিটির অংশ। তিনি বুদ্ধধর্ম বুদ্ধধর্ম নামের একটি ফেসবুক পেজের এডমিন এবং বাংলাদেশের স্বনামধন্য “বুদ্ধিস্ট টিভি” এর একজন পৃষ্ঠপোষক। তাঁর স্ত্রী কেমিলি বড়ুয়া একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তিনি দুই সন্তানের জনক এবং চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ফরাঙ্গীরখীল গ্রামের ডা. বেণীমাধব বড়ুয়ার দৌহিত্র। এছাড়াও তিনি ডা. বেণী-মায়া ফাউন্ডেশনের পরিচালক। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি দেশে ও বিদেশে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে নিরলসভাবে অবদান রেখে চলেছেন।

সবুজ বড়ুয়ার জীবন আমাদের শেখায় যে, প্রবাসে সফলতা কেবল আর্থিক উন্নতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা মানবতা, সহানুভূতি এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার এক প্রতিচ্ছবি। তার এই পথচলা আমাদের সবার জন্য এক অনুপ্রেরণা।