Print Date & Time : 14 September 2025 Sunday 5:05 am

প্রাইভেট না পড়ায় ৫ শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পেটালেন শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক : শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়ায় পাঁচ ছাত্রছাত্রীকে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করেছেন ফরিদপুরের এক হাইস্কুল শিক্ষক। ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার। ঘটনার পর থেকেই সেই স্কুলশিক্ষক পলাতক রয়েছেন। এ বিষয়ে স্থানীয় থানায় কোনো মামলা হয়নি এখনও।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত বৃহস্পতিবার ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক মহানন্দ দাশ তার কাছে প্রাইভেট না পড়ার কারণে বেধড়কভাবে পিটিয়ে আহত করেছে অষ্টম শ্রেণির পাঁচ শিক্ষার্থীকে।

তারা বলছেন, শুধু পিটিয়েই ক্ষান্ত হয়নি ওই শিক্ষক। পাঁচ শিক্ষার্থীকে ২ ঘণ্টা স্কুলে আটকিয়ে রাখেন তিনি। স্কুল ছুটি হওয়ার পরে আহত লামিয়া, শামীম, অন্তরা, মারজিয়া ও ফাতেমাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বাড়িতে যাওয়ার পরে লামিয়া ও অন্তরা বমি করলে তাদের অভিভাবকরা হাসপাতালে নিতে চাইলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইনামুল হক ছাত্রীদের হাসপাতালে নিতে বাধা দেন। লামিয়া ও অন্তরার অবস্থা খারাপ হলে অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষক ইনামুল হকের কথা না শুনে মধুখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।

লামিয়ার বাবা বিপ্লব মোল্যার অভিযোগ, ওই পাষণ্ড শিক্ষক মহানন্দ দাশ আমার মেয়েসহ আরও চারজনকে তার কাছে প্রাইভেট পড়তে বলেছিলেন। বিভিন্ন কারণে তারা প্রাইভেট পড়াতে পারেননি। সেদিন ক্লাসে পড়া না পারায় বেদম প্রহার করে স্কুলে আটকিয়ে রাখেন শিক্ষক। প্রাথমিক চিকিৎসাও দেয়া হয়নি। বিকালে মেয়ে বাড়ি এসে অসুস্থ হয়ে পড়লে আমি তাকে নিয়ে হাসপাতালে নেয়ার পথে প্রধান শিক্ষক বাধা দেয়।

এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে প্রধান শিক্ষক ইনামুল হক বলেন, স্কুলের সুনাম ক্ষুণ্ন হতে পারে বিধায় আমি ছাত্রছাত্রীদের হাসপাতালে নিতে নিষেধ করেছিলাম। তিনি আরও বলেন অভিযুক্ত শিক্ষক মহানন্দ দাশ ঘৃণীত কাজ করেছে। তার যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

মধুখালী থানা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি তিনি অবগত। রোববার স্কুল খোলার পরে অভিযুক্ত শিক্ষক মহানন্দ দাশের বিষয়ে তদন্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।

উল্লেখ্য, সরকারি প্রজ্ঞাপন ও নীতিমালা জারি করে অনেক দিন থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশু নিগ্রহ বন্ধের নানা চেষ্টা চলছে। ২০১১ সালে হাইকোর্ট শিশুদের শারীরিক শাস্তি দেয়ার বিষয়টি বেআইনি এবং অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেন। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, শিক্ষা মন্ত্রণালয় আবার একটি পরিপত্রও জারি করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিপত্র অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের হাত-পা বা কোনো কিছু দিয়ে আঘাত বা বেত্রাঘাত করা নিষিদ্ধ।

অভিযুক্ত শিক্ষক মহানন্দ দাশ নরকোনা কলাগাছিতে থাকতেন। ঘটনার পর থেকে তার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দের ধারণা, মহানন্দ দাশ পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে পেরে গা-ঢাকা দিয়েছেন। তার ব্যক্তিগত ব্যবহারের মোবাইল নম্বরটাও ঘটনার পর থেকে বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে অভিযোগের বিষয়ে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।