নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. এইচ বি এম ইকবালের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে দি প্রিমিয়ার ব্যাংকের পর্ষদ সম্প্রতি পুনর্গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পুনর্গঠিত পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়েছে ব্যাংকটির উদ্যোক্তা শেয়ারগ্রহীতা ডা. আরিফুর রহমানকে। নিয়োগের এক সপ্তাহের মধ্যেই তাকে নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা।
জানা গেছে, ডা. আরিফ সৌদি আরবে নিষিদ্ধ! লোটাস কামাল হিসেবে পরিচিত সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ব্যবসায়িক পার্টনার ছিলেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. এইচ বি এম ইকবাল ও তার পরিবারের সদস্যদের যে কারণে প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকে সরানো হয়েছে, সেই একই ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ডা. আরিফও।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, সৌদি আরবে এক সময় ভিসা ট্রেডিংয়ের জন্য বিতর্কিত ছিলেন ডা. আরিফ। তিনি ছিলেন প্রিমিয়ার ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন ভাইস-চেয়ারম্যান। তিনি শুরু থেকেই নিজেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন বলে দাবি করতেন। এমনকি এক সময় যুবলীগ নেতা ছিলেন ও শেখ মনিরের কাছের লোক বলেও পরিচয় দিতেন।
প্রিমিয়ার ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, নতুন চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের ব্যবসায়িক পার্টনার ছিলেন। এমনকি বিদেশে লোটাস কামালের ব্যবসার টাকা পাঠানোর বিষয়টিও ডা. আরিফ দেখাশোনা করতেন। অর্থমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে থাকতেন ডা. আরিফ। মুস্তফা কামাল দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতুর নাগরিকত্ব গ্রহণ করে এখন দুবাইয়ে আছেন বলেও জানা গেছে।
অভিযোগ আছে, ডা. আরিফ কানাডা ও বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক (কানাডা পাসপোর্ট নং -(অু ২৩৫২৩৬), বাংলাদেশ পাসপোর্ট নং (অ ০১২২২৪০৩) নেপথ্যে থেকে পলাতক মুস্তফা কামালকে ভানুয়াতুর নাগরিকত্ব পেতে সহায়তা করেছেন।
গত ১৯ আগস্ট প্রিমিয়ার ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে নতুন বোর্ড গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিন কেন্দ ীয় ব্যাংকের পরিচালক ও সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিক সাংবাদিকদের জানান, প্রিমিয়ার ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে ছয় সদস্যের নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দেয়া হয়েছে।
এ সময় জানানো হয়, ব্যাংকটির নতুন পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক করা হয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালক ডা. আরিফুর রহমানকে। এছাড়া স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. ফোরকান হোসেন, ইউসিবি ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ফরিদুল ইসলাম, ব্যাংক এশিয়ার সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাজ্জাদ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর অধ্যাপক শেখ মোর্শেদ জাহান এবং প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের স্বতন্ত্র পরিচালক এম নুরুল আলম এফসিএস।
বোর্ড পুনর্গঠনের কারণ সম্পর্কে শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, করপোরেট গভর্ন্যান্স ও কার্যকর নীতি বাস্তবায়নে ঘাটতি, ঋণ শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ব্যর্থতা এবং সার্বিকভাবে সুশাসনের অভাবে প্রিমিয়ার ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ধারা ৪৭ এর বিধানের আলোকে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
জানা গেছে, ব্যাংকটি এতদিন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এইচ বি এম ইকবালের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছিল। এ সময় ব্যাংকটিতে নিজের মালিকানাধীন ভবনের ফ্লোর ভাড়া দেয়া, নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও সেবা বিক্রি করা, ঋণের তথ্য গোপন করা, কেন্দ ীয় ব্যাংকের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ২৫ বছর চেয়ারম্যান পদে থাকেন ডা. ইকবাল।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে নিজের ছেলে ইমরান ইকবালকে প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান করে দেশ ছাড়েন তিনি।
ইকবাল ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এছাড়া ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্যও জমা দিতে বলা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে গত ১৯ আগস্ট ব্যাংকটির পর্ষদ পুনর্গঠন করে কেন্দ ীয় ব্যাংক। নতুন পরিচালকদের মধ্যে ডা. আরিফকে চেয়ারম্যান করা হয়। এরপর থেকে শুরু হয় সমালোচনা। ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ডা. আরিফ ৩০ কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান হয়েছেন।
বিষয়টি ইতোমধ্যে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার নজরে এসেছে বলে জানা গেছে। অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক বিশ্লেষক ড. মাহবুবুর রহমান এসব বিষয়ে বলেন, বিগত সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এবং অর্থমন্ত্রীদের পার্টনার ছিল এমন কেউ ব্যাংক চেয়ারম্যান পদে থাকা ঝুঁকিমুক্ত নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব সংস্থা বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখা দরকার।
আলোচ্য বিষয়ে ডা. আরিফুর রহমানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ব্যাংকটির অন্য এক পরিচালকদের মধ্যে এ নিয়ে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তারাও এখনই বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে রাজি নন।

Discussion about this post