Print Date & Time : 24 July 2025 Thursday 2:23 am

ফরিদপুরে মধুমতি নদীর ভাঙনে বিলীন ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি

মো. মনিরুল ইসলাম টিটু, ফরিদপুর : ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের মধুমতি নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। হঠাৎ করে গত কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টি এবং নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে দয়ারামপুর ও সালামতপুর গ্রামের মানুষের একমাত্র সম্বল ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীর পশ্চিমে সালামতপুর ও দয়ারামপুর গ্রামের মানুষের কৃষিজমি ভেঙে যাচ্ছে চোখের পলকে। আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন নদীর পশ্চিম-উত্তর পাড়ের বেশ কয়টি গ্রামের মানুষ। এসব জমিতে ধান, পাট ও ভুট্টা চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন বিভিন্ন এলাকার কৃষক। ভাঙন রোধে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি এলাকাবাসীর। তারা জানান, সালামতপুর স্থায়ী বাঁধ দেয়ায় নদীর পানির চাপ দয়ারামপুর মাঠে পড়ায় দ্রুত নদীভাঙনের কবলে পড়ছে কৃষিজমি।

উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের দয়ারামপুর, সালামতপুর, গন্ধখালী, নাওড়াপাড়ার মানুষ দয়ারামপুর মাঠের জমিতে কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহকারীরা জানান, পশ্চিম সালামতপুর ও পূর্ব সালামতপুর গ্রামে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। কয়েক দিন ধরে মধুমতি নদীর পশ্চিম ও পূর্ব পাড়ে ভাঙনে প্রতিদিনই বিলীন হচ্ছে একরের পর একর ফসলি জমি। কিছু এলাকায় বসতবাড়ি চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। তারা ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে য়ারামপুর গ্রামের বিরেন্দ্র নাথ দেউড়ী বলেন, বাপ-দাদার ফসলি জমি চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতাম, কিন্তু নদীগর্ভে তাদের ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, কৃষিকাজ করে সংসার চালাই। কিন্তু মুহূর্তেই আমার সব জমি নদীর পেটে চলে যাচ্ছে। এভাবে কৃষিজমি নদীগর্ভে চলে গেলে চাষাবাদ করার কোনো জমি আর থাকবে না।

একই এলাকার জলধর দেউড়ী ও রবিউল লস্কর জানান, হঠাৎ বন্যা ও নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে মাঠের জমি নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অপর কৃষক ফারুক মোল্লা জানান, তার ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

কামারখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাকিব হোসেন চৌধুরী ইরান বলেন, সরেজমিনে পরিদর্শনে দয়ারামপুর মাঠের কৃষিজমি মধুমতি নদীতে বিলীন হওয়ার বিষয়টি দেখেছি। এটা প্রতিরোধে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়ে জিও ব্যাগ ফেলে নদীভাঙন রোধের ব্যবস্থা করা হবে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিষয়ে মধুখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুব ইলাহী জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরে একটি তালিকা পর্যায়ক্রমে প্রণয়ন করা হবে। কখনো যি সরকারি প্রণোদনা আসে, তাহলে তাদের জন্য বিশেষভাবে ব্যবস্থা করা হবে। কৃষিসংশ্লিষ্ট যে কোনো বিষয়ে তাদের সর্বোচ্চ সহায়তা করা হবে।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (মধুখালীন-বোয়ালমারী অঞ্চল) সন্তোষ কর্মকার জানান, ফসলি জমি বিলীন হওয়ার বিষয়টির ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে আপৎকালীন জিও ব্যাগ ফেলা হবে। ভবিষ্যতের জন্য নদীর স্রোত ও অন্যান্য বিষয়ে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের আঞ্চলিক প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহজাহান কবীর বলেন, এ অঞ্চলের অনেক নদীই ভাঙনের শিকার হচ্ছে। এরই মধ্যে মধুমতি নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই। তার পরও যত দ্রুত সম্ভব ভাঙন রোধে এ এলাকায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।