Print Date & Time : 26 August 2025 Tuesday 7:54 pm

ফিলিস্তিনের ৬৩টি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানকে নিজেদের বলে ঘোষণা করল ইসরায়েল

শেয়ার বিজ ডেস্ক : ফিলিস্তিনের ৬৩টি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানকে অবৈধভাবে ‘ইসরায়েলি ঐতিহ্যবাহী স্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি এসব প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান দেশটির অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবস্থিত। ফিলিস্তিনি একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন ও দায়বদ্ধতার স্পষ্ট লঙ্ঘন। খবর: টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জেরুজালেমভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা অ্যাপ্লাইড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, জেরুজালেম (এআরআইজে) এ তথ্য সামনে এনেছে। ‘নাবলুস গভর্নরেটের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা: ইসরায়েলি দখল পরিকল্পনার খোলা মঞ্চ’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করেছে বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোতি আলমোজ স্বাক্ষরিত সামরিক নির্দেশনার একটি বুকলেট অনুযায়ী অধিকৃত পশ্চিম তীরের ৬৩টি স্থানকে ‘ইসরায়েলি ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে।

এই ৬৩টির মধ্যে ৫৯টি নাবলুস গভর্নরেটে, তিনটি রামাল্লাহতে এবং একটি সলফিট গভর্নরেটে অবস্থিত।

এআরআইজের দাবি, ফিলিস্তিনি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোকে টার্গেট করা কেবল প্রশাসনিক বা আইনি বিষয় নয়, বরং ফিলিস্তিনি ঐতিহ্য দখলের একটি সুপরিকল্পিত নীতির অংশ। তারা বলেছে, এ পদক্ষেপের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের ঐতিহ্যিক পরিচয় বিকৃত করে ইসরায়েলি বয়ানকে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। বিশেষ করে নাবলুস অঞ্চলের বেশিরভাগ টার্গেটকৃত স্থানই অবৈধ ইসরায়েলি বসতি, আউটপোস্ট বা অন্যান্য ঔপনিবেশিক স্থাপনার কাছাকাছি।

প্রতিবেদনে জোর দিয়ে বলা হয়, ফিলিস্তিনি প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক স্থাপনাকে ‘ইসরায়েলি’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা আন্তর্জাতিক আইন ও আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং ফিলিস্তিনি জাতীয় পরিচয়ের প্রতি সরাসরি হুমকি।

এআরআইজে জানিয়েছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত পশ্চিম তীরে দুই হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানকে ‘ইসরায়েলি’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে।

তাদের মতে, ইসরায়েল অনেক সময় এসব স্থানকে সংরক্ষণ ও সুরক্ষার দাবি জানালেও বাস্তবে বিশাল এলাকা দখল করার অজুহাত হিসেবেই এটি ব্যবহার করা হয়। পরে এসব স্থান ইসরায়েলি অবৈধ বসতি, আউটপোস্ট, সামরিক স্থাপনা, পর্যটনকেন্দ্র ও বিনোদন স্থাপনায় রূপান্তর করা হয়, যা কেবল ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী ও পর্যটকদের জন্যই উন্মুক্ত থাকে।

ফিলিস্তিনি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের শেষে পশ্চিম তীরে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীর সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ ৭০ হাজারে পৌঁছেছে। তারা ১৮০টি বসতি ও ২৫৬টি আউটপোস্টে ছড়িয়ে আছে, যার মধ্যে ১৩৮টি কৃষি ও পশুপালন আউটপোস্ট।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি সেনা ও অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় পশ্চিম তীরে অন্তত ১ হাজার ১৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং সাত হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

গত বছরের জুলাইয়ে দেয়া এক পরামর্শমূলক মতামতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের সব অবৈধ বসতি উচ্ছেদের আহ্বান জানায়।