নিজস্ব প্রতিবেদক : অন্তর্বর্তী সরকার দুটি বন্দর পরিচালনার ভার বিদেশি কোম্পানিকে দেয়ার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। গতকাল শনিবার রাজধানীর বিজয়নগরে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় এ কথা বলেন আনু মুহাম্মদ।
চট্টগ্রামের লালদিয়া চরে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও বন্দর পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির ‘বিচার-বিশ্লেষণ এবং প্রতিবাদ সভার’ আয়োজন করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি।
তিনি বলেছেন, ‘নিজেদের ঘোষণা অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকার আগামী দুই থেকে তিন মাসের বেশি ক্ষমতায় নেই। এ রকম একটা সরকার কী কারণে ৪০ থেকে ৫০ বছরের এমন একটা চুক্তি করবে, যেটা পুরো অর্থনীতি ও দেশকে প্রভাবিত করবে এবং যার মধ্যে অনেক ধরনের উদ্বেগের বিষয় আছে। সেই চুক্তি স্বাক্ষর কেন গোপনীয়তা ও অস্বচ্ছতার সঙ্গে ছুটির দিনে তাড়াহুড়া করে করা হবে? তারা এ ধরনের একটা চুক্তি করার এখতিয়ার কীভাবে পায়।
আয়োজকরা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার গত সপ্তাহে এই দুটি চুক্তি সই করে। লালদিয়া চরে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালসকে। পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে সুইজারল্যান্ডের মেডলগ এসএ। এই চুক্তির সবটুকু অন্তর্বর্তী সরকার প্রকাশ করেনি।
তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির সাবেক সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকার একেবারে নির্লজ্জের মতো হাসিমুখ নিয়ে গত সরকারের আমলে যা যা অপরাধ, যা অন্যায়, যা যা জনস্বার্থবিরোধী তৎপরতা, সেগুলো ঠিক একইভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার অসমাপ্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একটা ভয়াবহ বিপদের মধ্যে বাংলাদেশকে ঠেলে দিচ্ছে এই সরকার।’
অন্তর্বর্তী সরকার এই চুক্তি করার জন্য যতটা আগ্রহ নিয়ে এগিয়েছে, দেশের অন্য সব সমস্যায় যেমন মাজার ভাঙা, নারী নির্যাতন কিংবা মব-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ততটা তৎপরতা দেখায়নি বলে মন্তব্য করেন আনু মুহাম্মদ।
জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, ‘ডেনমার্কের কোম্পানিকে বন্দর ইজারা দিয়ে তিন বছরে ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ আনার কথা বলা হচ্ছে? এর মাধ্যমে বন্দর আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে কিংবা বন্দরে ভূরাজনৈতিক বিভিন্ন ধরনের বিপদের আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। যে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯০ শতাংশ পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয় এবং এটা যে জায়গায় অবস্থিত, বিভিন্ন দিক থেকে কৌশলগতভাবে তার একটা গুরুত্ব আছে।’
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘যেসব রাজনৈতিক দলকে এত দিন ধরে এই সরকারের সঙ্গে কত রকম সভা, ফটোসেশন, হাসিমুখ দেখা গেল, যারা ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে পরিবর্তন করবে বলে আমাদের জানাচ্ছে, সেই দলগুলো এ রকম একটা ভয়াবহ চুক্তির ব্যাপারে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো কথা বলছে না। এতে প্রমাণিত হয় যে এই দলগুলো ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে এই একই পথে নিয়ে যাবে।’
‘বন্দর নিয়ে সরকারের তৎপরতা কেন জাতীয় স্বার্থবিরোধী?’ শিরোনামে এ সভায় বাসদের (মার্কসবাদী) নেতা শফিউদ্দিন কবির আবিদের লেখা একটি ধারণাপত্র পড়ে শোনান গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ চৌধুরী।
এতে বলা হয়, সন্দেহজনক রকম তাড়াহুড়া, অনিয়ম ও গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে বন্দরের এই দুটি চুক্তি হয়েছে। এর আগে এক চুক্তিতে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের কাছে ইজারা দেয়া হয়। গণ-আকাক্সক্ষা পূরণে সরকারের মনোযোগ নেই, মনোযোগ জাতীয় স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন চুক্তিতে।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। সভার শুরুতে গত শুক্রবারের ভূমিকম্পে হতাহতদের জন্য শোক ও সমবেদনা জানানো হয়।
প্রিন্ট করুন









Discussion about this post