তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী : নীলফামারী কিশোরগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের রুপালি কেশবা গ্রামের চকচকার ঘাটে ধাইজান নদীর ওপর ব্রিজ না থাকায় দুই ইউনিয়নের ২০ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এই সাঁকোটি তাদের জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। বিকল্প রাস্তা অনেক দূর হওয়ায়, বাঁশের চাটাই বিছানো সাঁকোর ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে হয় তাদের। অনেক সময় বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে দুর্ঘটনায় পড়তে হয়।
বর্ষার সময় নদীর পানি বাড়লে বাঁশের সাঁকোটি ভেসে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়ে এলাকার স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি মাতৃত্বজনিত রোগীরা হরহামেশা বিপাকে পড়ে জীবন হারানোর মতো ঘটনাও ঘটছে। সেখানে ব্রিজ হলে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশাল প্রভাব পড়বে এবং সময় অর্থ দুটোই বাঁচবে। স্থানীয় বাসিন্দারে উদ্যোগে চলাচলের জন্য প্রতিবছর একটি করে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। শুষ্ক মৌসুমে সেটি দিয়ে কিছুদিন চলাচল করা গেলেও, বর্ষাকালে নেমে আসে চরম ুর্ভোগ। বর্ষা এলেই আতঙ্কে থাকে এলাকার মানুষ। তখন কলাগাছের ভেলা দিয়ে নদী পার হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, কেশবাসহ কয়েকটি গ্রামের কোলঘেঁষে বয়ে গেছে ধাইজান নদী। এই নদীর ওপর ব্রিজ না থাকায় ওই এলাকার মানুষজন জীবন-জীবিকায় বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এলাকার মানুষ কৃষিনির্ভর হওয়ায় বর্ষায় জমি চাষ ও চারা রোপণ এমনকি উৎপাদিত কৃষিপণ্য আনা-নেয়া, কেনা-বেচা এবং মালপত্র বহনে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এছাড়া সময় ও অতিরিক্ত র্অ গুনতে হচ্ছে এই এলাকার সাধারণ মানুষকে। তাই জনগুরুত্বপূর্ণ ওই ঘাটে ব্রিজ নির্মাণে দীর্ঘদিনের দাবি এলাকাবাসীর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেসবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সালমা বলেন, কলাগাছের ভেলায় চড়ে পানিতে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। বর্ষা এলে প্রায় তিন থেকে চার মাস ঘরে বসে থাকতে হয়। এতে আমরা অন্য শির্ক্ষাীদের চেয়ে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ি। পরীক্ষার ফলাফলও খারাপ হয়। তাই নদীর ওপর একটি ব্রিজ হলে বই, খাতা ও কাপড় চোপর নদীতে পড়ে ভেজার ভয় থাকেনা ও ভাল ফলাফল করা সম্ভব।
কেশবা গ্রামের বাসিন্দা সামাউন ইসলাম বলেন, নদীর উত্তর পারে জনগুরুত্বপূর্ণ কিশোরগঞ্জ উপজেলা শহর রয়েছে। সেখানে হাসপাতাল (মেডিকেল), ভূমি অফিস, ইউএনও অফিস, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, সরকারি ব্যাংক, বীমা, এনজিও ও কৃষি পণ্যের হাটবাজার বসে। দক্ষিণ পারেও শতশত মানুষের বসতি রয়েছে। কিন্তু আজও ব্রিীজ নির্মিত না হওয়ায় ২০ গ্রামে এখনো আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। উন্নত সমাজ গঠনে পিছিয়ে পড়েছে ওই গ্রামের মানুষগুলো।
স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল হোসেন বলেন, ২০ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের ভরসা এই বাঁশের সাঁকোটি। এর ওপর দিয়ে কিশোরগঞ্জ উপজেলা শহর ও জেলা শহরে যাওয়ার একটি গ্ররুত্বপুর্ণ রাস্তা। মেম্বার, চেয়ারম্যান, এমপি ও তাদের প্রতিনিধিরা ভোটের সময় কথা দেয়, এই নদীর ওপরে ব্রীজ করে দিবে। কিন্তু ভোট চলে গেলে আর কেউ খবর রাখেনা, খোঁজ নেই ব্রীজের। এলাকার মানুষের দাবী ধাইজান নদীর ওপরে একটি ব্রিজ তৈরি করা হোক। ব্রিজটি হলে পাল্টে যাবে এই এলাকার মানুষের জীবন মান। শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগ থেকে পাবে রক্ষা।
এ বিষয়ে এলজিইডি কিশোরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মাহামুদুল হাসান বলেন, ধাইজান নদীর চকচকার ঘাটে ব্রিজ নির্মাণের বিষয়টি নজরে রয়েছে। আমরা মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, কাগজপত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। বরাদ্দ এলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আশা করি, দ্রুত আলোর মুখ দেখবে এলাকাবাসী।

Discussion about this post