নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ১৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় তৈরি পোশাক রপ্তানিতে আয় হয়েছে ১০ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ইউরো। আগের বছর একই সময়ে আয় ছিল ৮ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ইউরো। সম্প্রতি ইইউর পরিসংখ্যান বিভাগের ইউরোস্ট্যাটের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক রপ্তানির এই প্রবৃদ্ধি অর্জনের পেছনে ভূমিকা রেখেছে নিটওয়্যার ও ওভেন গার্মেন্টস রপ্তানি। এই উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি ইইউ’র বাজারে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক সরবরাহকারী হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানকে সুদৃঢ় করেছে। তবে বাজারে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছে চীন ও কম্বোডিয়া।
চলতি বছর ছয় মাসে ইইউর বাজারে চীন সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক হিসেবে অবস্থান ধরে রেখেছে। দেশটির রপ্তানি আগের চেয়ে ২২ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ইউরোতে। অপরদিকে কম্বোডিয়া সবচেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তাদের রপ্তানি আগের চেয়ে ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ২ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে।
তবে বাংলাদেশ প্রধান আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় ইইউ বাজারে ভালো প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। যেমন ভারত এ সময় ২ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের ২ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ইউরো থেকে ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তবে প্রবৃদ্ধির হার বাংলাদেশের তুলনায় কিছুটা কম।
তৈরি পোশাক খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য ও শুল্ক উত্তেজনার কারণে চীন ও ভারত ইউরোপীয় বাজারে নিজেদের অবস্থান আরও জোরালো করার চেষ্টা করছে। ফলে এশিয়ার প্রধান পোশাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বেড়েছে।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে পাকিস্তান রপ্তানি করেছে ১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ইউরো। দেশটি আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকলেও রপ্তানির পরিমাণ বাংলাদেশের তুলনায় কম। অন্যদিকে ভিয়েতনামও প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। দেশটি ২ দশমিক ০২ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা এক বছর আগের ১ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ইউরো থেকে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করেছে।
তবে তুরস্ক নেতিবাচক ধারা দেখিয়েছে। তাদের রপ্তানি ৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ইউরোতে। দেশটির পোশাক রপ্তানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে কমেছে।
এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে (জানুয়ারি-মে) বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি প্রায় ১৮ শতাংশ বেড়েছিল। একই সময়ে বাজারটিতে চীনের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল প্রায় ২১ শতাংশ।
ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ইইউর বাজারে মোট ৩ হাজার ৯৭১ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি প্রায় ১২ শতাংশ।
ইইউতে শীর্ষ দুই তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে চীন ও বাংলাদেশ। তবে পোশাক রপ্তানিতে চীনের কাছাকাছি অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে দুই দেশের রপ্তানির ব্যবধান ৪২ কোটি ডলার। চীন ও বাংলাদেশের পর ইইউতে অন্য বড় রপ্তানিকারক দেশগুলো হচ্ছেÑতুরস্ক, ভারত, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, মরক্কো, শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়া।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় গন্তব্য হচ্ছে ইইউ। বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রায় ৫০ শতাংশ হয়েছে ইইউর বাজারে। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে বাংলাদেশ ইইউর বাজারে ৯৬৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে; যা গত বছরের একই সময়ের ৮২৩ কোটি ডলারের রপ্তানির চেয়ে ১৭ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি।
সামগ্রিকভাবে বাজারটিতে রপ্তানি বাড়লেও গত মে মাস ভালো যায়নি। ওই মাসে বাংলাদেশ ইইউতে ১৬১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে; যা গত বছরের মে মাসের তুলনায় ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ কম।
মে মাসে ইইউর বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি কমলেও চীনের বেড়েছে। চীন রপ্তানি করেছে ১৭১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক, যা গত বছরের একই সময়ের ১৪৫ কোটি ডলারের রপ্তানির তুলনায় ১৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি।
ইউরোস্ট্যাটের তথ্যানুযায়ী, ইইউতে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে)) ১ হাজার ১০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে চীন, যা গত বছরের একই সময়ের ৮৩৫ কোটি ডলারের রপ্তানির তুলনায় ২০ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি।
একক দেশ হিসেবে তৈরি পোশাকের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের কারণে গত এপ্রিল থেকে বাজারটিতে অস্থিরতা চলছে। চীনা পণ্যের ওপর ট্রাম্পের উচ্চ শুল্ক আরোপের কারণে চীনের অনেক তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইইউর বাজারে ঝুঁকছে। এ কারণেই ইইউতে চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছে বলে জানান বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা। তারা বলেন, বাংলাদেশি পণ্যে আরোপ করা ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক কমানো না হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি কমবে। পাশাপাশি ইইউর বাজারেও তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে।
ইউরোস্ট্যাটের তথ্যানুযায়ী, ইইউর বাজারে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৩৮৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে তুরস্ক, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ শতাংশ কম। এ ছাড়া ভারত চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ২৫১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে; যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি। গত মে মাসে ভারত ৫০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ শতাংশ।

Discussion about this post