নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ ৩০০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন। তিনি বলেন, যৌথ অভিজ্ঞতা ও সহযোগিতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যেতে পারবে। দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ-চীন প্রদর্শনী দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করবে এবং বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে সহায়ক হবে।
রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে গতকাল শুক্রবার ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশ এক্সিবিশন’ উদ্বোধনকালে বাণিজ্য উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। এ সময় বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সবুর হোসেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মিরানা মাহরুখ এবং বাংলাদেশে চীনা এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশনের (সিইএবি) সভাপতি হান কুন উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা আরও জোরদার করতে রাজধানীতে শুরু হয়েছে। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, গত এক বছরে বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ প্রায় ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এই গতিকে আরও ত্বরান্বিত করতে চাই। এই প্রদর্শনী শুধু উদ্ভাবন ও অংশীদারিত্বের প্রদর্শনী নয়, বরং এটি উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা গড়ে তুলবে, যা শেষ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, এই উদ্যোগ দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা গভীর করবে এবং সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উšে§াচন করবে।
উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের দুর্বলতা চিহ্নিত করতে হবে। অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে আমরা এগিয়ে যেতে পারি। উৎপাদন ও প্যাকেজিংয়ে চীনের দক্ষতা কাজে লাগালে বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে অগ্রসর হতে পারবে। তৈরি পোশাক খাতে আমরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক হলেও সামগ্রিকভাবে এখনও পিছিয়ে।’
সড়ক অবকাঠামো ও পরিবহন সক্ষমতা বাড়াতে চীনের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি। তিনি বলেন, প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ মানুষ মারা যায়, তা ভয়াবহ। এ জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন ও পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ জরুরি।
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রতিবছর চীন থেকে ২২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে, অথচ রপ্তানি অনেক কম। রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন রপ্তানি বৈচিত্র্য আনতে উদ্যোগ নিয়েছেন, তবে আরও পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশে চীনা দূতাবাস এবং চায়নিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ (সিইএবি) যৌথভাবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) আওতায় বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও শিল্প সহযোগিতা জোরদার করার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। প্রদর্শনীতে প্রকৌশল, অবকাঠামো, প্রযুক্তি, লজিস্টিকস, জ্বালানি, স্বাস্থ্যসেবা ও আর্থিক বিষয়সহ বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশে চীন-সমর্থিত অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা তুলে ধরেন, যার মধ্যে পদ্মা রেল লিংক ও কর্ণফুলী টানেল অন্যতম। রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, এই রূপান্তরমূলক প্রকল্পগুলো জাতীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করেছে, শিল্প প্রবৃদ্ধিতে সহযোগিতা করেছে এবং আঞ্চলিক বাণিজ্য পথ সম্প্র্রসারিত করেছে।
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম, যারা বিআরআই-তে সাড়া দিয়েছে। তিনি জানান, গত এক বছরে বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ ২৫৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে। চীন বাণিজ্য ও বিনিয়োগে আরও সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সবুর হোসেন নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে চীনা বিনিয়োগের আহ্বান জানান। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিরানা মাহরুখ বলেন, বাংলাদেশ বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এজন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য।
এবারের প্রদর্শনীতে ৪০টি প্রতিষ্ঠানের ৮০টি বুথ অংশ নিয়েছে, যার মধ্যে ৩২টি প্রতিষ্ঠান চীনের। প্রদর্শনীতে অবকাঠামো, প্রযুক্তি, জ্বালানি, স্বাস্থ্য, কৃষি, পরিবহন, লজিস্টিকস এবং উৎপাদন খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য ও সেবা উপস্থাপন করছে। পাশাপাশি থাকছে উচ্চপর্যায়ের বিটুবি ও জিটুবি মিটিং, সেমিনার ও বিনিয়োগবিষয়ক সেশন। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য প্রদর্শনী উš§ুক্ত থাকবে।

Discussion about this post