Print Date & Time : 30 July 2025 Wednesday 4:51 am

বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ারের নিলামে সন্ত্রাসী হামলা

মীর আনিস : প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ড্রাই অ্যাশ বিক্রির দরপত্র আহ্বান করেছিল বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লি.। কিন্তু দরপত্র জমা দেয়ার আগেই ছিনিয়ে নেয় সন্ত্রাসীরা। গতকাল সোমবার রাজধানীর পান্থপথ (কারওয়ান বাজার)

এলাকায় অবস্থিত ইউনিক ট্রেড সেন্টার

(ইউটিসি) ভবনে ওই প্রতিষ্ঠানের নিলামে এই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে। প্রকাশ্য দিবালোকে এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে হতাশ হয় রাজধানীবাসী। নিকট দূরত্বেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি থাকলেও এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের আহ্বানে দেশি-বিদেশি ৯টি কোম্পানি দরপত্র কিনেছিল। দরপত্র জমা দেয়ার সময় নির্ধারিত ছিল গতকাল সোমবার বেলা ১১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিরা যথাসময়ে দরপত্র জমা দিতে এসে কারওয়ান বাজার সংলগ্ন পান্থপথের ইউটিসি ভবনে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের অফিসে ঢুকতে পারেনি। অফিসের নিচ থেকেই দরপত্রে অংশ নেয়া বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিদের ওপর হামলা শুরু হয় এবং দরপত্র ছিনিয়ে যায় একদল সন্ত্রাসী। পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও সন্ত্রাসীরা ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়ে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে।

সন্ত্রাসীরা কোম্পানির প্রতিনিধিদের ওপর হামলার তথ্য পেয়ে সেনাবাহিনীর টহল দল ঘটনাস্থলে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দরপত্র জমা দিতে আসা বাংলাদেশ-ভারত এনইএল টিডাব্লিউপিএল-এইচবিটিএল (জেভি) কোম্পানির প্রতিনিধি প্রকৌশলী মো. আসিফকে সন্ত্রাসীরা রড ও হাতুড়ি দিয়ে ব্যাপক মারধর করে দরপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় অন্যান্য কোম্পানির প্রতিনিধিদের কাছ থেকেও দরপত্র ছিনিয়ে নেয় সন্ত্রাসীরা।

বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের সাব ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার ফাহিম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ড্রাই অ্যাশ বিক্রির দরপত্র আহ্বান করেছিলাম। ৯টি দরপত্র বিক্রি হয়েছিল। সোমবার ছিল দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। কিন্তু সকাল থেকেই ৫ তলায় অবস্থিত আমাদের অফিসের সামনে ৪০-৫০ জন লোক জড়ো হয় এবং ভবনের নিচে শ’খানেক লোক জড়ো হয়ে দরপত্রে অংশ নিতে আসা কোনো ব্যক্তিকেই ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। ফলে কেউই দরপত্র জমা দিতে পারেনি।’

তিনি আরও বলেন, ঊর্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। আমরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তার জন্য পুলিশ এনেছিলাম। তারপরও এই অনভিপ্রেত ঘটনাটি এড়ানো সম্ভব হয়নি। এখন কী করা যাই তা দেখবে কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ-ভারত এনইএল টিডাব্লিউপিএল-এইচবিটিএল (জেভি) কোম্পানির প্রতিনিধি প্রকৌশলী আসিফ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমরা তিনজন দরপত্র জমা দিতে এসেছিলাম কিন্তু সন্ত্রাসীরা আমাদের পুলিশের সামনেই হাতুড়ি পেটা করে। এক কোটি টাকার পে-অর্ডারসহ দরপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমি পুনরায় দরপত্র জমা নেয়ার আহ্বান জানাই।

এ ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা রাজধানীর তেজগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে ভারত এনইএল টিডাব্লিউপিএল-এইচবিটিএল (জেভি) কোম্পানির প্রতিনিধিরা।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, ঢাকা মহানগর উত্তরের জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শেখ ফরিদ হোসেনের অনুসারীরা এ হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ঘটনার সময় শেখ ফরিদও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ ফরিদ হামলার ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন। গতকাল রাতে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমি ১২টার সময় টেন্ডার শিডিউল জমা দিতে সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু শিডিউল জমা দেয়ার সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় তা জমা দিতে পারিনি।’