শেয়ারবাজারে শেয়ারের বিপরীতে দেয়া মার্জিন লোন বা ঋণের লাগাম টানা হচ্ছে। এখন থেকে শেয়ারবাজারের ভালো মৌলভিত্তির ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি ছাড়া অন্য কোনো শ্রেণির কোম্পানির শেয়ারে ঋণ দেয়া যাবে না। এ ছাড়া শেয়ার কেনার ঋণ পেতে হলে একজন বিনিয়োগকারীর ন্যূনতম পাঁচ লাখ টাকার নিজস্ব বিনিয়োগ থাকতে হবে। এমন সব বিধান যুক্ত করে শেয়ারবাজারের মার্জিন ঋণসংক্রান্ত বিধিমালা সংশোধন করা হচ্ছে।
পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনার জন্য বিনিয়োগকারীদের মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলোর দেয়া ঋণকে মার্জিন লোন (ঋণ) বলা হয়। নিজের টাকায় একটি শেয়ার কিনলে বিনিয়োগকারীকে আরেকটি শেয়ার কেনার জন্য ঋণ দেয়া হবে। কিন্তু মার্জিন ঋণসংক্রান্ত খসড়া বিধির কিছু ধারা নিয়ে অংশীজনদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে।
খসড়া বিধিমালার যে ধারা নিয়ে সবচেয়ে বেশি আপত্তি অংশীজনদের, তা হচ্ছে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ও সংশ্লিষ্ট খাতের পিই রেশিও সীমা ৩০-এ নির্ধারণসংক্রান্ত।
খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো বিনিয়োগকারী ঋণ হিসাব খুলতে চাইলে তাকে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে ঋণ আছে কি না, সে-সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র জমা দিতে হবে। ওই ঘোষণাপত্র যাচাই-বাছাই না করে কোনো ঋণ হিসাব খুলতে পারবে না ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু অংশীজনেরা বলছেন, ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ ধরনের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে কোনো ব্যবস্থা বর্তমান বাজারে নেই। কোনো ব্যবস্থা নেই বলে তা চালু করা অযৌক্তিক, এ দাবি গ্রহণযোগ্য নয়। কয়েকটি ধারা কারও কাছে বাস্তবভিত্তিক মনে হলে তারা বাস্তবভিত্তিক ধারার প্রস্তাব দিতে পারেন।
ভালো মানের শেয়ারগুলো এখনও অবমূল্যায়িত। সংস্কার সম্পন্ন হলে ও অর্থনীতি স্থিতিশীল হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ফিরে আসবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাজার সংস্কার এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হলেও আস্থা ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও স্থানীয় অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমকে প্রভাবিত করেছে। এর ফলে বাজার ক্রমাগত মন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে।
২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ধারাবাহিকভাবে বাজার থেকে মূলধন তুলে নিয়েছিল।
আমরা মনে করি, সংস্কার সম্পূর্ণরূপে কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত বাজারের গতি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
শেয়ারবাজারের উত্থান-পতন স্বাভাবিক বিষয়। এটি সব দেশেই ঘটে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশেও হয়েছে এবং ঘুরেও দাঁড়িয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক ও অস্বস্তির বিষয় হলো, অন্য দেশগুলো পতন ঠেকাতে ব্যবস্থা নেয়। বাজার চাঙা করতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির তালিকাভুক্তিসহ ব্যাপক মুনাফা অর্জনকারী দেশি ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানকে বাজারে আনতে হবে এবং অবশ্যই শূন্য সহনশীলতায় বাজারে খেলোয়াড়দের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ অংশীজনের সমন্বিত পদক্ষেপে শেয়ারবাজার স্থিতিশীল হবে বলেই প্রত্যাশা।

Discussion about this post