Print Date & Time : 5 August 2025 Tuesday 12:08 am

বাজার পুনরুদ্ধারে তেল উৎপাদন বাড়াবে ওপেক

শেয়ার বিজ ডেস্ক : সৌদি আরব, রাশিয়া ও ওপেক প্লাস জোটের ছয়টি প্রধান সদস্য এক বৈঠকে তেল উৎপাদন আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গতকাল রোববার এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয় জোটটি। তেলের দাম স্থিতিশীল থাকা সত্ত্বেও এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো বাজারে শেয়ার পুনরুদ্ধার। ‘ভলান্টারি-৮’ বা ভি৮ নামে পরিচিত এই আটটি তেল উৎপাদনকারী দেশের জোট এপ্রিল থেকে ধারাবাহিকভাবে উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। লন্ডন থেকে এএফপি এ সংবাদ জানিয়েছে।
মূল্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে বড় পরিসরের ওপেক প্লাস জোট যেখানে ওপেকের ১২টি সদস্য দেশ এবং তাদের মিত্ররা গত কয়েক বছরে তিন ধাপে প্রতিদিন প্রায় ৬০ লাখ ব্যারেল উৎপাদন হ্রাস করেছিল।
বিশ্লেষকরা আশা করছেন, ভি৮ গোষ্ঠীর সদস্য সৌদি আরব, রাশিয়া, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাজাখস্তান, আলজেরিয়া ও ওমান আগস্টে অনুমোদিত ৫ লাখ ৪৮ হাজার ব্যারেল দৈনিক বৃদ্ধির অনুরূপ হারে সেপ্টেম্বরে উৎপাদন বাড়াতে সম্মত হবে।
ইউবিএস বিশ্লেষক জিওভান্নি স্টাউনোভো জানান, এই উৎপাদন বাড়ানোর সম্ভাবনা ইতোমধ্যে বাজারে প্রতিফলিত হয়েছে। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম বর্তমানে ব্যারেলপ্রতি প্রায় ৭০ ডলারের আশপাশে রয়েছে এবং তা স্থির থাকতে পারে।
তবে গতকাল রোববারের বৈঠকের পর ওপেক প্লাস কী নীতি গ্রহণ করবে, তা অনিশ্চিত। আইএনজি বিশ্লেষক ওয়ারেন প্যাটারসন মনে করছেন, সেপ্টেম্বরে উৎপাদন বাড়ানোর পর ভি৮ গোষ্ঠী সম্ভবত বিরতি নেবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, উৎপাদন বৃদ্ধির পরও তেলের দাম প্রত্যাশার চেয়ে বেশি স্থিতিশীল আছে,গ্রীষ্মকালীন উচ্চ চাহিদা ও ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা বিশেষ করে ইরান-ইসরায়েল ১২ দিনের যুদ্ধের পর এতে বড় ভূমিকা রেখেছে।
স্টাউনোভোর উদ্ধৃতি অনুযায়ী, মার্চ থেকে জুনের মধ্যে প্রকৃত উৎপাদন বৃদ্ধির হার কোটার চেয়ে কম ছিল। তবে অক্টোবরে বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহের ঝুঁকি রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন প্যাটারসন। ফলে ওপেক প্লাস যদি বেশি তেল সরবরাহ করে, তাহলে তা দাম কমিয়ে দিতে পারে।
পিভিএম বিশ্লেষক টামাস ভার্গা বলেন, ‘ওপেক প্লাস এখন এমন এক ভারসাম্য রক্ষা করছে যেখানে তারা একদিকে বাজার শেয়ার পুনরুদ্ধার করতে চায়, অন্যদিকে তেলের দাম কমে না যায় সেটা নিশ্চিত করতে চায়।’
সৌদি আরবকে এই গোষ্ঠীর সবচেয়ে প্রভাবশালী সদস্য মনে করা হয়, তার অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণের লক্ষ্যে তেল রাজস্বের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল।
প্রায় ৩৭ লাখ ব্যারেল দৈনিক উৎপাদন হ্রাসের আরেকটি সেট উšে§াচনের সিদ্ধান্ত আসন্ন নভেম্বরে ওপেক প্লাস মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আলোচিত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি ও ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চাহিদা অস্থিতিশীল। এর ফলে ভবিষ্যতে তেলের বাজার কোন দিকে যাবে তা বলা কঠিন।
গত জুলাইয়ের শেষ দিকে ট্রাম্প মস্কোকে ১০ দিনের আলটিমেটাম দিয়ে বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ না হলে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে।
তিনি বলেন, আমরা শুল্ক আরোপ করব। রাশিয়ান পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ হারে পরোক্ষ শুল্ক আরোপের ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি। যার মধ্যে তেল-গ্যাস রয়েছে। ২০২৫ সালে রাশিয়ান তেলের দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক (প্রায় ১৬ লাখ ব্যারেল দৈনিক) দেশ হওয়ায় ভারতের প্রতি বিশেষ নজর রয়েছে ট্রাম্পের। এ ঘটনার কারণে ওপেক প্লাস ভবিষ্যতে আরও নীতিগত পরিবর্তনের দিকে যেতে পারে।
তবে স্টাউনোভো বলেন, দাম বাড়ার পেছনে রাজনৈতিক ঝুঁকির কারণে নয়, ওপেক প্লাস শুধু বাস্তব সরবরাহ বিঘœ ঘটলে প্রতিক্রিয়া দেখাবে।