Print Date & Time : 13 September 2025 Saturday 11:32 am

বাজেট বাস্তবায়নের হার বৃদ্ধির প্রয়াস চলমান থাকুক

অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকের (৯ মাস) মধ্যে ৬০ শতাংশ অর্থ খরচ করতে না পারলে শেষ অর্থাৎ চতুর্থ প্রান্তিকের অর্থছাড় স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উদ্দেশে এ নিয়ে গত সোমবার একটি পরিপত্র জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। পরিপত্রে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো বর্তমানে এমনভাবে বাজেট বাস্তবায়ন করছে যে এতে আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাজেট বাস্তবায়নের গতি ধীর হচ্ছে, যার ধারাবাহিকতা দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকেও থাকছে। বাজেট বাস্তবায়নের হার বেশি দেখা যায় চতুর্থ অর্থাৎ শেষ প্রান্তিকে গিয়ে। এ কারণে সরকারি ব্যয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে খোদ সরকারেরই অস্বস্তি রয়েছে। সরকার প্রতি বছর জুন মাসে পরবর্তী বছরের জন্য বাজেট ঘোষণা করে। এটা একটা নিয়ম। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিদ্যমান অর্থনৈতিক কাঠামোয় কোনো পরিবর্তন না হলে সরকারের ঘোষিত বাজেট পূর্ণমাত্রায় বাস্তবায়িত হবে না।  আশার কথা, সে অবস্থা থেকে উত্তরণে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে চায়। আমাদের গৃহীত পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এ বিষয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যও ঠিক করা হয়ে থাকে। কিন্তু তাদের কোনো কিছুই সেভাবে অর্জিত হয়নি। তার বড় কারণ দেশের অবকাঠামো কিংবা বিদ্যুৎসহ অন্যান্য অপরিহার্য খাতে প্রয়োজনীয় উন্নয়ন না হওয়া। আর এসব খাতের উন্নয়ন ঘটিয়ে বেসরকারি খাতকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার মূল দায়িত্ব সরকারের। বিগত কয়েক বছর অর্থবছরের  ঘোষিত বাজেটে সরকারের উন্নয়ন ব্যয় তুলনা করলে দেখা যাবে  উন্নয়ন ব্যয়  প্রতিবারই বেড়েছে কমবেশি ২০ শতাংশ হারে। ঘোষিত বাজেটকে উচ্চাভিলাষী হিসেবে সমালোচনা না করে বরং তা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের ওপর চাপ ও পরামর্শ দেয়াই বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদদের উচিত।

বাজেটের পূর্ণ বাস্তবায়নের পথে বড় বাধা হলো প্রশাসনিক অদক্ষতা ও ক্ষমতার অভাব। অনেক বছর অর্থের সংস্থান থাকার পরও উন্নয়ন বাজেটকে কাটছাঁট করতে হয়েছে শুধু এ কারণে। নতুন পরিপত্রে সব মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের কাছে বাজেট বাস্তবায়নের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন অগ্রগতির চিত্র জানতে চাওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বাজেট বাস্তবায়ন পরিকল্পনার মধ্যে রাজস্ব আহরণ, কেনাকাটা, খরচ এবং বৈদেশিক অনুদান ও ঋণ সংগ্রহের পরিকল্পনা থাকতে হবে। প্রথম প্রান্তিকের সবকিছু ঠিকঠাকভাবে শেষ করতে না পারলে দ্বিতীয় প্রান্তিক থেকে অর্থছাড় স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। বিষয়টি সার্বিক সুশাসনের সঙ্গে জড়িত। তাই এ পরিপত্র পরিপালনের বিষয়টি আসতে হবে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক দুই দিক থেকেই। বাজেট বাস্তবায়নের এ দুর্বলতম দিক যেহেতু একধরনের ‘সংস্কৃতি’ হয়ে গেছে, ফলে শুধু কেবল পরিপত্র জারির মাধ্যমে উল্লেখ করার মতো সুফল আশা করা কঠিন। বাজেট বাস্তবায়নের হার বৃদ্ধির প্রয়াস শুরু হচ্ছে এটি প্রশংসনীয়, এটি চলমান থাকবে বলেই প্রত্যাশা।