দুটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের গ্রাহক ৩৬৮টি রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের দুই মাসের (আগস্ট ও সেপ্টেম্বর) বেতন-ভাতা পরিশোধে হাজার কোটি টাকা ধার দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে এক্সিম ব্যাংকের বিপরীতে বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ৮৮৪ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। আর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের জন্য বরাদ্দ করা ১১৭ কোটি টাকা ছাড়ের অপেক্ষায় রয়েছে। ৩৬৮টি রপ্তানিমুখী কারখানার শ্রমিকদের দুই মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধে এই অর্থছাড় করা হয়। এর মধ্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক ১১৭টি রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা; এক্সিম ব্যাংকের গ্রাহক ২৫১ রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা।
জানা যায়, ব্যাংক দুটির তৈরি পোশাক খাতের এসব গ্রাহকের রপ্তানি আয় দেশে এলেও তারল্য সংকটের কারণে সেই অর্থ রপ্তানিকারকদের পরিশোধ করতে পারছে না ব্যাংক দুটি। এমনকি ব্যাংকগুলো নতুন ঋণপত্র খুলতেও ব্যর্থ হচ্ছে। এতে তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছিল। শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারছিল না। এমন প্রেক্ষাপটে গত মাসে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই অচলাবস্থা নিরসনের অনুরোধ জানান। তারপরই ব্যাংক দুটিকে অর্থসহায়তা দেয়ার উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গতকাল গণমাধ্যমে পাঠকরা জেনেছেন. একীভূত হতে সম্মত হয়েছে তিনটি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার পর এই তিন ব্যাংক একীভূত হওয়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। তবে একীভূত হওয়ার তালিকায় থাকা অন্য দুটি ব্যাংক সময় চেয়েছে। ব্যাংক দুটি হলো এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।
দুটি ব্যাংককে নিয়ন্ত্রক সংস্থা একীভূত করবে কিনা, সেটি কতটা যুক্তিযুক্ত; কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা দেখবে। কিন্তু এখন যে ভালো অবস্থায় নেই, অর্থ ধার নেয়া থেকেই অনুমেয়। চলতি সপ্তাহে ব্যাংক পাঁচটির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ধারাবাহিক শুনানি হয়।
সময় দিলে এবং মূলধন জোগান পেলে ব্যাংক দুটির পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব কিনা, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
একীভূত প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত মূলধন-ঘাটতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছাড়িয়েছে ২ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোকে একীভূত করতে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত টাকা সরাসরি পোশাক কারখানার হিসাবে জমা করা হবে। অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এই অর্থ খরচ করা যাবে না। এটা নিশ্চিত করতে হবে এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নিবিড় তদারকি করতে হবে।
আর যেসব প্রতিষ্ঠানের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহায়তা দিতে হয়েছে, সেগুলোকেও ঋণ নয়, বরং সেগুলোর রপ্তানির প্রত্যাবসিত অর্থের বেশি যেন বেশি অর্থ দেয়া না হয়। আমরা মনে করি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনন্তকালের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য অর্থ জোগান দেয়া উচিত নয়।

Discussion about this post