Print Date & Time : 16 July 2025 Wednesday 7:00 pm

বাণিজ্যে একক দেশের ওপর নির্ভরতা কাম্য নয়

‘যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অতিনির্ভরতা, ঝুঁকিতে চট্টগ্রামের অনেক কারখানা’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে একটি সহযোগী দৈনিকে, তা বিশেষ পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের দাবি রাখে। আমাদের বাস্তবজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। আমরা দৃষ্টান্ত থাকা সত্ত্বেও সময়োপযোগী ব্যবস্থা নিই না। এ মাশুল দিতে হয় পুরো দেশকে।

পেঁয়াজ নিয়ে আমারে অভিজ্ঞতা এত তাড়াতাড়ি বিস্মৃত হওয়ার কথা নয়। পেঁয়াজের জন্য একক দেশের ওপর অতিনির্ভরতায় সাধারণ মানুষকে কেমন ভুগতে হয়েছে! সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তিরাও স্বল্পমূল্যের পণ্যের জন্য টিসিবির ট্রাকের পাশে দাড়িয়েছেন। খো প্রধানমন্ত্রীও ব্যর্থতা আড়াল করার জন্য হাস্যরসাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন। বলেছেন, ‘আমার বাবুর্চিকে বলেছি, তরকারিতে পেঁয়াজ না দিতে’। কেন এমন হয়েছে। আমরা পেঁয়াজের জন্য কেবল একটি দেশের ওপর নির্ভর ছিলাম। কোনো কারণে দেশটি পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ জারি করেছে। আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকার নিচে নামবে না।’

এখন একই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য। চট্টগ্রাম অঞ্চলের মোট পোশাক প্রতিষ্ঠানের ৭০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারনির্ভর। শেটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক বড় ঝুঁকিতে ফেলেছে চট্টগ্রামের উগ্যোক্তাদের।

তথ্যমতে, সাড়ে তিন শক আগে কোটাসুবিধায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রথম পোশাক রপ্তানি করেছিলেন এশিয়ান গ্রুপের তৎকালীন উগ্যোক্তা। ২০০৫ সালে ১ জানুয়ারি কোটাপ্রথা উঠে গেলেও ক্রেতারা ছেড়ে যাননি তাকে, বরং মার্কিন ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে পোশাকের নতুন নতুন কারখানা গড়ে তুলেছেন তিনি।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে গ্রুপটির ১৩ কারখানার ৭টিই শতভাগ পোশাক রপ্তানি করেছে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে। সব মিলিয়ে ওই গ্রুপের মোট রপ্তানির ৯০ শতাংশই রপ্তানি হচ্ছে বড় এই বাজারে। তার মতো চট্টগ্রামের উদ্যোক্তাদের যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা বেশি। এই অতিনির্ভরতাকে এখন ঝুঁকি হিসেবে খেছেন তারা। কারণ, আগামী ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাড়তি ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প।

পাল্টা শুল্কের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও দরকষাকষি চলছে। প্রতিযোগী শেগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের শুল্কহার বেশি হলে বিপদে পড়ার শঙ্কা খেছেন চট্টগ্রামের উগ্যোক্তারা।

যোগাযোগব্যবস্থাসহ নানা কারণে চট্টগ্রামে সে সময় অন্য দেশের ক্রেতারা আসতে চাইতেন না। এখন অবকাঠামোগত উন্নয়ন সক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে বাজার সম্প্রসারণ করার সুযোগ ছিল। ঢাকার কারখানাগুলো শুধু কোটার ওপর নির্ভরশীল ছিল না, অন্য দেশের ক্রেতাদের কার্যাদেশ পাওয়ার সুযোগ ছিল। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সে সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টাও করেননি। এখন একক নির্ভরতার বড় ঝুঁকিতে আছেন তারা।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্কারর নীতিমালা অনুযায়ী, ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে পোশাকে কোটাব্যবস্থা উঠে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রয়াশেও বেশি থাকায় সে সময় হাতে ব্যবসা থাকায় নতুন বাজার খুঁজতে হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোনো ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চট্টগ্রামের উগ্যোক্তাদের সম্পর্ক গড়িয়েছে দুই-তিন দশক পর্যন্ত। বড় বাজারটির ওপর অতিনির্ভরতার এটিই বড় কারণ। তারে এখন বাজারবৈচিত্র্যে নজর দিতেই হবে।