নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি স্কয়ার টেক্সটাইল পিএলসির মুনাফায় ভাটা পড়েছে। যদিও আলোচিত তিন মাসে কোম্পানির বিক্রি বেড়েছে, তবে বিভিন্ন ধরনের খরচের ভারে কোম্পানির মুনাফা কমেছে।
গতকাল বুধবার বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়েছে। এক মূল্য সংবেদনশীল তথ্যে (পিএসআই) বিষয়টি জানিয়েছে স্কয়ার টেক্সটাইল।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে স্কয়ার টেক্সটাইলের সমন্বিত বিক্রি হয়েছে ৬০৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, আগের বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ৫৭৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ আলোচিত তিন মাসে কোম্পানির বিক্রি বেড়েছে ২৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা বা ৫ শতাংশ। বিক্রি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়লেও কোম্পানির মুনাফা এ সময়ে কমেছে।
আলোচিত তিন মাসে কোম্পানির নিট মুনাফা হয়েছে ৩৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ৩৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ আলোচিত তিন মাসে কোম্পানি মুনাফা কমেছে ৪ কোটি ১ লাখ টাকা বা প্রায় ১১ শতাংশ।
স্কয়ার টেক্সটাইলের কোম্পানি সচিব সঞ্জীব বরণ রায় এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, স্টক এক্সচেঞ্জের পাশাপাশি এ-সংক্রান্ত তথ্য কোম্পানিটির ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে স্কয়ার টেক্সটাইলসের শেয়ারপ্রতি আয়ে (ইপিএস) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সামান্য ভাটা পড়েছে। এই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৬৯ পয়সা। এর বিপরীতে গত বছর সমসাময়িক প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ১ টাকা ৯০ পয়সা।
আয়ের অঙ্কে সামান্য পতন দেখা গেলেও কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি ক্যাশফ্লো (সিএফপিএস) বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। চলতি প্রথম ত্রৈমাসিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি ক্যাশফ্লো ছিল ৭ টাকা ৭ পয়সা, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৬ টাকা ৪৪ পয়সা। এই তথ্য প্রতিষ্ঠানের নগদ প্রবাহের ইতিবাচক চিত্র তুলে ধরে।
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত ৩০ সেপ্টেম্বর স্কয়ার টেক্সটাইলস পিএলসির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ৫৭ টাকা ৫৬ পয়সা। এই মিশ্র ফলাফল বিনিয়োগকারীদের জন্য কোম্পানিটির কার্যকারিতা মূল্যায়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করবে।
ডিএসইতে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে স্কয়ার টেক্সটাইল ১৪৩ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। আগের অর্থবছর কোম্পানিটি মুনাফা করেছিল ১১৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে স্কয়ার গ্রুপভুক্ত বস্ত্র খাতের এই কোম্পানির মুনাফা বেড়েছে ২৭ কোটি টাকা বা সোয়া ২৩ শতাংশের বেশি। তবে চলতি অর্থবছের শুরুতে কিছুটা হোঁচট খায় কোম্পানিটি।
গত অর্থবছরের লাভ-লোকসানের হিসাব চূড়ান্ত করার পাশাপাশি কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের জন্য ৩২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশও ঘোষণা করেছিল। ঘোষিত এই লভ্যাংশের জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৬ নভেম্বর। ওই দিন যাদের হাতে কোম্পানিটির শেয়ার থাকবে, তারা এই লভ্যাংশ পাবেন। কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আগামী ১৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্যও কোম্পানিটি ৩২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। এ বছর লভ্যাংশবাবদ বিতরণ করা হবে ৬৩ কোটি টাকা, যা কোম্পানিটির মুনাফার প্রায় ৪৪ শতাংশ। এই লভ্যাংশের মধ্যে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা পাবেন ৩৯ কোটি টাকা। কারণ কোম্পানিটির শেয়ারের প্রায় ৬২ শতাংশই রয়েছে তাদের হাতে। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ১৫ কোটি টাকা লভ্যাংশ পাবেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। গত সেপ্টেম্বর শেষে তাদের হাতে ছিল সাড়ে ২৩ শতাংশের বেশি শেয়ার। ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ বাবদ পাবেন প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা। আর বিদেশি বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ বাবদ পাবেন পৌনে দুই কোটি টাকা।
গত অক্টোবরে অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির পর্ষদ সভায় ৪০ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কোম্পানিটির আধুনিকায়ন ও স্কয়ার টেক্সকম নামে সহযোগী কোম্পানি অধিগ্রহণে এই অর্থ বিনিয়োগ করা হবে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, নতুন এই বিনিয়োগের সুফল ভবিষ্যতে কোম্পানিটি পাবে।
দেশবরেণ্য শিল্প উদ্যোক্তা স্যামসন এইচ চৌধুরীর হাতে প্রতিষ্ঠিত স্কয়ার টেক্সটাইলের বর্তমান চেয়ারম্যান তার ছেলে তপন চৌধুরী। দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গোষ্ঠী স্কয়ার গ্রুপের এই অঙ্গ প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৪ সালে গাজীপুরের কাশিমপুরের শারদাগঞ্জে প্রথম টেক্সটাইল ইউনিট প্রতিষ্ঠা করে। প্রথম ইউনিট প্রতিষ্ঠার চার বছর পর ১৯৯৮ সালে তাদের দ্বিতীয় ইউনিট চালু হয় এবং ২০০০ সালে তাদের তৃতীয় ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেন।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির মোট উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় দুই লাখ স্পিন্ডেল, ৫ হাজার ১৯২টি রোটর হেড এবং ৩ হাজার ১৬৮টি ঘূর্ণি হেড। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্কয়ার টেক্সটাইলের রপ্তানি আয় ছিল ১ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা এবং নিট মুনাফা ছিল ১০৮ কোটি টাকা।
প্রিন্ট করুন






Discussion about this post