শেয়ার বিজ ডেস্ক : বাংলাদেশে প্রথম আন্তর্জাতিক টার্মিনাল অপারেটরের অভিজ্ঞতা সুখকর নয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
বিডা চেয়ারম্যান বলেন, সৌদি আরবভিত্তিক রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল (আরএসজিটি) বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি আন্তর্জাতিক টার্মিনাল অপারেটর হলেও তাদের অভিজ্ঞতা দেশে একেবারেই সুখকর না। প্রযুক্তি, বেস্ট প্র্যাকটিস এবং গ্লোবাল প্র্যাকটিস প্রয়োগ করে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা ২০৩০ সালের মধ্যে চারগুণ বাড়ানোর লক্ষ্যও জানিয়েছেন তিনি।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, তাদের অন্য কয়েকটি দেশে অপারেট করার অভিজ্ঞতা আছে। অনেক ধরনের জটিলতার মধ্যে তারা পড়েছেন। আমরা কখনও আন্তর্জাতিক অপারেটর নিয়ে কাজ করিনি। অনেক স্টেপে জিনিসপত্র আটকে গেছে। আজকেও বেশ কিছু টেকনিক্যাল ইস্যু নিয়ে তারা সাফার করছেন। তাই প্রত্যাশিত ভলিউম হয়নি। তারা ফাইন্যান্সিং লোকালি নেবেন না ফরেন নেবেন এটা কমপ্লিটলি ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্রাকচারাল ডিসিশন। তারা বাংলাদেশ থেকে লোন নিলে টাকা ফেরত দেবেন। আমার মনে হয় না, তারা বাংলাদেশের টাকা মেরে চলে যাবে। ব্যাংকিং আইনে অ্যাকশন পজিবল।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) চার নম্বর গেটে বন্দর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ম্যাগনেটিজম টেক লিমিটেড পরিচালিত ‘শিপিং ও লজিস্টিকস অনলাইন ডেস্ক’ উদ্বোধন গত রোববার শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা বলেন। এ সময় বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সিডিডিএলের সাফল্য তুলে ধরে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড (সিডিডিএল) একটি উদাহরণ তৈরি করেছে। আমি যখন এপ্রিল-মে মাসে এখানে এসেছিলাম, তখন বলেছিলাম তখন আমাকে এই প্রশ্ন করা হয়েছিল, দেশের একজন অপারেটর তো খুব ভালো করছে, তাহলে কেন খালি খালি অপারেটর পরিবর্তন করতে হবে? এখন তো আমরা পরিবর্তন করে প্রমাণ করে দিলাম, আসলে ‘খুব ভালো’ বলতে আমরা নিজেরাও কতটুকু বুঝি সেটা জানা হলো। আইএফসির রিপোর্ট বলছে, এই পোর্ট থেকে ১.৯ মিলিয়ন টিইইউস পর্যন্ত পাওয়া সম্ভব। আর গত বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ১.৩ মিলিয়ন টিইইউস। এখন সিডিডিএল বলছে তারা এর ওপর যাবে। প্রযুক্তি, বেস্ট প্র্যাকটিস এবং গ্লোবাল প্র্যাকটিস ব্যবহার করলে এটি তার চেয়েও ওপরে যেতে পারবে।
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, এটা নিয়ে সাবজেক্টিভ জাজমেন্ট না করে সিডিডিএল ভালো করছে, কিন্তু এটা কি ‘বেস্ট’ কিনা সেটা এক্সপার্টরাই জানবেন। সুতরাং যারা নিজেরা অপারেট করে বিশ্বসেরা পর্যায়ে আছে, তাদের কাছে গিয়ে আমাদের বুঝতে হবে কোন মডেলটা দেশের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। আমাদের অনেকেরই একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে জাতীয় স্বার্থ। দেশের জন্য কোনটা ভালো হবে সেটাই করতে হবে। দেশের জন্য যদি সিডিডিএল দিয়ে আমরা সর্বোচ্চ সক্ষমতা অর্জন করতে পারি, তাহলে সেটি যথেষ্ট। যদি মনে হয়, এখানে আরও কিছু প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং গ্লোবাল বেস্ট প্র্যাকটিস আনলে আরও ভালো হতে পারে, তাহলে আমরা হয়তো সেই পথে যাব।’
আশিক চৌধুরী বলেন, ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডারিংয়ের জন্য একটি আরএসপি প্রসেস চলছে। আমাদের ইচ্ছা আছে, বছরের শেষ নাগাদÑসবগুলো পোর্টের ক্ষেত্রে, এনসিটি, লালদিয়া এবং বে টার্মিনাল এই তিনটির জন্য অন্তত প্রথম অপারেটর অ্যাপয়েন্ট করে দেয়া। এই বছরের শেষ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম অপারেটর থাকবে বে টার্মিনাল ও এনসিটিতে।
সফটওয়্যার উদ্বোধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা একটা ফ্যান্টাস্টিক ইনেশিয়েটিভ। সবকিছু অটোমেটেড হয়ে যাবে। অটোমেটেড হওয়ার দুটো সুবিধা আছে। প্রথম সুবিধা হলোÑযে কাজটি করতে দুদিন থেকে এক সপ্তাহ লেগে যেত, সশরীরে অফিসে যেতে হতো। সেটি এখন একটা বাটন ক্লিক করে ঘরে বসে করতে পারবে। সুতরাং সময় সিগনিফিকেন্টলি কমে আসছে। একই সঙ্গে আমরা যে অভিযোগটা অনেকের কাছ থেকে পাই, সেটা হলো বিভিন্ন হ্যারাসমেন্ট হয়। সেটাও অনেকাংশে কমে আসবে। এছাড়া একটা বাটন ক্লিক করে পেমেন্ট করে দেয়ার কারণে করাপশন ইনডেক্সে আমাদের রেটিং কমে আসবে। যত বেশি অটোমেট করা যাবে, তত আমাদের জন্য অ্যাডভান্টেজ (সুবিধা)।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সব সময়ই বলে এসেছি, বাংলাদেশের এ বন্দরকে অবশ্যই বিশ্বমানে শীর্ষ পর্যায়ে থাকতে হবে, যা আমাদের জাতীয় স্বার্থের জন্য জরুরি। সেই পর্যায়ে থাকার জন্য আমাদের বেস্ট অপারেটর আনতে হবে।’
বিডা চেয়ারম্যান বলেন, বন্দরের চলমান সংস্কার শেষ হলে দুর্নীতি ও হয়রানি কমে আসবে। এ সময় তিনি আরও জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আরও কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে।

Discussion about this post