Print Date & Time : 4 July 2025 Friday 10:48 am

বিদায়ী অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসের প্রত্যেক মাসেই পণ্য রপ্তানি বেড়েছে। তবে গত জুনে রপ্তানি কমেছে সাড়ে ৭ শতাংশ। এ কারণে সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি প্রবৃদ্ধি এক অঙ্কের ঘরে রয়ে গেল।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল বুধবার পণ্য রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছরে ৪ হাজার ৮২৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এই রপ্তানি তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি হয়েছিল ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ডলার।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, গত জুনে রপ্তানি হয়েছে ৩৩৪ কোটি ডলারের পণ্য। এই রপ্তানি গত বছরের জুনের তুলনায় সাড়ে ৭ শতাংশ কম। গত বছরের জুনে রপ্তানি হয়েছিল ৩৬১ কোটি ডলারের পণ্য।

ইপিবির ভাইস-চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, গত জুনের প্রথম সপ্তাহে পবিত্র ঈদুল আজহায় দীর্ঘ ছুটির কারণে পণ্য রপ্তানি হয়নি। আবার মাসের শেষ দিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কমপ্লিট শাটডাউনের কারণে ২৬ ও ২৭ জুন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিল। মূলত এই দুই কারণে জুনে পণ্য রপ্তানি কমেছে।

এর আগে মে মাসে রপ্তানি আয় ছিল ৪৭৪ কোটি ডলার এবং এপ্রিল মাসে ছিল ৩৯২ কোটি ডলার। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এপ্রিলের ধীরগতি কাটিয়ে মে মাসে রপ্তানিতে ঘুরে দাঁড়ানো এবং বছরের শেষে কিছু বাধা সত্ত্বেও মোট রপ্তানি আয়ের এ প্রবৃদ্ধি দেশের রপ্তানি খাতে একটি ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনীতির নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এই প্রবৃদ্ধি অর্জন বাংলাদেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতার প্রতিফলন।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্ল্যাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে ১৬ দশমিক ২১ শতাংশ। পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ, কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ২ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং হোম টেক্সটাইল রপ্তানিতে ২ দশমিক ৪২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বিদায়ী অর্থবছরে। কৃষিপণ্যের রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৯৮ কোটি ৮৬ লাখ ডলারে।

বিদায়ী অর্থবছরে তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত থেকে এসেছে ৩ হাজার ৯৩৪ কোটি ডলার, যা এর আগের অর্থবছরের পোশাক খাতের রপ্তানি আয়ের ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি।

তৈরি পোশাক খাতের মধ্যে নিটওয়্যার রপ্তানি ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। যেখানে ওভেন পোশাক রপ্তানি ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৮১৮ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অন্যান্য উল্লেখযোগ্য খাতের মধ্যে চামড়া, চামড়াজাত পণ্য ও হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি বেড়েছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ১০ দশমিক ১৯ শতাংশ। জুলাই-জুন সময়ে রপ্তানি হয়েছে ১১৪ কোটি ৫০ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য।
গত অর্থবছরের জুলাই-জুন সময়ে হোম টেক্সটাইল ২ দশমিক ৪২ শতাংশ বেড়ে ৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

তবে পাটজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ৪ দশমিক ১০ শতাংশ এবং কাচজাত পণ্য রপ্তানিতে ৩৮ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।

রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির ফলে দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ করা তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বুধবার দিন শেষে দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩ হাজার ১৭১ কোটি ডলার। আইএমএফের নির্দেশনা মেনে বিপিএম ৬ পদ্ধতিতে হিসাবায়ন করা হলে এই রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৬৮ কোটি ডলার।

প্রাপ্ত তথ্যে আরও দেখা যায়, বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদেশ থেকে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এ অর্থবছরে দেশে সব মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার ৩৩ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। দেশের ইতিহাসে এর আগে কোনো অর্থবছরে এত রেমিট্যান্স আসেনি।

আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৬ বিলিয়ন বা ২৭ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন তারা।

রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে ডলার সংকট কেটে গেছে। পাশাপাশি দেশের লেনদেন ভারসাম্যের চিত্রও বদলে গেছে। চলতি হিসাবে বড় ধরনের যে ঘাটতি ছিল, তার অনেকটাই কমে এসেছে, যা স্বস্তি দিচ্ছে বৈদেশিক বাণিজ্যে। এছাড়া ডলারের বাজার স্থিতিশীল হওয়ায় আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতি আটকে গেছে।

এদিকে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে তথা ব্যাংকগুলোতে ডলার এখন ১২৩ টাকার মধ্যে লেনদেন হচ্ছে। আমদানিতেও ডলারের একই দাম পড়ে বলে জানা গেছে।