শেয়ার বিজ ডেস্ক : গেল অক্টোবরে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দেশের পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগ করার থেকে শেয়ার বিক্রি করেছেন বেশি। অন্তত ১৬৯ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রির বিপরীতে তারা কিনেছেন মাত্র সোয়া দুই কোটি টাকার। যদিও টাকার অঙ্কে তাদের বিক্রির পরিমাণ ঢাকার পুঁজিবাজারে মোট কেনাবেচার তুলনায় ছিল সামান্য, মাত্র দেড় শতাংশ।
বিনিয়োগকারীর ধরন অনুযায়ী তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে শেয়ার ধারণে হালনাগাদ তথ্য পর্যালোচনায় এমন প্রবণতা পাওয়া গেছে। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির মধ্যে ৩৪টি থেকে বিদেশি এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের শেয়ার কমেছে। এসব শেয়ারের মোট মূল্য ছিল অন্তত ১৬৯ কোটি টাকা। বিপরীতে ১৩ কোম্পানিতে বেড়েছে। বাজারমূল্যে এসব শেয়ারের দাম ছিল সোয়া দুই কোটি টাকা।
গত অক্টোবরে ঢাকার পুঁজিবাজার ডিএসইতে মোট ১১ হাজার ১৯ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির মধ্যে ৩০৩টি দর হারায়। বিপরীতে দর বেড়েছিল ৫০টির। এতে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ২৯৩ পয়েন্ট হারায়। চলতি নভেম্বর মাসেও পুঁজিবাজারে দর পতনের ধারায় আছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিদেশিদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে স্কয়ার ফার্মার শেয়ার। কোম্পানিটি থেকে বিদেশি বা প্রবাসীদের শেয়ার কমেছে ২৪ লাখ ৮২ হাজার, যা মোট শেয়ারের শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ। এই শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৫৩ কোটি টাকা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ২০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে এমজেএল বাংলাদেশের। কোম্পানিটি থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কমেছে ২১ কোটি ২২ লাখ। তৃতীয় সর্বোচ্চ সোয়া ১২ কোটি টাকার শেয়ার কমেছে দেশীয় বেসরকারি ব্যাংক সিটি থেকে। এ কোম্পানি থেকে বিদেশিদের শেয়ার কমেছে ৫০ লাখ ২০ হাজার।
এ ছাড়া ব্র্যাক ব্যাংকের প্রায় ১১ কোটি টাকার (১৫ লাখ ৯২ হাজার শেয়ার), প্রাইম ব্যাংকের সোয়া ১০ কোটি টাকার (৩৯ লাখ ৪৬ হাজার শেয়ার), বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের সোয়া ১০ কোটি টাকার (৭ লাখ ৬৭ হাজার শেয়ার), আইডিএলসি ফাইন্যান্সের পৌনে ১০ কোটি টাকার (২৫ কোটি ৭৫ লাখ শেয়ার) এবং মারিকো বাংলাদেশের পৌনে ১০ কোটি টাকার (৩৪ হাজার ৬৫০টি) শেয়ার কমেছে। অন্যদিকে গ্রামীণফোনের সাড়ে সাত কোটি টাকার (২ লাখ ৭০ হাজার শেয়ার), বার্জার পেইন্টসের সোয়া ছয় কোটি টাকার (৪৪ হাজার ১৯৫ শেয়ার), ডিবিএইচের তিন কোটি ৬৪ লাখ টাকার (৯ লাখ ৯৪ হাজার শেয়ার), অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের পৌনে তিন কোটি টাকার (১ লাখ ৮০ হাজার শেয়ার), লাফার্জ হোলসিমের আড়াই কোটি টাকার (৪ লাখ ৬৫ হাজার শেয়ার) এবং বিএসআরএম স্টিলের দুই কোটি টাকার (৩ লাখ ৭৬২টি শেয়ার) বিক্রি হয়েছে বিদেশিদের অ্যাকাউন্ট থেকে।
অন্তত এক কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার বিক্রি হয়েছে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট, বিএসআরএম লিমিটেড, লিন্ডে বিডি ও উত্তরা ব্যাংকের।
বেশ কিছু কোম্পানি থেকে বিদেশি বা প্রবাসীদের শেয়ার বিক্রির বিপরীতে অল্প কিছু কোম্পানিতে তাদের শেয়ার বেড়েছে। এর মধ্যে শীর্ষে ছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জ্বালানি তেল সরবরাহকারী কোম্পানি যমুনা অয়েল। কোম্পানিটিতে বিদেশি বা প্রবাসীদের শেয়ার বেড়েছে ৪৪ হাজার ১৭০টি। গত অক্টোবর শেষের বাজারমূল্য অনুযায়ী যার মোট বাজারমূল্য ছিল ৮৩ লাখ টাকা। এ ছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংকে ১৬ লাখ ৯ হাজার শেয়ার বেড়েছে, যার বাজারমূল্য ৪৭ লাখ টাকা। এনভয় টেক্সটাইলে শেয়ার বেড়েছে ৬৭ হাজার ৯৪টি, যার বাজারমূল্য ৩৫ লাখ টাকা।
গত মাসে ভালো-মন্দ নির্বিচারে সব ধরনের সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। ফলে বিদেশি বা প্রবাসীরা যেসব কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করেছেন বা কিনেছেন, তার আলাদা কোনো প্রভাব বাজারে ছিল না। তবে এর মধ্যেও ব্যতিক্রম দেখা গেছে। বিদেশিরা বিক্রি করলেও দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ক্রয়ে বেড়েছে বিএসআরএম স্টিল এবং সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের শেয়ারদর।
এস এস/
