দেশের বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার বিডা আয়োজিত ওয়েবিনারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা বলেছেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের প্রধান সমস্যা দুর্নীতি।’ উপদেষ্টা সঠিক কথাই বলেছেন। সরকারের উচিত হবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যেকোনো পর্যায়ের দুর্নীতি ও লুণ্ঠনে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করা, পতিত সরকারের মন্ত্রী, সচিব, পরামর্শক, উপদেষ্টাসহ সব ‘জ্বালানি অপরাধীর’ বিচার নিশ্চিত করা এবং ভারতের আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করে সময়োপযোগী করা।
বিদ্যুৎ খাতে দ্রুত ৪০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়ের সুযোগ আছে বলে বিশ্লেষকরা মত প্রকাশ করেছেন। যেমন, ৪০টি ফার্নেস তেলভিত্তিক কেন্দ্র বাতিল ও আটটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কেন্দ্রভাড়া ডলারের বদলে টাকায় হিসাব করে ২০ হাজার কোটি টাকা কমানো যায়।
আমরা জানি, বেসরকারি খাতকে উৎসাহী করা, বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেওয়া, এলএনজি আমদানি, বিদ্যুতের দাম বারবার বাড়ানো এবং উৎপাদন না করেও কেন্দ্রভাড়া দেয়ার ঘটনা ঘটেছে গত ১৫ বছরে। ঋণনির্ভর প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এসব চালিয়ে যেতে জনস্বার্থবিরোধী আইন করা হয়েছে। অবস্থার উত্তরণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য কমাতে স্বল্প মেয়াদে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া; বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে অন্যায্য কেন্দ্রভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ) প্রদানে ভর্তুকি বন্ধ করে মূল্যবৃদ্ধির চাপ কমাতে হবে; রূপপুর, মাতারবাড়ী, রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রকল্পের অনিয়ম ও চুক্তি পর্যালোচনা করে বাতিল বা সংশোধনের ব্যবস্থা নেয়া; রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করা এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র নিশ্চিত করা এবং সৌরবিদ্যুতের যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করার বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে।
নির্মাণব্যয় ছাড়াও বিনা দরপত্রে লাইসেন্স নেয়ার ক্ষেত্রে অনৈতিক লেনদেনের সুবিধাভোগী কে বা কারা ছিল, তাও খুঁজে দেখতে হবে আগে। মাস কয়েক আগে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্সকে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বলেছিলেন, আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা করবে বাংলাদেশ সরকার। সে সময় তিনি বলেছেন, ‘চুক্তিতে অসংগতি পাওয়া গেলে তা নিয়ে পুনরালোচনা করা হবে। দুর্নীতি বা ঘুষের মতো গুরুতর অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে চুক্তি বাতিল করা হবে।’
বিদ্যুৎ খাতে যে চুরি, লোপাট ও দুর্নীতি হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। একটি প্রতিষ্ঠিত সত্যকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগই নেই বলে আমরা মনে করি। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ নিয়ে একপ্রকার সিদ্ধান্তহীনতা লক্ষণীয়। কখনও নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে নতুন করে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে বলা হচ্ছে, মোট ক্ষমতার প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎকেন্দ্রই অলস পড়ে আছে। এর পরও সরকারঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় অর্থ লোপাট ও জনদুর্ভোগ কমাতে বিদ্যুৎ চুরির পাশাপাশি অব্যবস্থাপনা রোধে অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবে বলেই প্রত্যাশা।