Print Date & Time : 13 September 2025 Saturday 1:06 pm

বুদ্ধ মহাধাতু চৈত্যে স্মরণকালের সেরা প্রব্রজ্যা ও কঠিন চীবর দান

অসীম বিকাশ বড়ুয়া, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার মরিয়মনগরের বুদ্ধ মহাধাতু চৈত্য বিহারে আগামী ১৬ ও ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এক ঐতিহাসিক ও বৌদ্ধিক আয়োজন। বিশ্বরত্ন প্রতিসম্ভিদাসহ ষড়ভিজ্ঞ ‘অর্হৎ অনুবুদ্ধ’ পরম কল্যাণ মিত্র ভদন্ত শীলানন্দ মহাস্থবির ধুতাঙ্গ ভান্তের প্রতিষ্ঠিত এই বিহারে ষষ্ঠবারের মতো দানোত্তম শুভ কঠিন চীবর দান উদ্যাপন ও ৫০০ বৌদ্ধ কুলপুত্রকে প্রব্রজ্যা প্রদান করা হবে। এই মহৎ আয়োজনকে ঘিরে সমগ্র বৌদ্ধ সমাজে এক আনন্দ ও উদ্দীপনা বিরাজ করছে।

দুই দিনব্যাপী এই মহতী অনুষ্ঠানে প্রব্রজ্যা প্রদান ছাড়াও থাকছে বুদ্ধ প্রতিবিম্ব জীবন্যাস, বুদ্ধবিহার উৎসর্গ, সংঘদান, অষ্টপরিষ্কার দান এবং কল্পতরু দান। সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো, খাগড়াছড়ি হতে আগত বেইন বুননশিল্পীরা এসে তুলা থেকে সুতা তৈরি করে চীবর বুনন ও রঙ করার পুরো প্রক্রিয়াটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সম্পন্ন করা হবে, যা কঠিন চীবর দানের এক অনন্য রীতি। এই বৃহৎ কর্মযজ্ঞ সফল করতে উদ্যাপন কমিটির সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকরা নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই আয়োজন স্মরণকালের সেরা অনুষ্ঠানে রূপ নিতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এই অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ নিঃসন্দেহে ধুতাঙ্গ ভান্তে শীলানন্দ মহাস্থবির। যিনি ১২ বছর ধরে ১৩ প্রকার কঠোর ধুতাঙ্গ শীল অনুশীলনের মাধ্যমে বুদ্ধের প্রকৃত ধর্ম উপলব্ধি করেছেন। তার ত্যাগ ও কঠোর সাধনার ফলস্বরূপ তিনি আজ বিমুক্ত সুখের অধিকারী এবং দেব-মানবের মঙ্গলের জন্য দিক-দিগন্তে ধর্ম উপদেশ বিতরণ করে যাচ্ছেন।

২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বুদ্ধ মহাধাতু চৈত্য বিহারটি অল্প সময়ের মধ্যেই দেশ-বিদেশের বৌদ্ধ অনুসারীদের কাছে এক পবিত্র তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে এই মনোরম ও আকর্ষণীয় স্থানটি দেখতে। তারা শুধু বিহারের সৌন্দর্য উপভোগ করতেই আসে না, বরং ধুতাঙ্গ ভান্তের সান্নিধ্য পেতে এবং তার অমৃতময় ধর্ম দেশনা শুনতে ছুটে আসে।

এই মহতী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য প্রব্রজ্যাপ্রার্থীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। একজন প্রব্রজ্যাপ্রার্থী বলেন, ‘আমার জীবনের বড় আশা ছিল ধুতাঙ্গ ভান্তের সান্নিধ্যে প্রব্রজ্যা নেব। সেই ইচ্ছা পূরণ হতে যাচ্ছে ভেবেই আমি যারপরনাই আনন্দিত।’ বহু বিপথগামী ও দুঃখী মানুষ ধুতাঙ্গ ভান্তের সান্নিধ্যে এসে নতুন জীবন খুঁজে পেয়েছে। ধুতাঙ্গ ভান্তে এমন এক জীবন দর্শন গড়ে তুলেছেন, যেখানে জগতের সব প্রাণীর মঙ্গল কামনা করা হয়।

আয়োজক কমিটি এই অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ জনসাধারণকে উপস্থিত থাকার জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছে।

প্রয়োজনীয় তথ্য

প্রব্রজ্যার জন্য নির্দেশনা: প্রব্রজ্যাপ্রার্থীদের প্রব্রজ্যার এক মাস আগে ধুতাঙ্গ ভান্তের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন বিহারে নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর জমা দিতে হবে। দুই সপ্তাহ আগে শ্রদ্ধাদান জমা দিয়ে পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে হবে। ১৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার আগে চুল কেটে বুদ্ধ মহাধাতুচৈত্য বিহারে উপস্থিত থাকতে হবে।

যোগাযোগের ঠিকানা

ধুতাঙ্গ কুটির: ০১৫৫০০৬০০০৩, বুদ্ধ মহাধাতু চৈত্য: ০১৫১৭৯৯৭১১৩৮

অনুষ্ঠানের স্থান: চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলাধীন মরিয়মনগরের গুমাইবিল। বাস টার্মিনাল বা কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে বাস বা সিএনজিযোগে মরিয়মনগর চৌমুহনী হয়ে কাপ্তাই রাস্তার উত্তর পাশে।