Print Date & Time : 25 November 2025 Tuesday 12:53 pm

বেক্সিমকোর সালমান ও নাসার নজরুলের জমি ক্রোক

নিজস্ব প্রতিবেদক : ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ১২ একর ১৬ শতাংশ (৩৬ বিঘা) জমি ক্রোক ও একটি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ (স্থগিত) করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন, আত্মসাৎ ও স্থানান্তরের অভিযোগে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. সাব্বির ফয়েজ এ আদেশ দেন।

গতকাল সোমবার দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানান। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন এসব সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজ চেয়ে আবেদন করেন। এছাড়া নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের ঢাকার গুলশান, আশুলিয়া এবং নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের থাকা ৪৪ কোটি ৭৮ লাখ ৮৭ হাজার টাকার জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। ক্ষমতার অপব্যবহার দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের অভিযোগের তার জমি জব্দের আদেশ দেন আদালত।

সাজ্জাদ হোসেনের আবেদনে বলা হয়, সালমান এফ রহমানসহ ৩০ আসামি ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরস্পর সহযোগিতায় প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে আইএফআইসি ব্যাংকের প্রিন্সিপ্যাল শাখার মর্টগেজ দেয়া সম্পত্তির অস্বাভাবিক অতি মূল্যায়ন করে জনসাধারণের কাছে বন্ড বিক্রি করেন। বন্ড বিক্রির মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের ১ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করে শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের জেডসিবি চলতি হিসাবে জমা করেন। পরে সেখান থেকে রিডেম্পশন অ্যাকাউন্টে ২০০ কোটি টাকার এফডিআর করে অবশিষ্ট ৮০০ কোটি টাকা (সরকারি অর্থ) বেক্সিমকো ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডসহ বেক্সিমকো গ্রুপ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর করেন। সেখান থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে নগদে ও বিভিন্ন রকম সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। আত্মসাৎ করা অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে লেয়ারিং করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়।

মামলা তদন্তে রেকর্ড পর্যালোচনায় আসামি ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান শ্রীপুর টাউন শিপ লিমিটেডের নামে গাজীপুরে ১২ একর ১৬ শতাংশ স্থাবর ও একটি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়া যায়। তদন্তে জানা গেছে, আসামিরা ব্যাংক হিসাবের অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর এবং স্থাবর সম্পদ অন্যত্র হস্তান্তর বা স্থানান্তরের মাধ্যমে মালিকানা পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন। এজন্য এসব সম্পদ হস্তান্তর ও স্থানান্তর করতে না পারেন সে লক্ষ্যে স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ ও ব্যাংক হিসাবটি ফ্রিজ করা দরকার।

এদিকে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের ঢাকার গুলশান, আশুলিয়া এবং নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের থাকা ৪৪ কোটি ৭৮ লাখ ৮৭ হাজার টাকার জমি জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। এর মধ্যে গুলশানের ৬৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ জমির মূল্য ২৬ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে। গতকাল এ আদেশ দেন ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ বিচারক মো. সাব্বির ফয়েজ। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানান, এ দিন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ এসব সম্পত্তি জব্দ চেয়ে আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৭৮১ কোটি ৩১ লাখ টাকা সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক মামলা করেছে। গত ৬ মার্চ ও ১৮ নভেম্বর আদালত তার নামে কিছু সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার আদেশ দেয়। এর বাইরে এসব সম্পদের  খোঁজ পাওয়া যায়।

শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধসহ নাসা গ্রুপের অন্যান্য পাওনাদি পরিশোধের কথা বলে নজরুল ইসলাম মজুমদার তার অবৈধ সম্পত্তি বিক্রির চেষ্টা করছেন উল্লেখ করে আবেদনে বলা হয়, মামলা নিষ্পত্তির আগে এসব অবৈধ সম্পত্তি হস্তান্তর, স্থানান্তর, রূপান্তর বা বিক্রি হয়ে গেলে রাষ্ট্রের ‘সমূহ ক্ষতির’ কারণ রয়েছে। অবিলম্বে এসব সম্পদ জব্দ করা আবশ্যক।

উল্লেখ্য, ক্ষমতার পালাবদলের পর গত বছরের ২ অক্টোবর নজরুল ইসলাম মজুমদারকে রাজধানীর গুলশানে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তার আগে ব্যাংক খাতে পরিবর্তনের অংশ হিসেবে গত ২৯ আগস্ট এক্সিম ব্যাংকে তাকে বাদ দিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে বিএবির নেতৃত্বও হারান তিনি।

নজরুল ইসলাম ২০০৭ সাল থেকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। তিনি ২০০৯ সাল থেকে ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান পদে ছিলেন।

বিএবি চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকার সময় বেসরকারি ব্যাংক থেকে চাঁদা তুলে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করা নিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি।

ব্যাংক থেকে নানা সময় চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক কোম্পানি আইন পরিবর্তন করে উদ্যোক্তাদের সুবিধা বাড়ানো ও নীতি পরিবর্তনে ভূমিকা রাখার অভিযোগও রয়েছে।

পোশাক রপ্তানির আড়ালে ‘মানিলন্ডারিং’-এর মাধ্যমে প্রায় ৩০ লাখ ডলার যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের অভিযোগে নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।