প্রতিনিধি, বেনাপোল (যশোর) : দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্য রাখার স্থানগুলো এবং বন্দরের বাইরে পুরোনো বাউন্ডারি প্রাচীর ও পুরোনো ইমারতের পরিত্যক্ত সামগ্রী ভাঙা ইট, ইটের খোঁয়া, পিলারের ভগ্নাংশসহ বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনায় ভরে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা এসব অনির্মাণ সামগ্রী-আবর্জনা বন্দর অভ্যন্তরে পণ্য রক্ষণাবেক্ষণে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়ে সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের এ বেনাপোল বন্দর।
এ বিষয়ে বন্দর ব্যবহারকারী সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি সাজেদুর রহমান জানান, বন্দরে আমদানি পণ্যের মধ্যে বর্জ্য স্তূপ এবং অনির্মাণসামগ্রী পড়ে থাকায় পণ্য খালাসে দুর্ভোগ ও জায়গা সংকট তৈরি হচ্ছে। বারবার বন্দর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হলেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর হলো বেনাপোল। সরকার এ বন্দর থেকে বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে থাকে। এত বড় বাণিজ্যিক স্থাপনায় বছরের পর বছর এই দুর্দশা চললেও সরকারেরর পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।
বেনাপোল হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজিঃ-৯২৫) সাধারণ সম্পাদক মো. সহিদ আলী বলেন, এ বন্দরে বছরে ২২ থেকে ২৪ লাখ টন পণ্য আমদানি হয়। এসব পণ্য সংরক্ষণে রয়েছে ৩৩টি শেড ও তিনটি ওপেন ইয়ার্ড, একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড। কিন্তু ভগ্ন ইমারতের অনির্মাণসামগ্রী ভাঙা ইট, ইটের খোঁয়া, পিলারের ভগ্নাংশসহ বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনায় ভরে উঠেছে বন্দরের ভিতরকার ইয়ার্ডগুলো। সাপ-বিচ্ছুর ভয়ে নির্ভয়ে কাজ করতে পারে না কুলি (শ্রমিক) সদস্যরা। এগুলো দ্রুত অপসারণ করা জরুরি।
অপরদিকে, বন্দর সংলগ্ন এবং বেনাপোল চেকপোস্টের সন্নিকটে আন্তর্জাতিক মানের নির্মিত বেনাপোল পৌর বাস টার্মিনালের ভেতরকার অবস্থা একইরকম। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ টার্মিনালটি নির্মাণ করা হয়েছে পাসপোর্ট প্যাসেঞ্জারদের আনয়নকারী দূরপাল্লার বাস রাখার জন্য। অথচ সেখানে সাপ-বিচ্ছুর বাসা এবং ঝোপঝাড়ে ছেয়ে আছে টার্মিনালটি।
পোর্ট কর্তৃপক্ষ এটা দেখেও দেখে না। ভগ্ন ইমারতের অনির্মাণসামগ্রী ভাঙা ইট, ইটের খোঁয়া, পিলারের ভগ্নাংশসহ বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনায় ভরে উঠেছে সমগ্র বাস টার্মিনাল এরিয়া। যে কারণে রাজধানী ঢাকা কিংবা দেশের অন্যান্য স্থান থেকে ছেড়ে আসা দূরপাল্লার বাসগুলো টার্মিনাল অভ্যন্তরে না রেখে টার্মিনাল সংলগ্ন মহাসড়কে রাখতে বাধ্য হয়।
কয়েকটি পরিবহন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাড়ি পার্কিংয়ের সময় ওইসব বর্জ্য স্তূপের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে কোটি টাকার গাড়ির ক্ষতি সাধন হয়ে থাকে। দ্রুত বর্জ্য অপসারণ চান এসব পরিবহন মালিকরা।
উল্লেখ্য, স্মারক নং ১৮.১৫.৪১৯০.০২৫.০৩.০০৮.২০২৪-৭০ তারিখ: ৩১-০৮-২০২৫ইং, স্পট নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেয় বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। দরপত্রে বলা হয়Ñ বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের আওতাধীন ‘বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট-১’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বেনাপোল স্থলবন্দরের বাউন্ডারি ওয়ালের নির্মাণস্থল হতে বন্দর এলাকায় প্রাপ্ত পুরোনো নির্মাণসামগ্রী/মালামাল (যেখানে যে অবস্থায় আছে) স্পট নিলামের মাধ্যমে বিক্রির জন্য গত ৪ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় আর্ন্তজাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবনের (২য় তলা) সম্মেলন কক্ষে স্পট নিলাম কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।
স্পট নিলামের পরবর্তী কার্যক্রম জানতে বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক মো. শামীম হোসেনের স্মরনাপন্ন হলে, তাকে না পেয়ে সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিচালক (ট্রাফিক) রাশেদুল সজীব নাজিরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্পট নিলামে অফিসিয়াল ভ্যালু (মূল্য) না আসায় স্পট নিলাম কমিটির প্রধান বন্দর পরিচালক শামীম হোসেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট বিষয়টি জানালে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পত্রিকায় ‘ওপেন টেন্ডার’ বিজ্ঞপ্তি দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে উপপরিচালক রাশেদুল সজীব নাজির জানান।