প্রতিনিধি, বেনাপোল (যশোর) : যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে প্রতারণা, ছিনতাইকারীদের সর্দার সোয়েবসহ বিভিন্ন মামলার ১১ আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে।
এদের মধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি রয়েছে ৮ জন এবং নিয়মিত মামলার আসামি ৩ জন।
বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি রাসেল মিয়া সোমবার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত বেনাপোল থানা এলাকায় বিশেষ এ অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তী সময় আসামিদের পুলিশ পাহারায় আদালতে সোপর্দ করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ছিনতাই ও প্রতারণা মামলার আসামিরা হলেনÑ বেনাপোল পোর্ট থানার বড়আঁচড়া গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে সোয়েব আক্তার, আনোয়ারের ছেলে বাবু, নজরুল ইসলামের ছেলে মাসুম, সাদিপুর গ্রামের মিয়ারাজ হোসেনের ছেলে ইশরাত, গাতিপাড়া গ্রামের জমির হোসেনের ছেলে মোমিনুর, তালশাড়ি গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে নজরুল, গোপালগঞ্জের বাগেরবাড়ি এলাকার সালাউদ্দিন শেখের ছেলে মাসুম শেখ ও ভবারবেড় গ্রামের মুন্সি ব্যাপারীর ছেলে আবু সাঈদ ব্যাপারী।
অপরদিকে গ্রেপ্তারকৃত নিয়মিত মামলার আসামিরা হলোÑপোর্টথানার পুটখালী গ্রামের আকরম আলীর ছেলে রনি হোসেন, বড়আঁচড়া গ্রামের আহম্মদ আলীর ছেলে ইসমাইল হোসেন ও ইসমাইলের ছেলে তহিদুল ইসলাম।
বেনাপোল বন্দর চেকপোস্ট ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আলী আশরাফ জানান, গ্রেপ্তারকৃত ছিনতাই ও প্রতারণা মামলার আসামিরা মারাত্মক অপরাধের সঙ্গে জড়িত। সীমান্তে ক্যানসারসহ জটিল রোগে আক্রান্ত অসহায় পাসপোর্টধারীদের জিম্মি করে সঙ্গে থাকা টাকা ছিনিয়ে নিত। প্রায় এক যুগ ধরে এ চক্রটি বেনাপোল চেকপোস্টে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অপরাধ করে আসছিল। গত বছরের আগস্টের পর এদের ধরতে বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ী সমিতি পুলিশকে জানায়। কিন্তু এরা আটকের কিছুদিন পর ছাড়া পেয়ে আবার প্রতারণায় যুক্ত হয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী উজ্জ্বল জানান, ছিনতাইকারীদের মধ্যে ছাত্রলীগ কর্মী সোয়েব ভয়নক প্রকৃতির। এদের হাতে প্রতারণার শিকার হয়ে অনেক পাসপোর্টধারী জীবন হারিয়েছেন। বিগত সরকারের আমলে প্রতারণার রাজত্ব গড়ে তোলে সীমান্তে। আর এখন বর্তমান সরকার সমর্থিত দলের নেতাদের প্রশ্রয়ে অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে।
গত ২১ ডিসেম্বর ভারতে যাওয়ার সময় এ চক্রটির প্রতারণার শিকার হয় ঢাকা কদমতলীর সারই মসজিদ রোড ধানিয়া এলাকার অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মনোজ কুমার। মেয়ে অবন্তী করকে সঙ্গে নিয়ে চিকিৎসার জন্য বেনাপোল বন্দরে এসেছিলেন। এ সময় সোয়েব তার চক্রের সদস্যরা পরিবহন স্টাফ পরিচয়ে ইমিগ্রেশন সংলগ্ন ওয়ান ব্যাংকের এটিএম বুথের পাশে নিয়ে জিম্মি করে। পরে মেয়েকে প্রাণনাশের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় ৩৫ হাজার টাকা। এ ঘটনায় মনোজ কুমারের মেয়ে অবন্তী করের দায়ের করা এজাহারে ওই দিন পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বেনাপোল পোর্ট থানার বড় আঁচড়া গ্রামের গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে শোয়েব আক্তার, জাবের শেখের ছেলে শেখ রাহাদ অন্তর ও ইউসুফ আলীর ছেলে আব্দুল কাদেরকে গ্রেপ্তার করে। এদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় ছিনিয়ে নেয়া টাকার মধ্যে মাত্র ১৩ হাজার। তবে ছিনতাই করা টাকা সব ফেরত না পাওয়ায় ভারতে চিকিৎসা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে এ শিক্ষকের। দুশ্চিন্তায় পড়ে হƒৎক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যায় মনোজ কুমার। এ সময় চেকপোস্ট এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ জানান ভুক্তভোগী অবন্তী কর।

Discussion about this post