শেয়ার বিজ ডেস্ক : চীনা বিনিয়োগকারী খাইশি গ্রুপ আবারও বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। গতকাল সোমবার তারা ৪ কোটি ৫ লাখ ডলার বিনিয়োগের জন্য একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। একই দিন চীনের লেসো গ্রুপ ৩ কোটি ২৮ লাখ ডলার বিনিয়োগের কথা জানায়। অর্থাৎ চীনের এই দুই গ্রুপ থেকে বিনিয়োগ আসছে ৭ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৯০০ কোটি টাকা (১২২ টাকা প্রতি ডলারের দর অনুযায়ী)।
এ বিনিয়োগে তারা অন্তর্বাস (লেঁজেরি) ও সংশ্লিষ্ট পণ্য তৈরি করবে। বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) এবং খাইশি গ্রুপের প্রতিষ্ঠান খাইশি গার্মেন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান। বেপজার সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. আশরাফুল কবীর এবং খাইশি গার্মেন্টস বাংলাদেশের চেয়ারম্যান জিয়াও হংজি নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
নতুন প্রকল্পের আওতায় প্রতিষ্ঠানটি বছরে ১ কোটি ৮০ লাখ জোড়া লেঁজেরি ও আন্ডারগার্মেন্টস এবং ২ কোটি জোড়া ব্রা ফোম ও ব্রা কাপ উৎপাদন করবে। ফলে প্রায় ৩ হাজার বাংলাদেশি নাগরিকের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান খাইশি গ্রুপের নতুন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, মাত্র ১৪ মাসের মধ্যেই বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করার পর বিনিয়োগ সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বেপজা, বিশেষ করে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান আস্থার পরিচায়ক। তিনি খাইশির প্রতি বেপজায় তাদের অবিচল আস্থার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের একজন পথিকৃৎ বিনিয়োগকারী হিসেবে তাদের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে জিয়াও হংজি কিছু কার্যক্রমগত চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, কর্মীদের কাছাকাছি বাসস্থানের অভাবে দূরদূরান্ত থেকে শ্রমিক এনে কাজ করাতে হচ্ছে। যার ফলে সকালে শ্রমিকদের উপস্থিতিতে দেরি হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জের মধ্যেও তিনি বাংলাদেশ ও বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রতি তাদের আস্থার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে খাইশির প্রথম প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছিল ২০২২ সালের নভেম্বরে, যেখানে তাদের বিনিয়োগের প্রস্তাব ছিল ৬০ দশমিক ৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালের জুনে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে এবং বর্তমানে এখানে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ শ্রমিক কাজ করছেন। খাইশির ঢাকা ইপিজেডে এবং বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে দুটি কারখানায় মোট ৬ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বেপজার সদস্য (প্রকৌশল) মো. ইমতিয়াজ হোসেন, সদস্য (অর্থ) আ ন ম ফয়জুল হক, নির্বাহী পরিচালক (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. তানভীর হোসেন, নির্বাহী পরিচালক (এন্টারপ্রাইজ সার্ভিসেস) মো. খুরশিদ আলম এবং নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) এ.এস.এম. আনোয়ার পারভেজসহ খাইশি গার্মেন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। খাইশি গার্মেন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডসহ এ পর্যন্ত মোট ৪৫টি প্রতিষ্ঠান বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করেছে। বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল বেপজার সর্ববৃহৎ উদ্যোগ যা বাংলাদেশের শিল্প প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
চায়না লেসো গ্রুপের ৩ কোটি ২৭ লাখ ৭২ হাজার ডলার বিনিয়োগের কথা জানিয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় ১২ দশমিক ৫ একর জমি আনুষ্ঠানিকভাবে চায়না লেসো গ্রুপকে হস্তান্তর করেছে।
বেজার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল সোমবার এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর বেজা ও চায়না লেসো গ্রুপের মধ্যে জমি ইজারা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৩২ দশমিক ৭৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা স্থাপন করবে। এখানে পিভিসি পাইপ, পিইএক্স পাইপ, সৌর প্যানেল, স্যানিটারি সামগ্রী, কিচেন উপকরণ, ডোর-উইন্ডো, ওয়াটার পিউরিফায়ার, ওয়াটার-প্রুফিং ম্যাটেরিয়াল, ফায়ার-ফাইটিং সরঞ্জাম, কেব্ল, লাইটিং, পরিবেশ সুরক্ষা সামগ্রী, নির্মাণসামগ্রী উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে।
চায়না লেসো গ্রুপ বিশ্বব্যাপী এ খাতে পরিচিত একটি প্রতিষ্ঠান। ২০২৪ সালে প্রতিষ্ঠানটির আয় ছিল প্রায় ৯৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ২০ হাজার কর্মী রয়েছেন। ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে চায়না লেসো গ্রুপের উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন উভয় পক্ষকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এই জমি হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে বেজা একটি বিনিয়োগবান্ধব ও কার্যকর উদ্ভাবনমুখী শিল্প পরিবেশ তৈরিতে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। তিনি আশা প্রকাশ করেন চায়না লেসো গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে আরও কিছু প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে শুরু করবে।
চায়না লেসো গ্রুপের প্রতিনিধি বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে তারা শুধু আর্থিক মুনাফার দিকে নয়, বরং পরিবেশবান্ধব পণ্য, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং সংশ্লিষ্ট সরবরাহ শৃঙ্খলা প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে বিশেষ গুরুত্ব দেবে।
বেজা ও চায়না লেসো গ্রুপের প্রত্যাশাÑএই বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের গুরুত্ব ও সম্ভাবনাকে আরও বৃদ্ধি করবে। বর্তমানে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় ১৫টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান উৎপাদন কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কারখানা নির্মাণাধীন রয়েছে।