প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে হামলা, সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনার পর জারি করা কারফিউ ১৪ ঘণ্টার জন্য শিথিল করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। কারফিউ শিথিল হলেও শহরটিতে জনমনে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে। জরুরি প্রয়োজনেও ঘর থেকে বের হচ্ছেন না অনেকে। শহরের বেশির ভাগ দোকান বন্ধ রয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোতায়েন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গতকাল সকাল ১০টার দিকে শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায় কিছু যানবাহন দাঁড়িয়ে আছে। তবে যাত্রী তেমন নেই। কিছু মানুষ এদিক-ওদিক যাচ্ছেন। লঞ্চঘাট এলাকায় দু-একটি দোকান ছাড়া বাকি দোকানগুলো বন্ধ দেখা গেছে।
শহরের চৌরঙ্গী, বটতলা, কালীবাড়ি, বিসিকসহ দানাপাড়া এলাকায়ও একই চিত্র দেখা গেছে। জরুরি প্রয়োজনে কিছু মানুষ আর কিছু দিনমজুর ঘর থেকে বের হয়েছেন। এর মধ্যে দিনমজুরের সংখ্যাই বেশি।
জেলা শহরের লঞ্চঘাট এলাকার যুবক লিমন বলেন, জরুরি কাজে শহরে এসেছিলাম। তবে কাজ হবে কি না জানি না। বেশির ভাগ ােকানপাট বন্ধ। এখনও চারদিকে আতঙ্ক। কখন জানি গ্রেপ্তার হই, এই ভয়ে আছি! বিভিন্ন এলাকায় রাতে অভিযান পরিচালনা করায় সাধারণ মানুষ অনেকেই ঘরবাড়ি ছাড়া।
বিসিক এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি সুরুজ বলেন, কারফিউ নেই জেনে বাজার করতে এসেছি। শহরে লোকজনের আনাগোনা একদমই নেই। বাজার করছি, তবে ভেতরে ভেতরে আতঙ্ক কাজ করছে। ইজিবাইক চালক মাহমুদ মিয়া বলেন, গত তিন দিন ধরেই শহরে গাড়ি চালাচ্ছি। তবে ইনকাম নেই। আজকে কারফিউ নেই, ভাবছিলাম কিছু আয় হবে, তবে সেই পরিমাণ ইনকাম হচ্ছে না। মানুষ ভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
জেলা শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেতৃত্বে থাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ড. রুহুল আমিন সরকার বলেন, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। কারফিউ নেই, সাধারণ মানুষ অনেকে ঘর থেকে বের হচ্ছেন। আমরা অভিযানও পরিচালনা করছি। তবে অভিযানে যেন নিরপরাধ কেউ আটক না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখা হচ্ছে।
এদিকে গোপালগঞ্জে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও সহিংসতায় নিহতের ঘটনা এবং পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলার বিভিন্ন থানায় চারটি মামলা করা হয়েছে। গত দু দিনে গোপালগঞ্জ সদর, কাশিয়ানী ও কোটালীপাড়া থানায় পুলিশ বাদী হয়ে এসব মামলা করে। মামলাগুলোতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নাম উল্লেখ রয়েছে। সর্বশেষ গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাতপাড়ায় গাড়ি ভাঙচুর, আগুন দেয়ার ঘটনা এবং রাস্তায় গাছ ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গোপালগঞ্জ সদর থানায় নতুন করে একটি মামলা হয়েছে। শুক্রবার রাতে সদর থানার এসআই শামীম আল মামুন বাদী হয়ে মামলাটি (মামলা নম্বর ১৬) করেন। এতে ৫৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৩৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় এ পর্যন্ত ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে জেলার চারটি মামলায় মোট ৩৫৮ জনের নাম উল্লেখসহ ৩ হাজার ৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। ১৬ থেকে ১৯ জুলাই দুপুর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোট ৩০৬ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। সদর থানার ওসি মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

Discussion about this post